StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

নিম্ন পুরাপ্রস্তর যুগের উপর সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো

 

নিম্ন পুরাপ্রস্তর যুগের উপর সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো। নিম্ন পুরাপ্রস্তর যুগ ।

ভূমিকা :

হাতিয়ার বা প্রস্তরায়ুধ তথা টেকনোলজিক্যাল বা প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তরযুগকে পুরাপ্রস্তর, মধ্যপ্রস্তর এবং নব্যপ্রস্তর— এই তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়ে থাকে। পুরাপ্রস্তর যুগকে সাধারণত মানুষের খাদ্য সংগ্রহের পর্যায় হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। উল্লেখ্য, মানবসংস্কৃতির সর্বপ্রাচীন নিদর্শন মেলে এই পুরাপ্রস্তর পর্বে। পুরাপ্রস্তর যুগ আবার ক্রমপর্যায় অনুযায়ী নিম্ন, মধ্য এবং উচ্চ পুরাপ্রস্তর—এই তিনটি পর্বে বিভক্ত।

নিম্ন পুরাপ্রস্তর যুগ : 

নিম্ন পুরাপ্রস্তর বলতে বোঝায় সেই উপপর্বকে, যে পর্বে পুরাপ্রস্তর যুগের মানুষের ব্যবহৃত সামগ্রী অর্থাৎ সবচেয়ে প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া গেছে। উচ্চ পুরাপ্রস্তর পর্ব বলতে ঐ যুগের শেষ পর্বকে অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে কম প্রাচীন এবং মধ্যপুরাপ্রস্তর পর্ব বলতে এই দুই উপপর্বের মধ্যবর্তী সময়কালকে বোঝায়। আসলে পুরাপ্রস্তর যুগের সময়কাল এত বিশাল যে একে ঐ ধরনের তিনটি পর্বে বিভাজন করে নেওয়া হয়েছে। এতদ্‌সত্ত্বেও এখানে আলোচ্য যুগের সংস্কৃতিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ না করে বোঝার সুবিধার্থে পুরাপ্রস্তর যুগের সংস্কৃতি হিসাবেই আলোচনা করা হল।
পুরাপ্রস্তর যুগ তথা ঐ যুগের সংস্কৃতি সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারণা লাভ করতে হলে এই যুগের সময়কাল, ভৌগোলিক বিস্তৃতি, সমকালীন প্রাকৃতিক পরিবেশ, ব্যবহৃত বিভিন্ন আয়ুধ তথা সামগ্রীর বিবরণ এবং সর্বোপরি সাংস্কৃতিক ধারা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত হলেও পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা প্রয়োজন।
পুরাপ্রস্তর যুগের কাল নির্ণয়ের বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে কঠিন বলে মনে হলেও পুরাতাত্ত্বিক ও বৈজ্ঞানিকদের নিরলস প্রচেষ্টায় তা এখন অনেকটাই আয়ত্তের মধ্যে এসেছে।° এই যুগের সবচেয়ে প্রাচীনতম কাল অর্থাৎ নিম্ন পুরাপ্রস্তর পর্বের নির্দিষ্ট তারিখ এখনও কিছুটা অনিশ্চিত। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই পর্বের নির্ণীত তারিখের মধ্যেও বিভিন্নতা আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় গুজরাটে জুনাগড় ও উমরেথি থেকে পাওয়া তারিখ যথাক্রমে ১,৯০,০০০ বছর এবং ৬৯,০০০ বছর আগেকার। মহারাষ্ট্রের গোদাবরী উপত্যকায় নেভাসা প্রশ্নক্ষেত্রের যে তারিখ পাওয়া গেছে তা আনুমানিক ৪,০০,০০০ বছরের প্রাচীন। নিম্নপুরাপ্রস্তর যুগের একেবারে শেষ পর্যায়ের পরিচয় পাওয়া যায় মধ্যপ্রদেশের পূর্বাংশে শোন উপত্যকায়, যার আনুমানিক তারিখ ১,০৩,৮০০ বছর। পুরাপ্রস্তর যুগের একেবারে প্রারম্ভিক পর্বের এই তারিখগুলি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন হলেও প্রাচীনত্বের দিক থেকে এগুলি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
পুরাপ্রস্তর যুগের সূত্রপাত তথা নিম্ন পুরাপ্রস্তর যুগের সূচনার অনেকটা নিশ্চিত তারিখের সন্ধান মেলে সাম্প্রতিককালে আবিষ্কৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে। উল্লেখ্য, ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক বিভাগ মধ্যপ্রদেশের হোসংগাবাদ শহরের চল্লিশ কিমি উত্তর-পূর্বে নর্মদা নদীর উত্তর তীরে হাথনোরা গ্রামের সংলগ্ন এলাকায় একটি নারীর মাথার খুলির ডান দিকের সম্পূর্ণ অংশ আবিষ্কার করে। এখনও পর্যন্ত ভারতে মানব নিদর্শনের প্রাচীনতম সাক্ষ্য এটি। এখানে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় হবে যে মাটির যে স্তর থেকে ঐ নিদর্শনটি পাওয়া গেছে নর্মদাতটের সেই স্তর থেকেই পুরাপ্রস্তর যুগের মানুষের তৈরি কিন্তু আয়ুধ আবিষ্কৃত হয়েছে, যা ‘মাইস্টোসিন’ যুগ-এর শেষ পর্যায়ের বলে মনে করা হয়।
