দুঃখ পাপের ফল, নাও হতে পারে, দুঃখ ঈশ্বরের নেওয়া পরীক্ষা ভাব সম্প্রসারণ।
ভাবসম্প্রসারণ: দুঃখ পাপের ফল, নাও হতে পারে, দুঃখ ঈশ্বরের নেওয়া পরীক্ষা।
মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ দুই-ই থাকে। সাধারণ মানুষেরা সুখ পেলে মনে করে, এ তার পরিশ্রমের ফল; দুঃখ পেলে মনে করে পাপের ফল। সংসারে পুণ্যবান, সাধারণ মানুষেরাও দুঃখ পান। যিনি কখনো কোনো পাপ করেননি তিনিও দুঃখ পান। আসলে দুঃখ ছাড়া কোনো সুখ বা আনন্দ নেই। খেলায় আনন্দ আছে বলেই খেলা করা হয়, কিন্তু যারা খেলে তাদের তো দৌড়-ঝাঁপের পরিশ্রম করতে হয়, তাতে তো কষ্ট বা দুঃখ থাকে। তবু সেই দুঃখ শিশুরাও স্বীকার করে আনন্দ পাবার জন্যই। সংসারে যে-কোনো আনন্দ পেতে গেলে লড়াই করতেই হয়।
পরিশ্রমের বা লড়াইয়ের দুঃখ স্বীকার করলেই আনন্দ আসে। সেই রকম পুণ্যের সঙ্গেও দুঃখের সম্পর্ক থাকে। ঈশ্বর ভক্তকে পরীক্ষা করার জন্য দুঃখের মধ্যে ঠেলে দিতে পারেন; ভক্ত নিজেও ঈশ্বরের কাছে পৌঁছবার জন্য দুঃখের সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে পারেন। এই জন্যই তো সম্পন্ন বা রাজ পরিবারের সন্তান সব সুখে জলাঞ্জলি দিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে পথে নামেন, ভিখারীর মতো জীবন বেছে নেয়। তিনি জানেন, এই দুঃখময় জীবনেই তাঁকে রক্ষা করার জন্য ঈশ্বর পাশে এসে দাঁড়াবেন।
হাসি মুখে দুঃখকে স্বীকার করে নিলে, অপরের দুঃখকে নিজের বলে স্বীকার করে নিলে, কষ্ট হতেই পারে কিন্তু পুণ্য বা ঈশ্বর লাভের সম্ভাবনাও থাকে। যখন তা লাভ হয়, তখনই তো পরমানন্দ হাতে পাওয়া যায়। সংসারে কত পরীক্ষা আমরা স্বীকার করেই নিই। পরীক্ষা পাশ করার জন্য উদ্যোগী হই।
যে যতবেশী কষ্ট বা দুঃখ স্বীকার করে পড়াশোনা করে বা নিজেকে প্রস্তুত করে, তার পরীক্ষা তত ভালো হয়। পরীক্ষার ফল প্রাপ্তি যখন ঘটে, তখন উত্তীর্ণ হবার আনন্দ মেলে, জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছতে এমন কত পরীক্ষা আমরা নিয়ত নিয়ে চলেছি। ঈশ্বরের চরণে পৌঁছানোও কারো কারো লক্ষ্য হতেই পারে। ঈশ্বর তাদের পরীক্ষা নেন। ভক্তেরা হাসি মুখে সেই পরীক্ষা দেন। আর যাঁরা ভক্ত নন, যথার্থই পাপীষ্ঠ, তারা মনে করতেই পারে তাদের পাপ কাজের ফল স্বরূপ তারা দুঃখ পাচ্ছে। পড়াশোনা না করে, পরীক্ষায় অসদুপায় গ্রহণ ক’রে ধরা পড়ে যদি শাস্তি পেতে হয়, তার দুঃখ অবশ্যই পাপের ফল।