StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের জীবনী

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের জীবনী

Q- চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের জীবনী। 

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের বংশ পরিচয়

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের জীবনী আলোচনার পূর্বে চন্দ্রগুপ্তের বংশ পরিচয় সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। চন্দ্রগুপ্তের বংশ পরিচয় সম্পর্কে দেশীয় ও বিদেশীয় সূত্র থেকে প্রাপ্ত উপরিউক্ত তথ্যগুলি সর্বাংশে সত্য নয়। মুদ্রারাক্ষস গ্রন্থটি ও বিষ্ণুপুরাণের টীকাকার নন্দদের সঙ্গে মৌর্যদের পারিবারিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ওপর যে জোর নিয়েছেন তা নিশ্চিত বলে মনে হয় না। তা যদি হত তাহলে প্রায় সমসাময়িক গ্রিক লেখক জাস্টিনের বর্ণনায় ঐ বিষয়টি প্রাধান্য পেত। এছাড়া, চন্দ্রগুপ্তের শূদ্র বংশে জন্মগ্রহণের বিষয়টি অন্যান্য বিভিন্ন তথ্য থেকেও সমর্থিত হয় না। এমনকি কিছু কিছু উপাদানে চন্দ্রগুপ্তকে অনেক উঁচু বংশের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। 

রাজপুতানার মধ্যযুগের কিছু শিলালেখতে যে ঐতিহ্য লিপিবদ্ধ আছে তা থেকে বোঝা যায় যে মৌর্যর ছিল সূর্যবংশজাত। আবার বেশিরভাগ বৌদ্ধ ঐতিহ্যে চন্দ্রগুপ্তকে ক্ষত্রিয় বংশের সন্তান বলে বর্ণনা করা হয়েছে। মহাবংশে স্পষ্টতই বলা হয়েছে, ক্ষত্রিয় মোরীয় (মৌর্য) গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত। দিব্যবদানে মৌর্য শাসক বিন্দুসারকে ক্ষত্রিয় চন্দ্রগুপ্তের পুত্র বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ঐ একই গ্রন্থে বিন্দুসার-পুত্র অশোক নিজেকে একজন ক্ষত্রিয় বলে পরিচয় দিয়েছেন।

মোরীয় নামক যে ক্ষত্রিয় গোষ্ঠীর কথা মহাবংশে বলা হয়েছে তার সমর্থন মেলে বৌদ্ধ ঐতিহ্য “মহাপরিনির্ব্বাণ সুত্র‘ থেকে। এই গ্রন্থটিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে মোরীয়রা ছিল ক্ষত্রিয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ বুদ্ধের মৃত্যুর পর তাঁর দেহাবশেষ সংগ্রহের জন্য যে সমস্ত গোষ্ঠীর আগমন ঘটেছিল তাদের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার পিয়লিবনের ক্ষত্রিয় মোরীয়রাও ছিল। এই মোরীয়দের নেতৃত্বে যে একটি প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রচলন ঘটেছিল তা পূর্বে ষোড়শ মহাজনপদ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।

আধুনিক বেশিরভাগ ঐতিহাসিক তাই মনে করে থাকেন যে মুরা নাম থেকে মৌর্য বংশের উদ্ভব ঘটেনি। চন্দ্রগুপ্ত একেবারে নীচ বংশেরও মানুষ ছিলেন না। নন্দবংশের সঙ্গে মৌর্যদের পারিবারিক কোনো সম্পর্কও ছিল না। মৌর্যরা ছিল। প্রকৃতপক্ষে পিপ্ললিবনের ক্ষত্রিয় মোরীয়দের উত্তরসুরি।

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কৃতিত্ব

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের পিতা ও মাতা 

বৌদ্ধ ঐতিহ্য থেকে চন্দ্রগুপ্তের প্রারম্ভিক জীবন সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। এর থেকে জানা যায় যে চন্দ্রগুপ্তের পিতা ছিলেন মোরীয় গোষ্ঠীর একজন অন্যতম নেতা। কিন্তু আকস্মিকভাবে এক সীমান্ত সংঘর্ষে তিনি মারা যান। এর ফলে তার স্ত্রী অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েন এবং নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন। এরপর তিনি পুষ্পপুর বা পাটলিপুত্রে এসে উপস্থিত হন এবং সেখানে তাঁর এক পুত্রসন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। এই পুত্র সন্তানই হলেন খ্যাতনামা শাসক চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য।

চন্দ্রগুপ্তের প্রতিভা ও বাস্তব বুদ্ধি

জন্মের পর একেবারে গোড়ার দিকে চন্দ্রগুপ্ত একজন গোপালক এবং পরে একজন শিকারীর অধীনে মানুষ হন। পরবর্তীকালে চন্দ্রগুপ্তের প্রতিভা ও বাস্তব বুদ্ধি চাণক্য বা কৌটিল্য নামে এক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্রাহ্মণের নজরে পড়ে। চাণক্য যথার্থই অনুভব করেন যে এই বালকটির মধ্যে মহৎ হয়ে ওঠার বিভিন্ন লক্ষণ ও গুণাবলী বিদ্যমান রয়েছে। এই অনুভূতি থেকেই তিনি চন্দ্রগুপ্তকে নিজ বাসস্থান তক্ষশিলায় নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে সমরকৌশল ও অন্যান্য বিভিন্ন দিক থেকে সুশিক্ষিত করে তোলেন।

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সিংহাসন আরোহণ

বৌদ্ধ সাহিত্য অনুসারে তাঁর সিংহাসনে আরোহণের আনুমানিক সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৩২৪ অব্দ। আলেকজান্ডারের সঙ্গে আগত গ্রিক পর্যটকদের বিবরণের ভিত্তিতে পরবর্তীকালে জাস্টিন, প্লুটার্ক প্রমুখ গ্রিক পণ্ডিতরা যে বিবরণ লিখেছেন তা বৌদ্ধ সাহিত্য থেকে প্রাপ্ত তথ্যটিকে সমর্থন করে। কারণ, তাঁদের বিবরণ থেকে জানা যায় যে খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে স্যান্ড্রোকোস (চন্দ্রগুপ্ত ) যখন আলেকজান্ডারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তখনও তিনি রাজপদে অধিষ্ঠিত হননি। তাঁরা আরো লিখেছেন যে এর কিছুকাল পর তিনি ঐ পদে বসেন।

সুতরাং ৩২৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সিংহাসনে বসেছিলেন। আলেকজান্ডারের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের এই সাক্ষাতের উদ্দেশ্য কী ছিল সে আলোচনা প্রসঙ্গক্রমে করা হবে। চন্দ্রগুপ্তের সিংহাসনে আরোহণের সময় দেশের পরিস্থিতি ছিল সংকটজনক। একদিকে ধননন্দের শাসনাধীনে দেশে গণ-অসন্তোষ এবং অপরদিকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে গ্রিকদের আধিপত্য বিস্তার। দেশের এই সার্বিক পরিস্থিতি চন্দ্রগঞ্জের সিংহাসন আরোহণের অনুকূলে কাজ করেছিল।

চন্দ্রগুপ্ত উত্তরাধিকার সূত্রে সিংহাসনে বসেননি, তাঁর বংশকৌলীনাও ছিল না। বস্তুত, চন্দ্রগুপ্তের উত্থানের বিষয়টি ইতিহাসে এক রোমাঞ্চকর অধ্যায় হিসাবে স্বীকৃত হয়ে আছে। উল্লেখ্য, চন্দ্রগুপ্তের বংশ পক্ষিয় সম্পর্কে সমকালীন ও পরবর্তীকালের দেশীয় ও বিদেশীয় সাহিত্যে নানা ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে, ফলে এ বিষয়ে বিতর্ক বেড়েছে।

গ্রিক লেখক জাস্টিন তাঁর গ্রন্থ এগিটোম-এ লিখেছেন যে চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন “সাধারণ বংশজাত” সন্তান। কিন্তু হিন্দু সাহিত্যে চন্দ্রগুপ্তের বংশ সম্পর্কে অন্য কথা বলা হয়েছে। বেশিরভাগ হিন্দু ঐতিহ্যে মগধের নন্দবংশের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের বংশকে সংযুক্ত করা হয়েছে। ক্ষেমেন্দ্র ও সোমদেব তাদের রচনায় চন্দ্রগুপ্তকে “পূর্ব নন্দ সূত” বা একজন নন্দ শাসকের পুত্র বলে অভিহিত করেছেন। বিশাখদত্তের মুদ্রারাক্ষস নাটক পরবর্তীকালের রচনা হওয়া সত্ত্বেও এতে নন্দবংশের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের সম্পর্কের বিষয়টি স্থান পেয়েছে। এই গ্রন্থটিতে তাঁকে ‘বৃষল’ ও ‘কুলহীন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

চন্দ্রগুপ্ত সম্পর্কে মুদ্রারাক্ষসে ‘বৃষল’ ও ‘কুলহীন’ শব্দ দুটির উল্লেখ থেকে ঐতিহাসিকরা তাঁর নীচ বংশ কৌলীন্যের বিষয়টির ওপর আলোকপাত করার চেষ্টা করেছেন। এস্থলে অবশ্য উল্লেখ্য যে, ‘বৃষল’ শব্দটি সব সময় শূদ্র বা নীচ বংশ জাত অর্থে ব্যবহৃত হয় না। তবে ‘কুলহীন’ শব্দটি ‘হীন’ বা ‘নীচ’ বংশে তাঁর জন্মগ্রহণের ইঙ্গিত দেয়। এদিক থেকে বিচার করলে গ্রিক ঐতিহাসিক জাস্টিনের মতের সঙ্গে মুদ্রারাক্ষসের উদ্ধৃতির সামঞ্জস্য লক্ষ করা যায়।

পুরাণের কোথাও চন্দ্রগুপ্তকে শূদ্র বলে চিহ্নিত করা হয়নি এবং নন্দদের সঙ্গে মৌর্যদের পারিবারিক সম্পর্কের কথাও সেখানে স্থান পায়নি। অথচ অনেক পরবর্তীকালে বিষ্ণুপুরাণের এক টীকাকার চন্দ্রগুপ্ত সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন যে তিনি ছিলেন শুভ্র বংশীয় মুরার গর্ভজাত সন্তান এবং ঐ মুরাকে নন্দরাজার স্ত্রী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। জৈন ঐতিহ্য পরিশিষ্টপর্বণে চন্দ্রগুপ্তকে কোনো এক গ্রামের প্রধান ময়ূর পোষকের কন্যার পুত্র বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *