ক্লিনিক্যাল কাউন্সেলিং (Clinical Counselling)।
ক্লিনিক কথাটির অর্থ চিকিৎসালয়, এ ক্ষেত্রে পরামর্শকেন্দ্র। ব্যক্তিগত সমস্যাক্রান্ত ব্যক্তি যখন কোন পরামর্শ কেন্দ্রে যান এবং পরামর্শ কেন্দ্রেই কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে তার সমস্যার নিরসন ঘটে তখন তাকে বলা যায় ক্লিনিক্যাল কাউন্সেলিং। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই কথাটির তাৎপর্য একটু ভিন্ন। এমন অনেক সমস্যা আছে যা চিকিৎসার যোগ্য নয় কিন্তু প্রতিকার না করলে তা চিকিৎসাযোগ্য রোগে পরিণত হতে পারে, সেইগুলিই ক্লিনিক্যাল কাউন্সেলিং-এর প্রধান লক্ষ্য।
এই সব সমস্যাগুলি মানুষের ব্যক্তিত্বের গঠন ও তার দৈনন্দিন জীবন যাপনের সঙ্গে যুক্ত। সুতরাং একজন ক্লিনিক্যাল কাউন্সেলর যিনি মানসিক ও ব্যক্তির আভ্যন্তরীণ ভারসাম্য বিষয়ক সমস্যা সম্বন্ধে অবহিত তিনি কাউন্সেলিং-এর সাহায্যে ব্যক্তিকে তার সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেন। অনেক সময়ই চিকিৎসা (Therapy) ও কাউন্সিলিং একযোগে চলে আবার ক্ষেত্র বিশেষে চিকিৎসার পর কাউন্সেলিং অর্থাৎ চিকিৎসা ছাড়াই শুধু কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়।
উলিয়ামসন বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কথা বলেছেন, তারমধ্যে ব্যক্তিত্বের সমস্যা (Personality Problems) প্রধানত ক্লিনিক্যাল কাউন্সেলিং এর বিষয়বস্তু। যেমন, মনোযোগহীনতা জনিত সমস্যা (Attention deficiency roblem), অর্থাৎ মনোযোগ দানে অক্ষমতা, মনোযোগ ধরে রাখার অক্ষমতা, মনঃসংযোগের অভাব, মনোযোগের অতি চঞ্চলতা বা বিক্ষেপ ( distraction), বাধ্যবাধকতা জনিত সমস্যা (Obsessive compulsive problems, অর্থাৎ একই কাজ বার বার করার প্রবণতা, অকারণে হাত ধোয়া, নানা ধরনের অবাঞ্ছিত বাতিক, উদ্বেগ (anxiety), অর্থাৎ অকারণ দুশ্চিন্তা, মানসিক চঞ্চলতা, অহেতুক ভয়, নিদ্রাহীনতা, খাদ্যগ্রহণে অনীহা, অকারণ সন্দেহ পরায়ণতা ইত্যাদি অসংখ্য ব্যক্তিগত সমস্যার প্রাথমিক স্তরে একজন ক্লিনিক্যাল কাউন্সেলর যথোপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে ঐগুলি দূর করতে ব্যক্তিকে সাহায্য করেন।
পেপিনস্কী (Pepinsky) ক্লাইয়েন্টদের সমস্যাবলীর শ্রেণিকরণ করেছেন এইভাবে :
১। আত্মবিশ্বাসের অভাবজনিত সমস্যা (lack of assurance)
২। তথ্যের অভাবজনিত সমস্যা (Lack of information)
৩। কর্মদক্ষতার অভাবজনিত সমস্যা (Lack of skill)
৪। পরনির্ভরশীলতার সমস্যা (Dependence)
৫। পছন্দমাফিক নির্বাচনে উদ্বিগ্নতা প্রকাশের সমস্যা (Choice anxiety)
৬। অন্তর্দ্বন্দ্বের সমস্যা (Self-conflict)।
আবার রবিনসন (Robinson) সমস্যার রূপরেখা নির্ধারণে শ্রেণিকরণটি করেছেন এইভাবে—
১। সঙ্গতি বিধানের সমস্যা (Problems of adjustment)
২। দক্ষতার অভাবজনিত সমস্যা (Problems of skill) এবং
৩। পরিণমনের অভাবজনিত সমস্যা (Problems of immaturity)।