প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে হান্টার কমিশনের সুপারিশ গুলি আলোচনা করো।
প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে হান্টার কমিশনের সুপারিশ গুলি হল–
[1] ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন:
প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে হান্টার কমিশন ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের সুপারিশ করে। এর ফলে বহু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের বাসভূমি ভারতে সাম্প্রদায়িকতার দ্বন্দ্ব এড়ানোর পথ সহজ হয়। তবে মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, যেমন—মুসলমান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য পৃথক ‘না স্কুল স্থাপন, মুসলিম বিদ্যালয়গুলির জন্য মুসলিম পরিদর্শক নিয়োগ প্রভৃতি শিক্ষাক্ষেতে সাম্প্রদায়িকতাকে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে। ফলে জাতীয় সংহতির ধারণাটি বুড়া হয়েছে।
[2] মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা:
প্রাথমিক শিক্ষার সুপারিশে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের কথা বলা হয়েছে। এর পুরুত্ব উপলব্ধি করে পরবর্তী পর্যায়ে কার্জনের শিক্ষাসংস্কারের ক্ষেত্রে সার্জেন্ট পরিকল্পনাতে মাতৃভাষাকেই প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সুপারিশ করা হয়েছে। স্বাধীন ভারতে ঐতিহ্যবাহী আধুনিকতাবাদে আঞ্চলিক ভাষা বা মাতৃভাষাকেই শিক্ষাদানের মাধ্যম করা হয়েছে।
[3] ব্যায়াম ও খেলাধুলোর অন্তর্ভুক্তি:
হান্টার কমিশনের রিপোর্টে শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশসাধনের উদ্দেশ্যে পাঠক্রমে ব্যায়াম, ড্রিল ও নানান দেশীয় খেলার অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এর পুরুত্ব উপলব্ধি করে স্যাডলার কমিশন, 1917-তে শারীরশিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং শারীরশিক্ষার জন্য শারীরশিক্ষা অধিকর্তা (Director of Physical education) নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। সার্জেন্ট পরিকল্পনা, 1944-এ শারীরশিক্ষায় প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
[4] নারীশিক্ষার ওপর গুরুত্ব:
নারীদের শিক্ষার আলোকে আলোকিত করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হান্টার কমিশন, 1882-3 যেসকল কর্মসূচি গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে, তাতে ভরা আছে নবজীবনের আশ্বাস। এই ধারা পরবর্তী ধরে বহমান থেকে যায়। বিভিন্ন কমিশন, বিভিন্ন শিক্ষাবিদ নারীচেতনার উন্মেষ ঘটাতে এবং পুরাতন জীর্ণতা কাটাতে মত ও পথ নির্দেশ করেছেন।
[5] পরীক্ষার ফলাফলের ওপর গুরুত্ব:
প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে হান্টার কমিশন অনুদানপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফলকে ভিত্তি হিসেবে গণ্য করার সুপারিশ দিয়েছেন। এটি সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে পরীক্ষাকেন্দ্রিক করে তোলে ফলে শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপের শিকার হয়।