StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

দৃশ্য-শ্রাব্য উপকরণের তাৎপর্য ও সুবিধা

দৃশ্য-শ্রাব্য উপকরণের তাৎপর্য বা সুবিধাগুলি আলোচনা কর।

দৃশ্য-শ্রাব্য উপকরণের তাৎপর্য ও সুবিধা– প্রশ্নের উত্তরটি একসাথে দেওয়া হয়েছে। যদি প্রশ্নটি আলাদাভাবে দেওয়া(তাৎপর্য অথবা সুবিধা) হয় তাহলে নিম্নলিখিত উত্তরটি প্রযোজ্য।

ভূমিকা:

দৃশ্য-শ্রাব্য উপকরণের তাৎপর্য ও সুবিধা– পঠনপাঠন ছাড়াও আরও নানাভাবে প্রতিনিধিত্বমূলক জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে স্থির চিত্র, ফিল্ম, ফিল্মের অংশ, কোন ব্যক্তি, ছদ্মবেশী বা ভানকারী উপাদান, টি.ভি. বা ঐ জাতীয় কোন না কোন উপাদান বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে। প্রতিনিধিত্বমূলক জ্ঞান যত মূর্ত ও বাস্তব হবে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক পর্বের জ্ঞান তত বেশি ফলপ্রসূ হবে। অবশ্য শিক্ষকের এই ধারণা থাকতে হবে যে তিনি একটি বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। তা না হলে মূল বা বাস্তবভিত্তিক শিখনের সঙ্গে বিকল্প শিখনের তুলনা করা সম্ভব হয় না।

শিক্ষাক্ষেত্রে নির্দেশনামূলক পদ্ধতি প্রবর্তিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য শিখন বা শিক্ষণের উপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করা হতে লাগল। মনোবিজ্ঞান বলে, আমাদের ইন্দ্রিয়গুলিই হচ্ছে জ্ঞানের প্রবেশদ্বার।

ছাত্রদের যত বেশি ইন্দ্ৰিয় কাজে লাগানো হবে জ্ঞানের প্রবেশ তত সহজ হবে। বিভিন্ন জাতীয় তথ্য বা সংবাদ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইন্দ্রিয় কার্যকরী হয়। Cobur (1968) একটি পরীক্ষণ থেকে এ ব্যাপারে কিছু নির্দেশ দিয়েছেন, যেমন—শিখনের 1% আসে স্বাদ থেকে, 1.5% আসে স্পর্শ থেকে, 3.5% আসে ঘ্রাণ থেকে, 11% আসে শ্রবণ থেকে এবং 83% আসে দর্শন থেকে। ঠিক তেমনি শিখন সংরক্ষণ নির্ভর করে কতকগুলি ইন্দ্রিয়জাত অভিজ্ঞতার উপর, যেমন– 10% স্মৃতি সংরক্ষণ হয় পঠন থেকে, 20% হয় শ্রবণ থেকে, 30% হয় দর্শন থেকে, 50% হয় শ্রবণ ও দর্শন যৌথভাবে হলে, 70% হয় কখন থেকে এবং 90% হয় কথনের সঙ্গে কার্যকে যুক্ত করলে। তাই এ সম্বন্ধে বলা হয়।

আমি শ্রবণ করি—আমি ভুলে যাই, আমি দর্শন করি—আমার মনে থাকে, আমি কাজ করি—আমি উপলব্ধি করি।

দৃশ্য-শ্রাব্য উপকরণের তাৎপর্য ও সুবিধা:

দৃশ্য-শ্রাব্য উপকরণ বা কৌশল বা প্রযুক্তিগত মাধ্যম বা শিখন সহায়ক পদ্ধতি হল কতকগুলি অতিরিক্ত সুবিধা যা শিক্ষককে সঠিক ধারণা, বক্তব্য বা উপলব্ধি স্পষ্ট করতে, প্রতিষ্ঠা করতে, সম্পর্ক নির্ণয় করতে বা সুসংবদ্ধ করতে সাহায্য করে। এর ফলে তাঁর শিক্ষাদান কার্যটি আরও মূর্ত, বাস্তব, চিত্তাকর্ষক, ফলপ্রসু, উদ্দীপনামলুক আগ্রহ সঞ্চারী, অর্থপূর্ণ ও স্পষ্ট হয়। এখন এই সমস্ত উপকরণ ঠিকমত ব্যবহার করলে কি কি সুফল পাওয়া যায় সে সম্বন্ধে একটু আলোচনা করা যাক-

(১) শ্রেষ্ঠ উদ্বোধক বা প্রেষণা সঞ্চারক:

দৃশ্য-শ্রাব্য উপকরণের তাৎপর্য হল প্রেষণা সঞ্চারক। এই সমস্ত উপকরণ ছাত্রদের সক্রিয় করে তুলতে পারে এবং ছাত্ররা এতে আগ্রহ ও উৎসাহ বোধ করে। এই সমস্ত উপকরণ ছাত্রদের মধ্যে প্রেষণা সঞ্চার করে।

(২) বাচনিক পদ্ধতির প্রতিষেধক:

এই সমস্ত উপকরণ বাচনভঙ্গীর মাত্রা কমিয়ে দেয়। এগুলি স্পষ্ট ধারণা সৃষ্টি করতে পারে বলে শিখন নিখুঁত বা সঠিক হয়।

(৩) স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি:

দৃশ্য-শ্রাব্য উপকরণের সুবিধা হল স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।কোন কথা কেবলমাত্র শুনে মনের মধ্যে যে প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি হয়—শোনার সঙ্গে দেখা, স্পর্শ করা, স্বাদ গ্রহণ করা, ঘ্রাণ নেওয়া ইত্যাদি কার্য যুক্ত করলে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় তা আরও প্রত্যক্ষ, বাস্তব, মূর্ত ও অপেক্ষাকৃত দীর্ঘস্থায়ী হয়। এর ফলে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর একটি স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি মনের মধ্যে অঙ্কিত হয়ে যায়।

(৪) প্রতিনিধিত্বমূলক অভিজ্ঞতা:

শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় তার গুরুত্ব অপরিসীম। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে সবসময় প্রত্যক্ষ বা বাস্তব অভিজ্ঞতা সরাসরি দেওয়া সম্ভব হয় না। এই জাতীয় উপকরণ ঐ বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতিনিধিত্বমূলক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সাহায্য করে। যেমন—’তাজমহল’ সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার সময় ছাত্রদের তাজমহলের সামনে নিয় যাওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে তার একটি মডেল বা ছবি তাজমহল সম্বন্ধে একটা প্রতিনিধিত্বমূলক অভিজ্ঞতা ছাত্রদের মধ্যে সৃষ্টি করতে সক্ষম।

(৫) বৈচিত্র্য:

কেবলমাত্র বক্তৃতা ও চক শিখনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। এই সমস্ত উপকরণ শ্রেণীকক্ষে বৈচিত্র্য নিয়ে আসে এবং শিক্ষকের হাতে বিভিন্ন রকমের শিখন সহায়ক যন্ত্র সরবরাহ করে।

(৬) স্বাধীনতা:

এই জাতীয় উপকরণ শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেয়। তারা স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করতে পারে, কথা বলতে পারে, হাসতেও পারে এবং কিছু মন্তব্যও করতে পারে। তারা কাজও করার সুযোগ পায় এবং শিক্ষকও চান শিক্ষার্থীরা নিজের হাতে কিছু কাজ করুক।

(৭) সক্রিয়তা:

শিক্ষার্থীরা নিজের হাতে কাজ করার সুযোগ পায় এবং বিভিন্ন জিনিস নিজেরা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করতে পারে।

(৮) স্থায়িত্ব:

শিক্ষার্থীরা যে পরিস্থিতিতে শিক্ষাগ্রহণ করে সেখানে বিভিন্ন উদ্দীপকের উত্তরে ভারা সামগ্রিকভাবে প্রতিক্রিয়া সংগঠিত করে বলে লব্ধ জ্ঞানটির স্থায়িত্ব অনেক বেশি ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।

(৯) শিক্ষানীতি নির্ভর:

দৃশ্য-শ্রাব্য  উপকরণ ব্যবহার করার সময় শিক্ষক শিক্ষানীতির অনুশাসন অনুসরণ করতে পারেন। এগুলি শিক্ষককে মূর্ত থেকে অমূর্ত, জানা থেকে অজানা এবং সক্রিয়তা ভিত্তিক শিক্ষার নিয়মগুলি মেনে চলতে সাহায্য করে।

(১০) মনোযোগ আকর্ষণে সহায়ক:

যে কোন শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতিতে মনোযোগ হচ্ছে প্রকৃত উপাদান বা শর্ত। এই সমস্ত উপকরণ শিক্ষাক্ষেত্রে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে যা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে সহায়ক।

(১১) নতুন শিক্ষণের ক্ষেত্রে সহায়ক:

শিক্ষার্থীরা যা শেখে তা মনের মধ্যে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। পূর্ব জ্ঞানের ভিত্তিতেই নতুন জ্ঞান অর্জিত হয়। বিভিন্ন জাতীয় কাজকর্মের মাধ্যমে সক্রিয়তা, অভিজ্ঞতা এবং উদ্দীপনা বা প্রেষণা একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের জ্ঞান সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে তেমনি ঐ জ্ঞানের ভিত্তিতে নতুন জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে।

(১২) সময় ও শ্রমের সাশ্রয়:

এই সমস্ত উপকরণের সাহায্যে বিষয়বস্তু সম্বন্ধে খুব সহজে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব বলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়েই সময় ও শ্রমের সাশ্রয় ঘটে থাকে।

(১৩) বাস্তবধর্মিতা:

দৃশ্য-শ্রাব্য উপকরণ বাস্তবের সঙ্গে মিল রেখে প্রস্তুত করা হয়। অনেক সময় বাস্তবকেই ছাত্রদের সামনে তুলে ধরা হয়। মুভি ক্যামেরা বা টি.ভি.তে কোন স্থানের বাস্তব চিত্রটিই শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *