StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ভাবসম্প্রসারণ: চোর দোষী বটে কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শতগুণে দোষী

চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শতগুণে দোষী।

ভাবসম্প্রসারণ: চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শতগুণে দোষী।

সংসারে ধনী নির্ধন যেমন আছে, ভালো মানুষ-মন্দ মানুষ যেমন আছে, তেমনি গৃহস্থ এবং চোরও আছে। চোরকে আমরা অপরাধী হিসেবে গণ্য করি এবং শাস্তি দানেরও ব্যবস্থা করি। চোরের বক্তব্যটা ভেবে দেখি না। চোর কেন চুরি করে ভেবে দেখি না । বেঁচে থাকতে গেলে ক্ষুধায় অন্ন চায়। খাদ্য ছাড়া কোনো প্রাণীই বাঁচে না। অন্যান্য প্রাণী প্রকৃতি থেকে নিজের খাদ্য সংগ্রহ করে; তাদের খাদ্য কেউ কুক্ষিগত করে রাখে না, তাই সে খাদ্য গ্রহণ করলে তাকে কেউ চোর বলে না, শাস্তিও দেয় না।

মানুষের বাঁচার রসদ প্রকৃতিতে উৎপন্ন হলেও, এক শ্রেণীর ক্ষমতাবান মানুষ তা চয়ন ক’রে, সংগ্রহ ক’রে নিজের অধিকারে সঞ্চিত ক’রে রাখে; তাই দুর্বল, দরিদ্র, অসহায় মানুষের পক্ষে তা সংগ্রহ ক’রে আহার করা সম্ভব হয় না। আবার ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করাও সহজ হয় না। তাই ক্ষুধার্ত সেই জ্বালা দূর করতে এবং বাঁচতে অন্যের অধিকারে সংগৃহীত খাবার চুরি করতে বাধ্য হয়।

মানুষ যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত সঞ্চিত করে, তাহলে অন্যের ভাগের অন্নে ঘাটতি পড়ে। বাধ্য হয়েই ক্ষুধার্ত বাঁচার তাগিদে চুরি করে। চোরের দণ্ড বিধান আছে। চুরি অন্যায় সকলেই জানে। চোরের দণ্ড বিধানের প্রতিবাদ নেই। আমরা জানি জিভ দিয়েছেন যিনি, আহার যোগান তিনি। অর্থাৎ ঈশ্বরই সকলের আহারের জন্য খাদ্য প্রকৃতিতে পাঠিয়ে দেন। সেই খাদ্য যদি লোভ বশত, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য কোনো শক্তিমান, ক্ষমতাবান সংগ্রহ করে নিজের অধিকারে রাখে, অন্যদের বঞ্চিত করে, তাহলে তারা ক্ষুধার অন্ন কোথায় পাবে। তাই তারা বাঁচার তাগিদে চুরি করে।

মানুষের মতোই বিড়ালের ও আছে ক্ষুধা তৃষ্ণা, কিন্তু মানুষের আহার্য গ্রহণে তাদের আপত্তি না থাকলেও তারা খেতে গেলেই মানুষ তাদের তাড়া করবে কেন? বিড়াল অপরের দুধ চুরি করে খায়, কিন্তু সে বা কোনো চোর চুরি করে কেন তার কারণটি তলিয়ে দেখা দরকার। চোর কখনো সাধ করে চুরি করে না, অভাবের তাড়নায় খাদ্যের প্রয়োজনেই চুরি করতে বাধ্য হয়। 

কিন্তু অভাব কেন? অভাব এই কারণে — যারা ধনী, তারা প্রচুর ধন সঞ্চয় করে রাখে, ফলে যে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি হয়, তারই কারণে অপর অনেকেই, দরিদ্রেরা চোর হয়, চোর চুরি করে। অতএব দেখা যাচ্ছে, চোরের চুরির মূলে যে অভাব, সেই অভাবের স্রষ্টা হলো কৃপণ ধনী। চুরি করা অবশ্যই অধর্ম, কিন্তু সেই অধর্মের জন্যও তো দায়ী সেই কৃপণ ধনী। সেও কি চোরের অপেক্ষা বড় অধার্মিক নয়? চোর অধার্মিক, চোর দোষী, অতএব সমাজ-শৃঙ্খলার প্রয়োজনে চোরের দণ্ডবিধান করা হয়, যে কৃপণ ধনী এর জন্য দায়ী, যে চোর অপেক্ষাও অধার্মিক, অধিকতর দোষী, সমাজ তার দণ্ডবিধান করে না কেন? ধনীর প্রতি সমাজের এই পক্ষপাতিত্ব কেন ?

চোরের সাজা হয় কিন্তু চোর সৃষ্টিকারী বড়লোক মজুতদারদের শাস্তি হয় না। যেদিন চোরের থেকে শতগুণে দোষী মজুতদারদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা হবে, আর কেউ প্রয়োজনাতিরিক্ত খাদ্য সঞ্চয় করবে না, সেদিন চোরও হয়তো থাকবে না সমাজে।

 

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *