StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

আদি মধ্যযুগীয় দক্ষিণ ভারতে বণিক সংঘগুলির কার্যকলাপ বিশ্লেষণ কর

আদি মধ্যযুগীয় দক্ষিণ ভারতে বণিক সংঘগুলির কার্যকলাপ বিশ্লেষণ কর

Q – আদি মধ্যযুগীয় দক্ষিণ ভারতে বণিক সংঘগুলির কার্যকলাপ বিশ্লেষণ কর অথবা, আদি মধ্যযুগীয় দক্ষিণ ভারতে গিল্ড ব্যবস্থা।

ভূমিকাঃ

আদি মধ্যযুগের বিশেষ করে খ্রিস্টীয় অষ্টম শতক থেকে ত্রয়দশ চতুর্দশ শতক পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ ভারতে এবং শ্রীলঙ্কায় বণিক সম্প্রদায়ের বেশ কিছু পেশাদারী সংগঠনের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। মূলত দক্ষিণ ভারতীয় লেখাসমূহ এই ধরনের সংগঠন গুলির ইতিহাস নির্মাণের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যদিও বা অনেক ক্ষেত্রে সমকালীন দেশি বিদেশী সাহিত্য থেকে জানা যায়। এই বণিক সংঘগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অয়ভোল বা আয়ভোল , বলঞ্জীয়ার , নানাদেশি, নাগরোত্তর,‌ মনিগ্রামম, ও অঞ্জুবন্নম, কেনেম আর হলো, মিরা আব্রাহাম। নবারু কারাসিমার মতো স্বল্প সংখ্যক গবেষক-ই‌ এই বণিক সংঘ বা গিল্ড নিয়ে গবেষণা করেছেন।

আদি মধ্যযুগীয় দক্ষিণ ভারতে বণিক সংঘ বা গিল্ডঃ 

দক্ষিণ ভারতের সব লেখতে সবথেকে বেশি উল্লেখিত বণিক সংঘ হল অয়াভোল, বা ঐন্নুডুভর। অষ্টম শতকের মধ্যভাগে কৃষ্ণা তুঙ্গ ভদ্রা, নদীবতী রায়চুর দোয়াবে, মালপ্রভা নদীর তীরে চালুক্যদের রাজধানী বাদামি, রাষ্ট্রকুদ্ধের রাজধানী মান্যখেত এবং পরবর্তী চালুক্যদের রাজধানী কল্যাণের নিকটে অবস্থিত আইহোল নামক স্থানে লাদখান মন্দিরের গায়ে অয়াভোল এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। অয়াভোলের বণিক সংঘ অবশ্য আইহোল সীমাবদ্ধ থাকেনি। দক্ষিণ কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। তামিলনাড়ুর মুনাসান্দরি নিকটবর্তী পুডুকোটাই , কাঞ্চিপুরাম, প্রভৃতি স্থানে নবম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ের অসংখ্য লেখর সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে অয়াভোল বণিক সংঘের উল্লেখ রয়েছে।

বণিক সংঘ বা গিল্ড

তামিলনাড়ুতে অয়াভোল বা ঐন্নুডুভরের এবং তার অনুসরণে আর চম্পক লক্ষ্মী দেখেছেন যে তামিলনাড়ুতে পুডুকোট্টাই সহ বিভিন্ন অঞ্চলে একাদশ ও দ্বাদশ শতক পর্যন্ত চোল শক্তির ক্ষমতা বিস্তারের সঙ্গে অয়ভোলদের প্রভাব বিস্তারের একটি সম্পর্ক বা সংযোগ ছিল। রাজরাজ ও রাজেন্দ্র পরিচালিত সামরিক অভিযান গুলির অব্যহিত পরে পরেই কাবেরীর উত্তরে তালাক্কাডু এবং দক্ষিণে মুডিকোনজানের অয়ভোলের বাণিজ্যিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। অনুরূপভাবে সিংহলের একাদশ শতক এ ১৬ অভিযানের পরে রাজরাস্থ এবং পোল্লানারুযায় আয়ভোল এর বাণিজ্যিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে কুলোত্তুঙ্গের রাজত্বকালে চোলের সঙ্গে বেঙ্গির রাজনৈতিক ঐক্য ও সংযুক্তির পরে বিশাখাপত্তন নামে ও উড়িষ্যার গঞ্জাম জেলার দ্রাক্ষরমের আয়ভোল প্রতিষ্ঠিত হয়।

অন্যদিকে একাদশ শতক থেকে কর্ণাটকে অসংখ্য নতুন নগর কল্যাণীর চালক্য ও দ্বার সমুদ্রের হোয়সল রাজ্যের পৃষ্ঠপোষক তাই আয়ভোল সংঘ “দক্ষিণী আয়ভোল” চোল ও চালুক্য বংশ থেকে উদ্ভূত। মধ্যযুগীয় দক্ষিণ ভারতীয় বিজয়নগর শাসকদের সমকালীন লেখতেও আয়ভোল বণিক সংঘের উপস্থিতি দেখা যায়। 1382 খ্রিস্টাব্দে বেলুড়ের একটি লেখতে এই সংঘের উল্লেখ রয়েছে। মিরা আব্রাহাম আয়ভোল সংঘের নামের উল্লেখিত 1680 খ্রিস্টাব্দের একটি লেখক সন্ধান পেয়েছেন অনন্তপুর জেলায় যা তার মতে আয়ভোল সংঘের নাম উল্লেখধিরি শেষ লেখ। আবার দ্বাদশ শতকের পর থেকে কন্নড় এলাকায় ওক্কালু ও অরূবওক্কালু এবং তামিল এলাকায় চিত্রমেলী পেরিয়ানাড়ু নামক স্থানীয় কৃষিজীবী গোষ্ঠীর আয়ভোল এর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখত।

আদি মধ্যকালীন ভারতীয় লেখমালায় প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায় যে আয়ভোল ছাড়াও মনিগ্রামম, অঞ্জুবন্নম, নগরম ও নগোরত্তর,বলঞ্জীয়ার , নানা দেশি, ইত্যাদি বণিক সংঘগুলি, আদি মধ্যযুগীয় দক্ষিণ ভারতে অন্ত দেশীয় বৈদেশিক বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মনিগ্রামম নামটি নবম শতক থেকে কেরালা ও তামিলনাড়ুর অঞ্চলের লেখতে উল্লিখিত হতে থাকে। চম্পক লক্ষ্মীর মতে মনিগ্রামম হল স্থানীয় বা আঞ্চলিক বণিকদের সংঘ। উরায়ুর মনিগ্রামম এই ধরনের নাম থেকেই স্পষ্ট যে মনিগ্রামম আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতো যদিও আয়ভোল দূরবর্তী বাণিজ্যে যোগাযোগ রাখত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ডের ডাকুয়পো সহ বহু স্থানে মনিগ্রামম বণিক সংঘের উপস্থিতি লেখমালা থেকে স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হয়।

নগরম ছিল বাণিজ্যিক নগর বা বাজার নগরের বণিকদের সংগঠন জাস্ট স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসা বণিক গোষ্ঠীর মধ্যে থেকেই উদ্ভূত হয়েছিল। স্থানীয় ও দূরবর্তী বাণিজ্যে আদান-প্রদানকারী কেন্দ্রগুলিতে নগরের সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষণীয়। দক্ষিণ ভারতে বিশেষত তামিলনাড়ুতে সাধারণভাবে বণিক গোষ্ঠী ভুক্ত মানুষকে বোঝাতে নগরোত্তার অভিধাটি ব্যবহৃত হত। প্যালেস্টাইনের বাইরে ইহুদিদের অভিপ্রায়নের মাধ্যমে বসতি স্থাপন সাধারণভাবে “Diaspora” নামে পরিচিত। ইউরোপীয় বণিকদের আগমনের বহু আগে থেকেই ভারতে নানা দেশের বিদেশী বণিকদের আগমন ঘটেছিল।

আদি মধ্যযুগীয় দক্ষিণ ভারতের উপকূল অঞ্চলে সমুদ্র বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত বিদেশি বণিকদের সক্রিয় ধারাবাহিক ও উপস্থিতি ও বসতি স্থাপনের প্রমাণ সমসাময়িক দক্ষিণ ভারতীয় লেখমালায় রয়েছে। তামিল ও কেরালার লেখ সমূহে উল্লেখিত অঞ্জুবন্নম ও কোডুন উপকূলে মারাঠি ,সংস্কৃত ও কন্নড় ভাষার লেখতে উল্লেখিত হঞ্জমান পশ্চিম এশিয়া থেকে আগত সমুদ্র বণিকদের সংঘ। এই বণিক সংঘ ইহুদি, সিরিয়া, খ্রিস্টান, আরব মুসলিম, ও পাশিরা অন্তর্ভুক্ত ছিল। মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার থেকে ভারত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীন পর্যন্ত সমুদ্র বাণিজ্যে এই অঞ্জুবন্নম বনিক গোষ্ঠীর সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। 

বণিক সংঘের অধিকাংশ লেখতে দেখানো হয়েছে সঙ্ঘভুক্ত কোন বণিক মন্দিরের উদ্দেশ্যে দান করেছেন। কতিপয় লেখতে বলা হয়েছে বণিক সংঘের সদস্যরা জলাধার বা মন্দির রক্ষার দায়িত্ব পালন করতেন। কিছু লেখতে বনিক নাম অনুসারে জলাধার বা মন্দির নির্মাণের নজিরও রয়েছে।

মূল্যায়নঃ

সর্বোপরি দক্ষিণ ভারতের বণিক সংঘের লেখ সমূহ থেকে সমসামরিক সামুদ্রিক বাণিজ্যের দ্রব্যসমূহ ও তার আদান-প্রদানের বিস্তৃতি বিবরণ পাওয়া যায় পঞ্চদশ শতকের গোড়ার দিকে চৈনিক নৌবহরের সামরিক অধিকতা মোংহি সাতবার ভারত মহাসাগর অভিযান চালান। নৌ বাহিনীর সঙ্গে ছিল প্রচুর বিলাস দ্রব্য পরিপূর্ণ চৈনিক জাহাজ বা জাষক। পঞ্চদশ শতকের শেষে উত্তম আশা অন্তরীন হয়ে ভাস্কোদাগামা কাপাদে পৌঁখেন শুরু করে আটলান্টিক হয়ে ইউরোপীয় বণিকদের ভারতে আসেন। নবারুণ কারাশিমা অনুমান করেছেন যে পঞ্চদশ শতকে এই দুই ঘটনা দক্ষিণ ভারতীয় বণিক সংঘগুলির অবক্ষয় সূচিত করেছিল।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *