StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

গুপ্ত শাসন ব্যবস্থার প্রকৃতি কী ছিল ?

 

গুপ্ত শাসন ব্যবস্থার প্রকৃতি আলোচনা করো । গুপ্ত শাসন ব্যবস্থার প্রকৃতি কী ছিল ? । গুপ্ত শাসন ব্যবস্থার চরিত্র।





ভূমিকা :

গুপ্ত শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি কী ছিল? এটা কি মৌর্য শাসনব্যবস্থার ন্যায় অতি কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা ছিল, না বিকেন্দ্রীকরণের প্রবণতা এর মধ্যে নিহিত ছিল? বলাবাহুল্য, এই প্রশ্নের সদুত্তর খুঁজতে গিয়ে মাঝে মাঝেই মৌর্য শাসনব্যবস্থার সঙ্গে গুপ্ত শাসনব্যবস্থার তুলনামূলক দিকও এসে যাবে।

গুপ্ত শাসন ব্যবস্থার প্রকৃতি :

শাসনব্যবস্থার শীর্ষে গুপ্ত শাসকেরা অধিষ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু মৌর্য শাসনব্যবস্থায় রাজার ক্ষমতার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে যে মৌর্য শাসকের তুলনায় গুপ্ত শাসকের ক্ষমতা ছিল অনেক সীমিত। কেন্দ্রীয় স্তরে মৌর্য শাসক কার্যক্ষেত্রে যেমন সমস্ত ক্ষমতা ভোগ করতেন, গুপ্ত শাসকেরা কিন্তু সেই ধরনের ক্ষমতা ভোগ করতে পারতেন না। যদিও এযুগের শাসকেরা বহু উচ্চ অভিধা গ্রহণ করতেন, তথাপি কার্যক্ষেত্রে তাঁদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ছিল। প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে, পূর্বে উল্লেখিত বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মচারী যেমন—
কুমারামাত্য ও আয়ুক্তকদের কাজের ব্যাপারে তাঁরা বেশি হস্তক্ষেপ করতেন না। বরং বলা যায় এই সমস্ত কর্মচারীদের সঙ্গে রাজা তথা কেন্দ্রীয় প্রশাসনের যোগসূত্র ছিল বেশ নিবিড়। মৌর্যযুগে যেমন রাজার প্রচারিত অনুশাসনগুলিই ছিল আইন, গুপ্ত যুগে তা ছিল না। এযুগে স্মৃতি বা ধর্মশাস্ত্রগুলিতে নির্দেশিত বিধি-বিধান অনুযায়ী রাজাকে চলতে হত। মৌর্যযুগের ন্যায় গুপ্তচর ব্যবস্থার প্রচলন এযুগে ছিল না। এই সমস্ত বিষয়গুলি থেকে একটা ধারণা প্রতীয়মান হয়ে ওঠে যে মৌর্যযুগের ন্যায় গুপ্ত যুগের শাসকদের স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার অবকাশ ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা হল, গুপ্তযুগের স্মৃতিশাস্ত্রগুলিতে রাজার স্বৈরাচারিতার বিরুদ্ধে জনসাধারণের বিদ্রোহ করার অধিকারকে ন্যায়সঙ্গত বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।
গুপ্ত শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রীয় স্তরের বিভিন্ন দিকগুলি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে এ-যুগের শাসকদের গৃহীত উচ্চ অভিধাগুলি যদিও ইঙ্গিত দেয় যে শাসকেরা স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন, তথাপি স্মৃতিশাস্ত্রগুলির বিধি বিধান তাঁদের ঐ আকাঙ্ক্ষায় অন্তরায় সৃষ্টি করেছিল।
গুপ্তযুগের প্রাদেশিক স্তরের শাসনব্যবস্থার পর্যালোচনা করলে এর প্রকৃতি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। বস্তুত প্রাদেশিক শাসনের ক্ষেত্রে গুপ্তরা অনেকটা উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছিলেন। প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার বিভিন্ন স্তর, এমনকি তৃণমূল পর্যায় অর্থাৎ গ্রামের শাসনের ওপরেও গুপ্ত শাসকদের প্রত্যক্ষ কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আলোচনা প্রসঙ্গে দেখা গেছে যে বিষয় শাসনের সঙ্গে যুক্ত কিছু কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে গুপ্ত শাসকরা হস্তক্ষেপ করতেন না।
প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের দ্বারাই সাধারণভাবে ঐ বিষয়গুলির সমাধা হত। পূর্বে উত্তরবঙ্গে প্রাপ্ত বিভিন্ন শিলালেখগুলির আলোকে দেখা গেছে যে বিষয় বা জেলার অধিপতি মনোনীত হতেন প্রাদেশিক শাসক কর্তৃক। প্রাদেশিক শাসক নিযুক্ত হবার পরিপ্রেক্ষিতে জেলাধিপতি স্বাভাবিকভাবেই ঐ শাসকের প্রতি অনুগত থাকতেন। সম্রাটের প্রতি তাঁর আনুগত্য বিশেষ ছিল না। এছাড়া, গ্রাম শাসনের ক্ষেত্রেও পঞ্চায়েত (পঞ্চমণ্ডলয়া) বা ঐ জাতীয় প্রতিষ্ঠান তথা গ্রাম শাসনের সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হত ৷ এক্ষেত্রেও কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ তেমন ছিল না। এসব কিছুর ফলে গুপ্তযুগে প্রাদেশিক শাসন, বিশেষ করে জেলা বা গ্রাম শাসনের ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টি প্রতিভাত হয়ে উঠেছিল। আলোচনা প্রসঙ্গে অবশ্য দেখা গেছে যে, শাসনক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণের এই ধারা সাম্রাজ্যের সর্বত্র একই ভাবে বজায় থাকেনি।
এইভাবে গুপ্তযুগে প্রাদেশিক শাসনের কয়েকটি পর্যায়ে স্বাধীনভাবে শাসন পরিচালনার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। বস্তুতপক্ষে গুপ্ত শাসকেরা জেলা, গ্রাম ও নগর শাসনের ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থার প্রয়োগ ঘটিয়ে পূর্বতন ব্যবস্থার পরিবর্তে এক নতুন ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটিয়েছিলেন। এতদ্‌সত্ত্বেও শাসনব্যবস্থার খুঁটিনাটি দিকের প্রতি লক্ষ রেখে একে সুষ্ঠু রূপ দেবার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এর সূত্র ধরে সাম্রাজ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হয়। এইভাবে গুপ্ত শাসকেরা শাসনব্যবস্থায় কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ নীতির মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে একে সুদৃঢ় করে তুলেছিলেন।
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *