আমরা historiography কেনো পড়বো
historiography (হিস্ট্রিওগ্রাফি) বলতে বোঝায় ঐতিহাসিকদের দ্বারা প্রণীত একটি ঘটনার ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা বা বিবরণ। এককথায় বলতে গেলে historiography হলো ইতিহাস চর্চা বা ইতিহাস রচনা। ঐতিহাসিকরা তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একটি ঘটনার পর্যালোচনা করেন, নানান অনুসন্ধান চালান, তারপরে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে সেই ঘটনার বিশদ ব্যাখ্যা দেন। অর্থাৎ historiography হলো ঐতিহাসিকদের ব্যাখ্যাকিত ইতিহাস রচনা বা ইতিহাস চর্চা।
অতীত ও ইতিহাস এক নয়, ইতিহাস হল অতীতের চর্চা, তথ্য বা উপাদানের উপর ভিত্তি করে অতীতকে দেখা ও তাকে লেখার প্রক্রিয়াকে সাধারণভাবে ইতিহাসচর্চা বলা হয়। নিকট বা সুদূর অতীতকে তুলে ধরার জন্য ইতিহাসচর্চা ও ইতিহাস রচনা শুরু হয়েছিল বহু প্রাচীন কাল থেকেই।
প্রাচীন বিশ্বে ইতিহাসচর্চা:
আদিমতম ইতিহাস বা ইতিহাস অনুরূপ রচনার নিদর্শন পাওয়া যায় ব্যালাড জাতীয় ঐতিহ্যবাহী গাধায়, ব্যাবিলনের গিলগামেশ ভারতের রামায়ন, মহাভারতের মত মহাকাব্যে, মিশরীয়, হিটাইট, অসিরীয়, চৈনিক, ভারতীয় ইত্যাদি অঞ্চলের প্রাচীন শাসকদের উৎকীর্ণ বা লিপিবদ্ধ কাহিনী বা প্রশস্তিতে, ওল্ড টেস্টামেন্টের একাধিক গ্রন্থে ইতিহাসের মত এরূপ রচনার ধারাকে ইতিহাসবিদ আর জি কলিংউড আধা ইতিহাস (quasi-history) বা পৌরাণিক ইতিহাস নামে চিহ্নিত করেছেন কারণ সাধারণভাবে এই ধরণের রচনায় ইতিহাসচর্চার মূল দুটি গুরুত্বপূর্ণ শৈলী অতীতের অনুসন্ধান ও তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়না।
বিংশ শতকে ইতিহাসচর্চা:
বিংশ শতাব্দীতে ইতিহাসচর্চায় নানান নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়। হেগেল প্রমুখ ইওরোপীয় পূর্বসূরীদের পথে না হেঁটে ব্রিটিশ ঐতিহাসিক আর্নল্ড জোসেফ টয়েনবী ইওরোপকেন্দ্রিকতার বাইরে গিয়ে বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার ইতিহাস রচনার গুরুত্ব অনুভব করেন, জার্মান ঐতিহাসিক কার্ল গুস্ত হেমপেল ইতিহাসে সাধারণ নিয়মের সন্ধান করার কথা বলেন, সদ্যপ্রয়াত মার্কসবাদী ঐতিহাসিক এরিক হবসবম ঐতিহাসিকদের সচেতন করেন যে ইতিহাসকৃত অতীতের শিক্ষা যে কোন আগ্রাসনমূলক কাজকে বৈধতা প্রদান করতে পারে।
আধুনিক ইতিহাসচর্চা :
ঊনিবিংশ শতকের গোড়ায় বার্থোণ্ড নেইবার ও তাঁর অনুসরণে লিওপোল্ড ভ্যান রাঙ্কে ইতিহাসচর্চাকে আরও পরিশিলীত করার জন্য প্রাথমিক উপাদানের যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের উপর গুরুত্ব দেন। রাঙ্কে লেখেন যে ইতিহাসের কাজ ভবিষ্যতের হিতার্থে যথার্থভাবে বিচার ও ব্যাখ্যা করে অতীতের ঘটনাকে ঠিক যেমনটি ঘটেছিল তেমনভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা এইভাবে র্যামের দর্শনের আবির্ভাবের সাথে সাথে বস্তুনিষ্ঠ বা তথ্যনিষ্ঠ ইতিহাস রচনার একটি ধারার সূত্রাপত ঘটে। র্যাস্তের সমসাময়িক সময়ে অগস্ত কমতেও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের পদ্ধতির উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।
উপরিউক্ত দীর্ঘ আলোচনার পর এ বিষয়ে আসা বাঞ্ছনীয় হবে আমরা historiography কেনো পড়বো বস্তুত historiography বা ইতিহাসচর্চা -কে জানার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে – পুরনো ঘটনা হলে তা ইতিহাস হয় না তার জন্য দরকার নানান তথ্য প্রমাণ তাকে বিশ্লেষণ এবং অনুসন্ধান করা৷ তারপর রয়েছে নানা ঐতিহাসিকদের নানান মতামত ও সমালোচনা তার স্বপক্ষে বিপক্ষে নানান যুক্তি। আর এই কাজ গুলি করে থাকেন ঐতিহাসিক তার ইতিহাস চর্চার মাধ্যমে। ঐতিহাসিক তার ইতিহাসচর্চা বিভিন্ন ধাপে করে থাকেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো–
- সামান্যীকরণ
- কার্যকারণ সম্বন্ধ
- বস্তুনিষ্ঠ।
1) সামান্যীকরণ:
ইতিহাসকে ঐতিহাসিকরা পাঠকদের মনে আগ্রহ সৃষ্টি করে সকলের সামনে তুলে ধরে। যেমন কোন তথ্য পাওয়া গেলে তার ভিত্তিতে অনুমান করে নেওয়া হয় যে তৎকালীন সময়ে মানুষ বস্তুত সেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতা যা ইতিহাসকে অনেকটা গল্পের মত করে পাঠকদের সামনে তুলে ধরে৷
2) কার্যকারণ সম্বন্ধ:
এই বিষয়টি তুলে ধরেন ঐতিহাসিক ই এইচ কার E.H Carr তাঁর লেখা গ্রন্থ What is history তে এটি লেখেন 1961 খ্রিস্টাব্দে। তিনি বলেন কোনো ঘটনা ঘটার পেছনে কোনো পরিস্থিতি থাকে৷ এক ঘটনা কে অন্য ঘটনার কারণ হিসাবে দেখানো হয়৷ ঐতিহাসিকদের কাজ হল কারণ কে খোঁজা৷
3) বস্তুনিষ্ঠ:
বস্তুনিষ্ঠ বলতে বোঝায়, কোন বস্তু যেরকম তাকে সেভাবে গ্রহণ করা ঐতিহাসিক দের কাজ হল যে বস্তু যেরকম সেরকম উপস্থাপিত করে ইতিহাসকে তুলে ধরা৷ অর্থাৎ এখানে ঐতিহাসিকরা নিজেদের বিচার বা ধারণাকে যুক্ত করতে পারবে না। হেরোডোটাসের সময় থেকেই বস্তুনিষ্ঠ শুরু হয়।