StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

দক্ষিণ ভারতের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

দক্ষিণ ভারতের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

ভূমিকা :

উত্তর ভারত বা আর্যাবর্তের চিরাচরিত ইতিহাসের থেকে দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস কিছুটা হলেও পৃথক। এর প্রধান কারণ হল, বিন্ধ্য পর্বতমালা বেষ্টিত দক্ষিণ ভারতে আর্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রভাব ছিল নেহাতই নগণ্য। প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা (Natural Barriers) সম্পন্ন এই অঞ্চলটি দ্রাবিড় জাতিভুক্ত মানবগোষ্ঠীর ছিল প্রধান লীলাক্ষেত্র। তাই ভিন্ন আবহাওয়া ও অবয়বের সান্নিধ্যে একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা এবং সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে।

দক্ষিণ ভারতের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

নৃতত্ত্ববিদদের (Anthropologist) মতে দ্রাবিড়রা মূলত সেমিয় (Semitic) গোষ্ঠীর মানুষ ছিলেন এবং তাঁদের সমাজব্যবস্থা ও রীতিনীতি আর্যদের সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল। উদাহরণস্বরূপ আর্যদের সমাজব্যবস্থা ছিল পিতৃতান্ত্রিক এবং দ্রাবিড়দের সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। আর্যদের চতুর্বর্ণ প্রথা সম্ভবত দ্রাবিড় সমাজে অজানা ছিল। বিশেষ দ্রষ্টব্য বিষয় এই যে, শুধুমাত্র দক্ষিণ ভারত নয়, দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর মানুষ একদা গুজরাট, বালুচিস্তান ও আফগানিস্তানেও বসবাস করতেন। এদের অস্তিত্ব উক্ত অঞ্চলে এখনও কিছু কিছু পাওয়া যায়।

কিংবদন্তি অনুযায়ী ঋষি অগস্ত্য তাঁর শিষ্যদের নিয়ে বিন্ধ্য পর্বতমালা অতিক্রম করে সর্বপ্রথম দাক্ষিণাত্যে প্রবেশ করেন এবং সেখানে আর্য সংস্কৃতি প্রচার করেন। অগস্ত্য আর আর্যাবর্তে প্রস্থান করেননি এবং স্থায়ীভাবে দাক্ষিণাত্যেই বসবাস আরম্ভ করেন। তাই হিন্দুসমাজে ‘অগস্ত্য যাত্রা’ একটি প্রবচন রয়ে গেছে।

একদা মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির (Madras Presidency) অন্তর্গত এবং বর্তমানে তামিলনাড়ু ও কেরলের শস্যশ্যামল ও নদীকেন্দ্রিক মৃত্তিকা অঞ্চল হল দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীভূক্ত তামিল জাতির (তামিল ভাষায় Tamizh) মুখ্য লীলাভূমি। এই তামিল জাতির অনবদ্য কীর্তি হল সাম সাহিত্য (Sangam literature) যা অন্তত কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন সাহিত্য বিশেষ । বিভিন্ন শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় সঙ্গম সাহিত্য সমৃদ্ধি লাভ করে। সঙ্গম শব্দটির মূল অর্থ হল সম্ভবত তামিল কবিদের সমাবেশ (Collegium of Tamil Poets ) । মাদুরাই-এর রাজসভায় এই বিশেষ সমাবেশ সংঘটিত হত।

স্ক্যানডিনেভিয় আখ্যানগুলির (Saga) মতো সঙ্গম সাহিত্যে বীরত্বপূর্ণ কাব্যের (Heroic Poetry) প্রাধান্য ছিল। সঙ্গম সাহিত্য থেকে রাষ্ট্র গঠন, সেনাবাহিনী পরিচালনা, কর ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। এ ছাড়া ব্যাবসাবাণিজ্য, বণিক সম্প্রদায়, কারিগর এবং কৃষিজীবী সম্প্রদায়ের উল্লেখ আছে। সঙ্গম সাহিত্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর যেমন— কাঞ্চী, করকাই, মাদুরাই, পুহার ও উরাইডড্ডর প্রাধান্য পেয়েছে। সঙ্গম সাহিত্য ছাড়া তোলকাথিয়াম (Tolkkappiyam) ওরাল (Tirukkural) ছিল অপর দুটি গ্রন্থ। এ ছাড়া দুই প্রধান তামিল মহাকাব্য যথাক্রমে শিলায়াডিকারম (Silappadikaram) ও মনিমেকালাই ( Manimekalai) আনুমানিক ষষ্ঠ খ্রিস্টাব্দে রচিত হয়েছিল।

সপ্তদশ শতকের শেষে ভারতবর্ষে কর্নেলিয়াস জিগেনৰ (Cornelius Ziegenbalg) নামক এক ড্যানিশ খ্রিস্ট ধর্মপ্রচারক আসেন এবং তিনি প্রথম তামিল ভাষার ব্যাকরণ ও চলন্তিকা প্রস্তুত করেন। ভাষাতত্ত্ব ও সাহিত্যের দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে এটি ছিল নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে ভারতবর্ষের বৈচিত্র্যময় সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে সমাদৃত হয়।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, ভারতবর্ষের মানুষ তাঁদের দেশ, দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনীতি ও সমাজ সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন; যদিও তার ব্যাখ্যা ও উপস্থাপনার ক্ষেত্রে কিছু তারতম্য ছিল। গ্রিসের হেরোডোটাস বা থুকিডিডিসের মতো হেলেনীয় (Hellenic) আদর্শে সমৃদ্ধ না হওয়া সত্ত্বেও, তাঁদের সাংস্কৃতিক আত্ম সচেতনতার (Cultural Selfconsciousness) মধ্যে কোনো ছেদ ছিল না।

একাদশ শতকের ইসলামি পণ্ডিত আলবিনী-র বা আলবিরুনি(Al-Biruni) মন্তব্যে এই চিত্র পরিষ্কার – “The Hindus believe that there is no country but theirs, no king like theirs, no science like theirs…।

মূল্যায়ন:

আধুনিককালে ঘোর সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট আর্থার স্মিথ (Vincent Arthur Smith) এই আত্মসচেতনতাকে ভারতবর্ষের মৌলিক একতার (Fundamental unity) ভিত্তি হিসেবে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে ভারতবর্ষ বৈচিত্র্যময় দেশ হলেও তার একটি মৌলিক একতা সর্বদা বিরাজমান— “India is a land of diversity underlying which flows the spirit of unity” a Spirit of Unity কে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে ভারতবর্ষের মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা (Political Consciousness) ও একাত্ববোধের উদয় হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top