কার্ল মার্কসের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নিরিখে তাঁর ইতিহাস দর্শন আলোচনা করো।
কার্ল মার্কসের ইতিহাস দর্শন ।
ভূমিকা :
অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লবের (Industrial Revolution) সূচনা হয়। যন্ত্রভিত্তিক উৎপাদনের ওপর ভর করে এই বিপ্লব প্রথমে ইংল্যান্ডে শিল্পের জোয়ার আনে এবং পরবর্তীকালে পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপে এর সার্বিক প্রভাব পড়ে। বেলজিয়াম, ফ্রান্স এবং জার্মানি এই শিল্পায়নের দ্বারা লাভবান হয় এই অর্থনৈতিক বিকাশ ও সমৃদ্ধি সমাজের সার্বিক স্তরে প্রবেশ করতে পারেনি। শিল্পপণ্য উৎপাদন এবং তজ্জনিত মুনাফা মুষ্টিমেয় কিছু শিল্পপতি ও ব্যাংক-মালিক আত্মসাৎ করেন এবং পণ্য উৎপাদনেরত শ্রমিকগণ (Workers) তাঁদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হন। এই অর্থনৈতিক ও সামাজিক অসাম্যের ফলে সমাজে দুই ধরনের মানুষের আবির্ভাব ঘটে – শোষক (Exploiter) ও শোষিত (Exploited)। শ্রমিকগণের দুর্দর্শ নিরসন ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কতিপয় চিন্তাশীল ব্যক্তি ঊনবিংশ শতকের গোড়ায় এই বিষয়ে মনোনিবেশ করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সেন্ট সাইমন (St. Simon), চার্লস ফ্যুরিয়ের (Charles Fourier), রবার্ট আওয়েন (Robert Owen ) প্রমুখ।
কার্ল মার্কসের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নিরিখে তাঁর ইতিহাস দর্শন :
সেন্ট সাইমন ,চার্লস ফ্যুরিয়ের, রবার্ট আওয়েন এরা সমাজের শোষিত ও নিপীড়িতদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচির কথা বলেন এবং শ্রমিকদের স্বাবলম্বী করার জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও সমবায় (Cooperative) গঠনের ওপর জোর দেন। কিন্তু তাঁদের এই মহৎ উদ্দেশ্য তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষিতে কার্যকরী করা প্রায় অসম্ভব ছিল। এর কারণ ছিল, মূলত তাঁরা শোষণযন্ত্রের কাঠামো অর্থাৎ বুর্জোয়া রাষ্ট্রের বিলোপসাধনের কথা বলেননি। বরং মানুষের হৃদয়ের পরিবর্তন এবং শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে প্রাধান্য দেন। তাঁদের এই ভাববাদী সমাজতন্ত্রের (Utopian Socialism) প্রতি কার্ল মার্কস তীব্র কটাক্ষ করেন।
আর-একটি ভাবধারা ছিল যাকে নৈরাজ্যবাদী (Anarchist) বলা হয়ে থাকে। এর প্রবক্তা ছিলেন পিয়ের যোসেফ প্রুধোঁ (Pierre Joseph Proudhon), মিখাইল বাকুনিন (Mikchain Bakunin) প্রমুখ। এরা শোষণযন্ত্রের মূলোৎপাটনের জন্য শুধুমাত্র রাষ্ট্রের বিলোপসাধন চাইতেন না, উপরন্ত সমস্ত ধরনের প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসের পক্ষপাতী ছিলেন। ব্যক্তিগত সম্পর্ককে চৌর্যবৃত্তির সমতুল্য মনে করা হত। এই প্রসঙ্গে প্রধোর বিখ্যাত পুস্তিকা হল ‘Property is ‘Theft’। রোমান্টিক বুর্জোয়া বিরোধী ভাবাদর্শের সঙ্গে এই মতাদর্শের কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
এই ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের (Scientific Socialism ) প্রবক্তা কার্ল মার্কসের আবির্ভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
কার্ল মার্কস (Karl Marx, CE 1818-883 CE) 5 মে রাইন অঞ্চলের ক্লিয়ার (Trier) প্রদেশে এক আইনজীবি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মার্কস পরিবার ছিল ইহুদি সম্প্রদায়ের। নেপোলিয়নের পরাজয়ের পর 1816-তে রাইন অঞ্চল প্রাশিয়ার হস্তগত হয়। এমতাবস্থায় কার্ল মার্কসের পিতা হেনরিখ মার্কস জীবন ও জীবিকার তাড়নায় ইহুদি ধর্ম পরিত্যাগ করে প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং আইন ব্যাবসার অনুমতি লাভ করেন।
মার্কস পরিবার ছিল ফরাসি কৃষ্টি ও সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত এবং ফরাসি বিপ্লবের মতাদর্শে অনুপ্রাণিত। যুবক কার্লের ওপর এই ঐতিহ্যের প্রভাব পড়ে এবং তিনি আজীবন মানবজাতির মুক্তির উদ্দেশ্যে কাজ করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। কার্ল মার্কস তাঁর ছাত্রাবস্থার অধিকাংশ সময় দর্শন ও ইতিহাস চর্চায় মগ্ন থাকতেন। এছাড়া তিনি শিল্প, নন্দনতত্ত্ব, সংগীত, সাহিত্য ইত্যাদিরও চর্চা করতেন। তিনি ইংরেজি ও ইতালীয় ভাষা রপ্ত করেন।
মার্কসের দৃষ্টিভঙ্গি এমন সময় পরিণত রূপ লাভ করে যখন শিল্প বিপ্লবজনিত কল কারখানাগুলি গড়ে ওঠে এবং ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি কাঁচামাল ও বিশ্ব বাজার দখলের উদ্দেশ্যে পৃথিবীব্যাপী উপনিবেশ তৈরি করে। একই সঙ্গে শিল্পোন্নত দেশগুলির অভ্যন্তরে শ্রেণি সংগ্রাম (Class struggle) তীব্র আকার ধারণ করে এবং CE 1830 এবং CE 1840-এর বিপ্লবে পুঞ্জীভূত জনরোষের প্রতিফলন ঘটে।
এই সময় মার্কস দার্শনিক হেগেলের দ্বান্দ্বিক পদ্ধতির দ্বারা প্রভাবিত হন। কিন্তু তিনি হেগেলের ভাববাদী জগত থেকে বেরিয়ে আসেন এবং ইতিহাসের বস্তুনিষ্ঠ ও বাস্তবধর্মী ব্যাখ্যা করেন। ইতিহাসের এই বস্তুমূলক ব্যাখ্যা (Materialist Interpretation of History) মূলত মার্কসের অবদান। বিজ্ঞানের তথ্য এবং সেই সঙ্গে প্রকৃতিবিজ্ঞানের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে মার্কস হেগেলীয় দ্বন্দ্ববাদের পুনর্বিচারে প্রবৃত্ত হন; এক অখণ্ড, সামগ্রিক বৈজ্ঞানিক বিশ্ববীক্ষায় বস্তুবাদ ও দ্বন্দ্ববাদের সাযুজ্যসাধন শুরু করেন।
1840-এর দশকে মার্কস প্রাশিয়া ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং স্থায়ীভাবে ইংল্যান্ডে বসবাস করতে শুরু করেন। ইতিমধ্যে ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের (Friedrich Engels) সঙ্গে তাঁর সখ্য তৈরি হয় এবং দুজন একে অপরের অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু হয়ে ওঠেন। এঙ্গেলস মার্কসের মতই তৎকালীন আর্থসামাজিক ব্যবস্থার কড়া সমালোচক ছিলেন এবং ধনী পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও আজীবন কৃচ্ছসাধন করে গেছেন ও মার্কস তথা তাঁর পরিবারের ব্যয়ভার বহন করেছেন। মার্কস যাতে নির্বিঘ্নে জ্ঞানচর্চা করতে পারেন তার জন্য যাবতীয় অর্থের যোগান দিয়েছেন।
মার্কস ও এঙ্গেলস যৌথভাবে ‘দ্য হোলি ফ্যামিলি’ (The Holy Family, CE 1845 ) এবং ‘দ্য জার্মান ইডিওলোজি’ (The German Ideology. CE 1846) রচনা করেন। 1848 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ‘দ্য কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ (The Communist Manifesto ) অর্থাৎ কমিউনিস্ট পার্টির ইস্তাহার। এই পুস্তিকাটি বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের পাথেয় হয়ে ওঠে। এর মূল মন্ত্র ছিল “দুনিয়ার মজদুর এক হও।” (Workers of the world unitel)
মার্কসের ইতিহাস বীক্ষণের মূল বক্তব্য ছিল শ্রেণি সংগ্রামের (Class struggle) মধ্য নিয়ে মানব জাতির প্রগতির আখ্যান এবং তার তাৎপর্য। তাঁর নিজের ভাষায় “The History of all hitherto existing societies has been the history of class struggle” মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা তার চেতনা (Consciousness)-কে নির্ধারণ করে এবং বাস্তব পরিস্থিতির দ্বারা সে সঞ্চালিত হয়, অন্যথা নয়। এছাড়া তাঁর মতানুসারে “দার্শনিকরা শুধু ভিন্ন ভিন্ন রূপে জগতের ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কিন্তু ব্যাপারটা হল এই যে তাকে পরিবর্তন করতে হবে।” একোলস নিরলসভাবে মার্কসের দৃষ্টিভঙ্গির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন এবং মার্কসীয় তত্ত্বের বিরোধীদের সমুচিত জবাব দেন। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ তাঁর রচনা এ্যান্টি ড্যুরিং (Anti Duhring)।
পুঁজির উৎস, মুনাফার উৎপত্তি, শ্রমের উদ্বৃত্ত মূল্য ইত্যাদির অন্বেষণে মার্কস দীর্ঘ গবেষণা আরম্ভ করেন এবং 1867 খ্রিস্টাব্দে তাঁর বহু খণ্ড বিশিষ্ট পুঁজি-র (Das Kapital, Vo. I) প্রথম খণ্ডটি প্রকাশিত হয়। এটি ছিল মার্কসের যুগান্তকারী প্রয়াস এবং বুর্জোয়া শ্রেণি ও তাদের তাবেদার অর্থনীতিবিদগণের চক্ষুশূল। অবিশ্রান্ত বীক্ষাচর্চা, অনিয়মিত আহারনিদ্রা, অনিশ্চিত অর্থনৈতিক অবস্থার ঝড়ঝাপটা সামলে অবশেষে 1883 তে কার্ল মার্কস পরলোকগমন করেন। মার্কস প্রণীত শ্রেণিসংগ্রামের তত্ত্বকে হাতিয়ার করে বিংশ শতকের প্রথমার্ধে রুশ দেশে লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক বিপ্লব সাধিত হয় এবং মানবজাতির এক ষষ্ঠাংশ (%) নিয়ে প্রথম সাম্যবাদী রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন আত্মপ্রকাশ করে। এইভাবে রাজনৈতিক পটভূমিতে মার্কসীয় তত্ত্ব এবং প্রয়োগের (Theory and Practice) বাস্তবিক সমন্বয়সাধন ঘটে।
বিশ্বে সোভিয়েত ইউনিয়নের আবির্ভাব বুর্জোয়া রাষ্ট্রগুলির আর্থসামাজিক ও ঐতিহাসিক মতাদর্শকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে এবং একটি বিকল্প ভাষ্যের (Alternative Narrative) সুযোগ করে দেয়। সোভিয়েত দেশ জার (Czar) আমলের অসামঞ্জস্যপূর্ণ চুক্তি (Unequal Treaties) সমূহকে বাতিল করে এবং সব রাষ্ট্রের সমঅধিকারকে মান্যতা দেয়। চিন, তুরস্ক, মিশর প্রভৃতি রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সে দৌত্য (Embassy) বিনিময় করে এবং উপনিবেশবাদকে ধিক্কার জানায়। দেশের অভ্যন্তরে প্রত্যেক নাগরিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, নিঃশুল্ক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুবন্দোবস্ত, যোগাযোগ মাধ্যমের উন্নতি এবং সারা দেশে বৈদ্যুতিকরণ ইত্যাদি গঠনমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে বিশ্বের নজর কাড়ে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের এই সাধু উদ্যোগকে পশ্চিম ইউরোপের বিদগ্ধ সমাজ স্বাগত জানায়। অনুরূপভাবে ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে সোভিয়েত পরীক্ষানিরীক্ষা (Soviet Experiments) উরু দেশগুলির পণ্ডিত সমাজের কাছে পাথেয় হয়ে ওঠে। সমাজবিবর্তনের ইতিহাস, বিভিন্ন শ্রেণির ভূমিকা আর্থ সামাজিক প্রেক্ষিত, যুগ সন্ধিক্ষণ (transition) ইত্যাদির মাধ্যমে আনাধ্যেণের নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি প্রভৃতি দেশের ঐতিহাসিক ও সমাজবিজ্ঞানীকুল এই ক্ষেত্রে প্রভূত পরিমাণে যোগদান করেন।
ইংল্যান্ডে এ এল মর্টন (A L Morton), এইচ এম ব্রেলসফোর্ড (H M Brailsford), হ্যামন্ড দম্পতি (The Hammonds, J L & B), ওয়েব দম্পতি ( The Webbs, Sydney & Beatrice, RH Tawney) ক্রিস্টোফার ছিল (Christopher Hill), মরিস ডৰ (Mourice Dobb), এরিক হবসব্যম (Eric Hobsbawm), ই পি টমসন (E P Thompson) মার্কসীয় আঙ্গিকে ইতিহাস রচনা করেন। ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধ, র্যাডিকাল গোষ্ঠীর উত্থান, সেনাবাহিনীর ভূমিকা, জেন্ট্রি (Gentry) শ্রেণির ভূমিকা, গৌরবময় বিপ্লব, শিল্পবিপ্লব ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেন।
ফ্রান্সে সাম্যবাদী/সমাজতান্ত্রিক আঙ্গিকে ফরাসি বিপ্লবের কারণ, জ্যাকোবিন রাজনীতি, সন্ত্রাসের রাজত্ব, নেপোলিয়নের উত্থান ও সাম্রাজ্য বিস্তার, প্যারি কমিউন প্রভৃতি বিষয়ে ইতিহাস রচিত হয়। ফরাসি ঐতিহাসিকদের মধ্যে স্বনামধন্য ছিলেন জর্জ লেভের (George Lefebvre), অ্যালবার্ট গোবুল (Albert Soboul), জর্জ বু ে(George Rude), ফ্রাঁসোয়া ফ্যুরে (Francois Furet) প্রমুখ। পরবর্তীকালে ফ্যুরে অবশ্য সংশোধনবাদী ঐতিহাসিক-এ (Revisionist Historian ) পরিণত হন। ফরাসি ঐতিহাসিকগণের মধ্যে অনেকে রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন এবং ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন।
জার্মানিতে মার্কস ও এঙ্গেলসের পরবর্তী পর্যায়ে ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে একটি শূন্যতা দেখা দেয়। সমাজতান্ত্রিক সোশ্যাল ডেমোক্রাট এবং কমিউনিস্টদের মধ্যে মতাদর্শগত বিভাজনের দরুন ইতিহাসচর্চা ব্যাহত হয়। প্রাক্তন সমাজতন্ত্রী এডুয়ার্ড বার্নস্টাইন (Eduard Bernstein) মার্কসীয় শ্রেণিসংগ্রামের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন এবং অন্যান্য সমাজতন্ত্রীদের “কমিউনিজমের খাঁচা” থেকে মুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। কমিউনিস্ট লেখক ও তাত্ত্বিকগণ ক্রমাগত দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলির হাতে লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত হন।
বিখ্যাত নারীবাদী এবং মার্কসীয় দর্শনের ব্যাখ্যাকার রোজা লুক্সেমবার্গ (Rosa Luxemburg ) ও তাঁর সহযোগী কার্ল লিনেকঠ (Karl Liebnecht) প্রকাশ্য দিবালোকে আততায়ীদের হাতে নিহত হন। দক্ষিণপন্থী সংগঠন এর হার্ডট ব্রিগেড (Erberdt Brigade) এই কৃতিত্ব দাবি করে। নাৎসি (Nazi) জমানায় বিজ্ঞানভিত্তিক ইতিহাসচর্চার প্রভূত ক্ষতি হয়। বহু গুণীজন দেশান্তরি হন। এদের মধ্যের ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল (Frankfurt)-এর থিওডোর আডোরনো (Theodore Adorno) এবং তাঁর সহযোগীরা ছিলেন।
- মূল্যায়ন :
- পরিশেষে বলা যেতে পারে যে মার্কসীয় দর্শনের কল্যাণে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে এক বিপ্লব সাধিত হয়। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র উদ্ভাবনের পাশাপাশি বিজ্ঞানভিত্তিক ইতিহাস লিখনের প্রেক্ষিত প্রস্তুত হয়। বিবিধ রচনার মধ্য দিয়ে মার্কস ইতিহাসকে একটি বিজ্ঞান রূপে প্রতিষ্ঠিত করেন। এর ফলে সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং কলা ও কৃষ্টি সম্বন্ধে বহুমাত্রিক ব্যাখ্যা দিতে সুবিধা হয়। মার্কসীয় দর্শনের বৈজ্ঞানিক আঙ্গিক “অন্য ইতিহাস” রচনার ক্ষেত্রে প্রভূত সহায়ক হয়।