১৯৮০-র দশকেই ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে এমন কিছু প্রস্তরায়ুধ নিদর্শন পাওয়া গেছে, যেগুলির তারিখ প্লাইস্টোসিন যুগ অর্থাৎ ২০ লক্ষ বছর আগে। প্রসঙ্গত বলা যায় ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক বিভাগ হিমাচল প্রদেশের সিরমুর জেলার নাহান শহর সংলগ্ন এলাকায় মারকনডা নদী উপত্যকায় বেশ কিছু প্রস্তর নির্মিত আয়ুধ খুঁজে পান। এগুলির তারিখ প্লাইস্টোসিন যুগের গোড়ার দিকে। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে ঐ একই সময়কালের কিছু আয়ুধ আবিষ্কৃত হয় সিন্ধুনদ উপত্যকায় লাভার্থে। সুতরাং ভারতবর্ষে পুরাপ্রস্তর তথা নিম্ন পুরাপ্রস্তর যুগের সূত্রপাত ২ মিলিয়ন বা ২০ লক্ষ বছরের কাছাকাছি সময়ের বলেই মনে হয়।
মধ্যপুরাপ্রস্তর যুগের তারিখ নিরূপণে রেডিও কার্বন পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে। ঐ পদ্ধতিতে মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রত্নক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত সামগ্রীর তারিখগুলি ৪০,০০০ থেকে ১০,০০০ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অবশ্য অন্যান্য পদ্ধতিতে এগুলির তারিখ ১,০০,০০০ থেকে ২৬,০০০ বছরের মধ্যে নির্ণীত হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী ও মান্দাসোর অঞ্চল থেকে উচ্চপুরাপ্রস্তর পর্বের তারিখ স্থির হয়েছে মোটামুটিভাবে ৩১,০০০ বছর। অবশ্য ২০,০০০ বছরের নীচেও কিছু তারিখ পাওয়া গেছে।
নিম্ন, মধ্য, উচ্চ — পুরাপ্রস্তর যুগের এই তিনটি পর্বের সামগ্রিক প্রত্নকেন্দ্রগুলির উল্লেখ ও প্রাসঙ্গিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতেই এই যুগের ভৌগোলিক বিস্তৃতি বোঝা সম্ভব হবে। এই প্রসঙ্গে প্রথমেই পশ্চিম পাঞ্জাবের (বর্তমান পাকিস্তানের অন্তর্গত) পটওয়ার অধিত্যকায়” সোয়ান নদীর উপত্যকায় গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সাক্ষ্য আবিষ্কারের কথা বলা বাঞ্ছনীয় হবে। এখানে নিম্নপুরাপ্রস্তর যুগের প্রচুর নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। এছাড়াও সিন্ধুপ্রদেশের মাইলস্টোন ১০১ ও সুকুর রোহি অঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে পেশোয়ারের উত্তর-পূর্বে সাংঘাও নামে একটি গুহায় খননকার্যের ফলে মধ্য ও উচ্চপুরাপ্রস্তর যুগের কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে।
লাডাখ অঞ্চল এবং পূর্ব পাঞ্জাবে ও হিমাচল প্রদেশের পার্বত্য নদী উপত্যকাতেও পুরাপ্রস্তর যুগের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর কাছে মির্জাপুর জেলার পাহাড়ী অংশে, চুনার-এর কাছে শোনভদ্র অঞ্চলে, এলাহাবাদের নিকটস্থ বেলান নদী উপত্যকায় আলোচ্য যুগের বহু নিদর্শনের সন্ধান মিলেছে। প্রসঙ্গত স্মরণীয় যে, এগুলি সবই অবস্থিত ‘অন্তরীপ’ ভাগে রাজস্থানে আরাবল্লী পর্বতের পূর্ব ও পশ্চিমাংশে, যেমন— গান্ধীরি নদী উপত্যকায়, যোধপুরের কাছে লুনা নদীর অববাহিকায় এবং বালিয়াড়ি, মরু, জয়াল ও দিদওয়ানা অঞ্চলে পুরাপ্রস্তর যুগের বহু মূল্যবান নিদর্শন পাওয়া গেছে। নর্মদা ও শোন মধ্যপ্রদেশের এই দুই উপত্যকা অঞ্চলে প্রধানত এই যুগের সাক্ষ্য বিদ্যমান। গুজরাটের সবরমতী, কচ্ছ ও কাথিয়াবাড় এবং সৌরাষ্ট্র অন্তরীপে পুরাপ্রস্তর পর্বের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *