StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ইতালীয় নবজাগরণের গতিপ্রকৃতি আলোচনা করো

ইতালীয় নবজাগরণের গতিপ্রকৃতি আলোচনা করো।

ভূমিকা:

চতুর্দশ শতকে ইতালিকে কেন্দ্র করে ইউরোপে যে নবজাগরণের সূত্রপাত হয় তাকে সাধারণত রেনেসাঁস বলা হয়ে থাকে। এটি ইতালীয় ভাষার (Renovatio), রেনাসিত্তা (Renacita) ইত্যাদি শব্দের ফরাসি সংস্করণ। এর ব্যবহার সর্বপ্রথম করেন ঊনবিংশ শতকের প্রখ্যাত ফরাসি ঐতিহাসিক জ্বলে মিশেলে (Jules Michelet)। ইতালির নবজাগরণের প্রাণকেন্দ্র ছিল ফ্লোরেন্স নগরী (Florence) এবং এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বিখ্যাত মেডিচি পরিবার (Medicis)।

ইতালীয় নবজাগরণের গতিপ্রকৃতি 

কবি এবং সাহিত্যিক পেত্রার্ক (Petrarch, CE 1305-1374, ছিলেন রেনেসাঁসের জনক (Father of Renaissance)। গ্রিক ও আরব পণ্ডিতগণ সর্বপ্রথম ধ্রুপদী লাতিন ও গ্রিক সাহিত্য (Latin and Greek Classics) আবিষ্কার ও অনুবাদ করেন। ফ্লোরেন্স নগরীতে প্রাচীন পুথি আবিষ্কারের উন্মাদনা দেখা দেয় এবং বহু সম্ভ্রান্ত নাগরিক এই কার্যে উৎসাহিত ও উদ্যোগী হন। উদাহরণস্বরূপ পোপের ব্যক্তিগত সচিব পোজিও ব্র্যাকিগুলিনি (Poggio Bracciolini), বণিক নিকোলো নিকোলি (Niccolo Niccoli), লরেঞ্জো ভাল্লা (Lorenzo Valla), ফ্লাভিও বিওল্ডো (Flavio Biondo) প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যায়। 

নবজাগরণের আত্মা হল মানবতাবাদী আন্দোলন ( Humanism) যা মানুষের কার্যকলাপকে প্রাধান্য দেয়। এই মতবাদ অনুযায়ী সমস্ত কর্মকাণ্ডের প্রতিভূ মানুষ এবং কর্মের দ্বারা সে তার ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের মধ্যে রয়েছে অপার প্রাণশক্তি (Vita) এবং অফুরন্ত সম্ভাবনা ( Limitless capacity)। নবজাগরণজনিত এই মানবকেন্দ্রিক (Human-centric) ভাবনা পাশ্চাত্য ইতিহাসবীক্ষণের ক্ষেত্রে এক আলোড়ন সৃষ্টি করে। খ্রিস্টীয় ইতিহাস রচনার দৈবকেন্দ্রিক (God-centric) ধারা থেকে ইউরোপ ক্রমশ ধর্ম নিরপেক্ষ ইতিহাস (Secular history) রচনার দিকে অগ্রসর হয় এবং মানুষের মনন নির্মাণের ক্ষেত্রে রোমান ক্যাথলিক গির্জার একচ্ছত্র আধিপত্য শিথিল হয়ে আসে। মানবমন উন্মুক্ত হয় এবং সে নতুন জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত হয়।

পঞ্চদশ এবং ষোড়শ শতকে পশ্চিম ইউরোপের কিছু অংশে জাতি-রাষ্ট্র ( Nation state) গঠনের সূচনা হয় যা পুরাতন সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে অনেকটাই পৃথক। এই রাজনৈতিক ব্যবস্থার সূত্রপাত মূলত ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন এবং জার্মানির কিছু অঞ্চলে ঘটে। এই রাষ্ট্রগুলির কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল, যেমন— শক্তিশালী শাসক, স্থায়ী সৈন্যবাহিনী, বৃহৎ আমলাতন্ত্র এবং কেন্দ্রীয় কোশাগার। বারুদ বিপ্লব (Gun Powder Revolution) এবং কামান ও আগ্নেয়াস্ত্র আবিষ্কার এবং ব্যবহারের দৌলতে এই নব্য শাসকগণ খুব সহজেই গ্রামাঞ্চলের সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে সক্ষম হন।

গ্রামীণ কৃষকশ্রেণি সামন্তপ্রভুদের (Feudal lords) অত্যাচার ও শোষণ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে এই কার্যে নতুন শাসকদের সহায়তা করে। প্রসঙ্গত বলাবাহুল্য যে, জাতি-রাষ্ট্রগুলির সৈন্যবাহিনীতে কৃষকরা সর্বাধিক যোগদান করে। নগরায়ণের ফলে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয় যারা নিজ স্বার্থে রাষ্ট্র নায়কদের উদ্যোগকে সমর্থন করে। আনুমানিক CE 1400 থেকে পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ স্থানে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার অবক্ষয় ও পতন ঘটে। যদিও ফ্রান্সে সামন্ততন্ত্রের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত ছিল এবং ফরাসি বিপ্লবের দ্বারা তার অবলুপ্তি ঘটে।

মূল্যায়ন:

ইতালীয় নবজাগরণের গতিপ্রকৃতি ছিল ব্যাপক।ইউরোপে শক্তিশালী জাতি-রাষ্ট্র গঠন এবং তৎসহ রাষ্ট্রনায়কদের ভূমিকার দ্বারা সর্বাধিক প্রোৎসাহিত হন ইতালীয় মানবতাবাদী ও প্রকৃষ্ট রাজনৈতিক চিন্তাবিদ নিকোলো মেকিয়াভেলি (Niccolo Machiavelli, CE 1469-1527 ) ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *