StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

মহাবিদ্রোহে ইংরেজ ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করো

  • মহাবিদ্রোহে ইংরেজ ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করো

  • ভূমিকা :

  • ঔপনিবেশিক ভূমি রাজস্ব সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা, অত্যধিক ও অবৈধ কর সংগ্রহের প্রবণতা, স্বত্ববিলোপ আইনানুসারে (Doctrine of Lapse) রাজা ও জমিদার গোষ্ঠীর ক্ষমতার হ্রাস এবং সর্বোপরি ইংরেজি শিক্ষার প্রসার, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব ও খ্রিস্টান পাদরিগণের কার্যকলাপ ভারতীয়দের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করে। অবশেষে সেনাবাহিনীতে কার্তুজে গোরু এবং শূকরের চর্বি ব্যবহারকে কেন্দ্র করে এক বিস্ফোরক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই বিস্ফোরণ সিপাহি বিদ্রোহের আকার ধারণ করে এবং সমগ্র উত্তর ও মধ্যভারতের অধিকাংশ অঞ্চল গ্রাস করে। বিদ্রোহী সৈন্যরা দিল্লি অভিমুখে যাত্রা করে এবং মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর (Bahadur Shah Zafar )-কে হিন্দুস্থানের বাদশাহ ঘোষণা করে।

  • মহাবিদ্রোহে ইংরেজ ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিভঙ্গি :

  • মহাবিদ্রোহের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিভিন্ন পর্যবেক্ষক, সরকারি আধিকারিক ও ইংরেজ ঐতিহাসিকেরা তাঁদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি বা অভিমত প্রকাশ করেছেন এবং বিদ্রোহের চরিত্র সম্বন্ধে আলোকপাত করেছেন। তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্ন আকারে দেওয়া হল ।

জন উইলিয়াম কে (John William Kaye) তাঁর গ্রন্থ History of the Sepoy war in India (1857-58, 3 Vols.)-তে এই আলোড়নকে সিপাহি বিদ্রোহ (Sepoy Mutiny) বলে অভিহিত করেছেন এবং বিদ্রোহের কারণ হিসেবে “নেটিভ” (Native) ভারতীয়দের ধর্মীয় আবেগ (Religious Sentiments )-কে মূলত দায়ী করেছেন।

জি বি ম্যালেসন (G B Malleson History of the Indian Mutiny, 1880, Vol. 3) অনুরূপ অভিমত পোষণ করেছেন। ইংরেজ ভাষ্যকারদের মধ্যে সর্বপ্রথম চার্লস বল (Charles Ball: History of the Indian Mutiny, London, 1858-59) এই ঘটনাটির তাৎপর্য অনুধাবন করেন এবং মহাবিদ্রোহকে জনজাগরণ ও গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে তুলনা করেন। ইংল্যান্ডের ইহুদি বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী ও সাহিত্যিক বেঞ্জামিন ডিসরেইলি (Benjamin Disraeli) অনুরূপ মতামত দেন।

তরুণ সাংবাদিক, দার্শনিক এবং ঐতিহাসিক বস্তুবাদের প্রবক্তা কার্ল মার্কস (Karl Marx) মহাবিদ্রোহকে ভারতবর্ষের ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থান (General and Spontaneous Uprising) হিসেবে তুলে ধরেছেন। ঐতিহাসিক ইরফান হাবিবের মতে, “Marx saw the rebellion as not a military mutiny, but a national revolt.”

w w Hunter (W W Hunter : The Indian Mussalmans, 1872) এই বিদ্রোহকে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভয়জনিত প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। ভারতীয়দের মধ্যে স্যার সৈয়দ আহমেদ খান (Sir Sayyid Ahmed Khan) এবং বিনায়ক দামোদর সাভারকর (Vinayak Damodar Savarkar) 1857-র মহাবিদ্রোহ নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন।

1858 খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসনের ক্ষমতা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে অপসারিত হয়ে প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশ সরকারের করায়ত্ত হয়। ক্ষমতা হস্তান্তরের (Transfer of Power) ফলে ইংল্যান্ড ও ভারতবর্ষের মধ্যে সম্পর্কের পুনর্নির্ধারণ ঘটে। রানি ভিক্টোরিয়ার সনদ (Queen’s Proclamation) অনুযায়ী সমস্ত ভারতীয়দের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ন্যায্য দাবিগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়, তাদের শিক্ষা ও সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সমস্ত বৃত্তিমূলক পেশায় ভারতীয়দের সমানাধিকার প্রদানের কথা বলা হয়। এ ছাড়া ভারতীয়দের প্রাচীন রীতিনীতিগুলিকে সম্মান প্রদান ও ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লন্ডন থেকে সরাসরি ভারতের শাসনভার পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে একজন ভারত-সচিব (Secretary of State for India) এবং তাঁকে সাহায্যকারী একটি পরিষদ (Council) এর ব্যবস্থা করা হয়। “

  • মূল্যায়ন :

  • 1861 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় পরিষদীয় আইনের (Indian Councils Act, 1861) দ্বারা ভারতবর্ষ শাসন সংক্রান্ত বিষয়ে অবগত হওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু সংখ্যক ভারতীয়দের পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই মনোনীত ভারতীয় সদস্যদের মধ্যে স্যার সৈয়দ আহমেদ খান ছিলেন। তাঁর পুস্তিকা আসবাব-ই-বগাৰত-ই-হিন্দ (Asbab-e-Bagawat-e Hind) 1857 খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহের নেপথ্যে ইংরেজদের দ্বারা ভারতীয় জনমতের প্রতি অবজ্ঞাসূচক মনোভাবকে মূলত দায়ী করে। 1873 খ্রিস্টাব্দে এটির ইংরেজি অনুবাদ সম্পন্ন হয়।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *