StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

মারাঠা শক্তির বিকাশে প্রথম তিনজন পেশোয়ার অবদানের মূল্যায়ন কর

মারাঠা শক্তির বিকাশে প্রথম তিনজন পেশোয়ার অবদানের মূল্যায়ন কর।

Q- মারাঠা শক্তির বিকাশে প্রথম তিনজন পেশোয়ার অবদানের মূল্যায়ন।

ভূমিকাঃ

মুঘল সাম্রাজ্যের ধ্বংস স্তুপের উপর যে সমস্ত আঞ্চলিক রাজ্য গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল মারাঠা শক্তি। মারাঠা শাসনতন্ত্রে ছত্রপতি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী হলেও মন্ত্রিপরিষদ যথেষ্ট মর্যাদার অধিকারী ছিল। আর এই মন্ত্রী পরিষদের অন্যতম ছিলেন পেশোয়া বা প্রধানমন্ত্রী। শিবাজীর মৃত্যুর পর মারাঠা রাষ্ট্র সঙ্ঘে ঐকের ফাটল দেখা যায়। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও অস্থিরতা মারাঠা রাজ্যকে দুর্বল করে দিয়েছিল। ছত্রপতির পদ নিয়ে দেখা দেয় সমস্যা এবং তাকে কেন্দ্র করেই মারাঠা সরদাররা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে যান।

মারাঠা শক্তির বিকাশে প্রথম তিনজন পেশোয়ার অবদানের মূল্যায়ন

অযোগ্য উত্তরাধিকারীদের অযোগ্যতার সুযোগে পেশোয়াতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে। একদা যে পেশোয়ার কে ছত্রপতি স্বয়ং নিয়োগ করতেন ক্রমে সেই পেশোয়াই মারাঠা শাসনে পরিণত হতো। মৃত্যুর পূর্বে উইল করে সাহু পেশোয়ারকে মারাঠা রাজ্যের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব দান করে দিয়ে যান। পেশন তন্ত্রের অভুত্থান মারাঠাদের শক্তি বৃদ্ধি করলেও তার প্রভাব ছিল সাময়িক এবং পরিণতিতে ক্ষতিকারক। মারাঠা শক্তির বিকাশে প্রথম তিনজন পেশোয়ার ছিলেন – বালাজি বিশ্বনাথ,প্রথম বাজিরাও এবং বালাজি বাজিরাও ।

বালাজি বিশ্বনাথঃ

বংশানুক্রমিক পেশোয়াল তন্ত্রে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বালাজি বিশ্বনাথ। 1708 খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রপতি সাহুর অন্যতম সেনাপতি ধনাদি যাদবের অধীনে একজন রাজস্ব কর্মচারী হিসেবে তিনি সরকারি কাজে যোগদান নিজের যোগ্যতা বলেই তিনি দ্রুত এবং সাহু তাকে পেশোয়ার পদে উন্নতি করে। বালাজির পেশোয়া পদ গ্রহণ সময় মারাঠা রাজ্যে ও বিভিন্ন সমস্যায় বিব্রত ছিল।

প্রথমতঃ মারাঠা সরদাররা ছিলেন স্বাধীনচেতা পেশোয়া হিসেবে সাহুর বিন্দুমাত্র কর্তৃত্ব ছিল না সর্দারদের উপর। এই সরদারদের বশীভূত করে ছত্রপতির কৃতিত্ব বৃদ্ধি করা এবং কল্পুর গোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা নষ্ট করা ছিল বালাজি বিশ্বনাথের প্রধান ও প্রথম কাজ। দ্বিতীয়তঃ মুঘল রাজবংশের পতনের মুখে অবস্থা এবং মারাঠা জাতির মুঘল বিরোধী মানবিকতা সম্পর্কে বালাজি সচেতন ছিলেন। সাহু ও মুঘল বিরোধিতায় রাজি ছিলাম না অথচ ছত্রপতি হিসেবে তার অস্তিত্ব নির্ভর করতো মারাঠা রাজ্যের বিস্তার নীতির উপর।

বালাজি বিশ্বনাথ কূটনীতি এবং বাস্তবমুখী পরিকল্পনার সমন্বয় ঘটায় তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতিকে সফলভাবেই মোকাবিলা করেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও বিবাদমান মারাঠা সর্দারদের সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি তাদের ক্ষমতা ও আতিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেন চৌথ ও স্বদেশ মুখি আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা স্থির করা হয় এবং স্থির হয় আদায়কৃত চৌথের 25 শতাংশ পাবেন ছত্রপতি, 9 শতাংশ তিনি দান করতে পারবেন এবং বাকি 66 শতাংশ মারাঠা সর্দাররা ভোগ করবেন।

স্বদেশ মুখী সবটাই পাবেন ছত্রপতি, এই ব্যবস্থা সরদারদের সন্তুষ্ট করে সাহুর আনুগত্য বৃদ্ধি পায় বালাজির প্রভাব ও বাড়ে, কিন্তু এই বৃত্তি পরিনামে মারাঠা রাজ্যের অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মারাঠা সালদালদের প্রতিপত্তি ও আকাঙ্ক্ষাও বেড়ে যায়। দক্ষ ফেসওয়াল দের আমলে এর কুফল দেখা না গেলেও দুর্বল পেশওয়ালদের সর্দারদের হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীয় বর্ষতা জাতীয় সংহতের পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়।

বালাজি বিশ্বনাথ

বালাজি বিশ্বনাথ মুঘলদের ঘরোয়া কুন্তল কে কাজে লাগিয়ে মারাঠাদের শক্তি বৃদ্ধি করেন মুঘল সম্রাট ফারুকশিয়ারের বিরুদ্ধে সৈয়দ ভাতৃদ্বয় মারাঠাদের সাক্ষ্য চাইলে, বালাজি রাজি হয়ে যান। 1714 খ্রিস্টাব্দে বালাজি সৈয়দ হুসেন আলীর সঙ্গে যে চুক্তি করেন তাতে মালাঠাদের সুবিধাই হয়েছিল স্যার রিচার্ড টেম্পোল এই চুক্তিকে মারাঠা রাজ্যের ইতিহাসে ম্যাগনাকার্টা বলে উল্লেখ করেছেন। স্বদেশ সাহি জানিয়েছেন যে এই চুক্তি বালাজি বিশ্বনাথের দূরদর্শিতা ও গভীর রাজনৈতিক পান্ডিত্যের পরিচালক। কারণ এই চুক্তির দ্বারা মুঘল বিরোধিতার অবসান ঘটে এবং বালাজি মারাঠা সাম্রাজ্যবাদ প্রসারে সুযোগ পান। 1720 খ্রিস্টাব্দে বালাজি বিশ্বনাথের মৃত্যু হয়।

প্রথম বাজিরাওঃ

বালাজি বিশ্বনাথের মৃত্যুর পর প্রথম বাজিরাও পেশোয়া পদে বসেন। ঐতিহাসিক গ্র্যান ডাফ প্রথম বাজিরাওকে মারাঠা জাতির নেপোলিয়ান বলে আখ্যা করেছিলেন। শুধুমাত্র দূরদর্শী রাজনীতিবিদ-ই নয়, সুসংগঠক ও সাহসী যোদ্ধা হিসেবেও তার প্রথম বাজিরাও শিবাজী ও বালাজী বিশ্বনাথের অনুসৃত রাষ্ট্রপতির পরিমার্জিত ও সম্প্রসারিত রূপ তুলে ধরেন। তিনি মারাঠা রাষ্ট্রের পরিবর্তে হিন্দু নিয়ন্ত্রিত ভারতীয় সাম্রাজ্যের পরিচালনা করেন। যে পরিচালনা রূপ পায় হিন্দু পাদশাহীর আদর্শের মধ্যে তার হিন্দু রাজ্যের আদর্শ সমগ্র দেশের হিন্দু নেতৃত্বকে পেশোয়ার অনুগামী হতে অনুপ্রাণিত করেছিল।

প্রথম বাজিরাও

প্রথম বাজিরাও এর পদের মধ্যে বাধ্য ছিল অনেক হায়দ্রাবাদের নিজাম মারাঠা অগ্রগতিতে শঙ্কিত ও ঈশানিত্ত ছিলেন। কোলাপুরের শিবাজীর বংশধররাও সাহুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। বাজিরাও দক্ষতার সঙ্গে এই সমস্ত সমস্যার সমাধান করেন। তিনি নিজামকে আক্রমণ করে পালঘাটের যুদ্ধে পরাজিত করেন। জিনজিরার সিদ্ধি সম্প্রদায় এবং গোয়ায় ও পোতুগিজ পরাজিত করে তিনি পেশোয়ার কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করেন। দক্ষিণ ও মধ্য ভারতে কর্তৃত্ব স্থাপনের পর প্রথম বাজিরাও উত্তর ভারত অভিযানে পরিকল্পনা নেন। দক্ষিণ ভারতেও পেশোয়ার কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ হয়েছিল। সদেসাহির মতে, বাজিরাও আঞ্চলিক মারাঠা রাজশক্তিকে সাফল্যের সঙ্গে এক সর্বভারতীয় শক্তিতে পরিণত করেছিলেন। সামরিক ক্ষেত্রে তার ‘‘গেরিলা পদ্ধতি’’ কার্যকর হয়েছিল।

বালাজি বাজিরাওঃ

প্রথম বাজিরাও এর মৃত্যুর পর তার পুত্র বালাজি বাজিরাও পেশোয়া পদে বসেন। কিছু প্রভাবশালী মারাঠা সরদার এতে আপত্তি জানালেও সাহু তাকে কল্পনা করেননি এবং পেশোয়া পদে বংশানুক্রমিক দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতিমধ্যে সাহুর মৃত্যু হলে যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় তাতে পেশোয়ার উদ্যোগ 1750 খ্রিস্টাব্দে ছত্রপতি নিজের অভিষেক সম্পূর্ণ করান। পেশোয়ার হাতে মাঠা রাজ্যের সমস্ত ক্ষমতা চলে যায়। এতে পেশোয়া মর্যাদা ও ক্ষমতা দুই বৃদ্ধি পায় পেশোয়া ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গায়কোয়া বিদ্রোহী তরাবাইয়ের পক্ষে যোগদান। কিন্তু বালাজী বাজি রাও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন। পেশায় মারাঠা রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

বালাজি বাজিরাও 

পিতার প্রদাঙ্গ অনুসরণ করে বালাজি বাজিরাও সমগ্র ভারতব্যাপী অভিযান চালান তিনি হিন্দু-পাদ-পদ-শাহী আদর্শ বিসর্জন দিয়ে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে বিজিত অঞ্চল থেকে জবরদস্তি মূলক চৌথ ও স্বদেশ মুখি আদায় করতে থাকেন। তিনি মারাঠা বাহিনীকে আফগান ও অন্যান্য সম্প্রদায় ভুক্ত ব্যক্তিদের ভাড়াটি সৈন্য হিসেবে নিয়োগ করেন মাঠতের চিরাচরিত ‘‘গেরিলা পদ্ধতি’’ ত্যাগ করে সামরিক বাহিনীতে আধুনিক করে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেন। মুঘলদের অভ্যন্তরীণ কুন্দলে অংশ মুঘল দরবারে কর্তৃত্ব বাড়াতে সচেষ্ট হন।

পেশোয়া বাজিরাও বালাজির নেতৃত্বে মারাঠাশক্তি ক্ষমতার শীর্ষে উঠেছিল। তার আমলেই স্থাপিত হয়েছিল পেশোয়ার সর্বময় কর্তৃত্ব এবং মারাঠা জাতির মর্যাদা। কিন্তু এই সুযোগ ছিল স্বল্প স্থায়ী তার নীতি কে ভ্রান্তির ফলেই মারা রাষ্ট্রশক্তির ভাঙ্গন ধীরে মারাঠা হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্বহানি হারায়নি। তার সত্বেও বালাজি বাজিরাওয়ের অবদান অনস্বীকার্য।

মূল্যায়ন:

মারাঠা শক্তির বিকাশে প্রথম তিনজন পেশোয়ার  অবদান অনস্বীকার্য। প্রথম বাজিরাও এবং  বালাজি বাজিরাও ‘‘গেরিলা পদ্ধতি’’ এর মাধ্যমে সামরিক বাহিনীকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। অন্যদিকে, বালাজি বিশ্বনাথ 1714 সালে সৈয়দ হুসেন আলীর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা উন্মুক্ত করেছিলেন।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *