StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে শ্রীরামপুর ত্রয়ীদের অবদান লেখ

শ্রীরামপুর ত্রয়ী কাদের বলা হয় ভারতীয় শিক্ষায় তাদের অবদান। ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে শ্রীরামপুর ত্রয়ীদের অবদান লেখ।

শ্রীরামপুর ত্রয়ী কাদের বলা হয়

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংহত বিন্যাস ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে শ্রীরামপুর ত্রয়ীর দান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই তিনজনের কাজ শুধুমাত্র খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাংলা গদ্য রচনা, শিক্ষার প্রসার ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা- প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদান ছিল। বাংলা তথা ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে শ্রীরামপুর মিশনের উইলিয়াম কেরি, জোওয়া মার্শম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ড- এই তিনজনের অসামান্য সৃজনশীল অবদান ছিল। এই অবদানের জন্য ‘শ্রীরামপুর এয়ী‘ বলা হয়।

[1] শ্রীরামপুর ত্রয়ী’-র অবদান:

ব্যাপটিস্ট মিশনারী সোসাইটির প্রতিনিধিরূপে সুদক্ষ ধর্ম প্রচারক রেভারেন্ড কেরি ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসেন। কলকাতায় কিছুদিন কাজ করার পর তিনি মালদহের একটি নীলকুঠি পরিচালনার দায়িত্ব নেন। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ওয়ার্ড ও মার্শম্যান এদেশে আসার পর তারা তিনজন একত্রে উত্তরবঙ্গে কাজ শুরু করেন। কিন্তু ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি তাদের এ ব্যাপারে অনুমতি না দেওয়ায় তারা শ্রীরামপুর দিনেমার কুঠির আশ্রয়ে এদেশের শিক্ষাবিন্যাস, শিক্ষাপ্রচার ও প্রসারে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উইলিয়াম কেরি ছিলেন একজন প্রখ্যাত ধর্মপ্রচারক, ওয়ার্ড ছিলেন মুদ্রণ পারদর্শী ও মার্শম্যান ছিলেন একজন সুদক্ষ শিক্ষক। 
Also read :

[2] ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা:

আধুনিক ভারতে শিক্ষা ও সংস্কৃতির অগ্রগতির ক্ষেত্রে ছাপাখানার বিকাশ ত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই ছাপাখানার বিকাশে শ্রীরামপুর ত্রয়ীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর ত্রয়ী শ্রীরামপুরে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন । এই ছাপাখানা থেকে তাঁরা বাংলা ভাষার বিভিন্ন পুস্তক প্রকাশ করেন। ফলে বাংলা ভাষার সুসংগঠনে সংহতি ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরি শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে বাইবেলের বঙ্গানুবাদ করেন। ঐ বছরই প্রকাশিত হয় কেরি সাহেব রচিত বাংলা ব্যাকরণ। এছাড়াও তিনি ৪০ হাজার শব্দবিশিষ্ট চার খণ্ডে সমাপ্ত ‘ইঙ্গবঙ্গ অভিযান ও কাব্য ভাষায় লিখিত ‘কথোপকথন’, ‘ইতিহাসমালা’ প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেন।

[3] মিশনারীদের স্বাধীনতা সনদ:

শ্রীরামপুর ত্রয়ী বাংলা শিক্ষার পাশাপাশি এদেশে ইংরেজি ভাষা ও আধুনিক শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেন। তাঁরা এদেশে ইরেজি শিক্ষার কথা বলেন। ইংরেজি শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে তাঁরা ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে Calcutta Benevolent Institution স্থাপন করেন। তাঁদের চেষ্টায় শ্রীরামপুরে একটি Boarding School স্থাপিত হয়। শ্রীরামপুর ত্রয়ী ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর কলেজ স্থাপন করেন। এই কলেজটিই প্রথম ইংরেজি মিশনারী কলেজ। এখানে ধর্মতত্ত্ব শিক্ষাদানের ব্যবস্থাও করা হয়। ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি এই কলেজকে ‘খাতক’ উপাধি দানের ক্ষমতা অর্পন করেন। আজ দেড়শ’ বছর অতিক্রম করেও শ্রীরামপুর কলেজ শ্রীরামপুর ত্রয়ীর শিক্ষানুরাগের গৌরবময় ভূমিকার কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।

[4] ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও উইলিয়াম কেরি:

১৮০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই কেরি সাহেব তাঁর সাথে যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি এই কলেজের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। এই কলেজে থাকাকালীন তিনি দেশীয় পণ্ডিত ও মুনশিদের যারা বাংলা ভাষায় বহু পুস্তক রচনা করেন। দেশীয় পণ্ডিত ও মুনশিদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিলেন রামরাম বসু, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, চণ্ডীচরণ মুনশি ও গোলকনাথ শর্মা। রামরাম বসু রচিত গ্রন্থের নাম ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত’, ‘লিপিমালা’, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার রচিত গ্রন্থের নাম বত্রিশ সিংহাসন’, ‘প্রবোধচন্দ্রিকা’, ‘রাজাবলি’, ‘হিতোপদেশ”, গোলকনাথ শর্মা রচিত “হিতোপদেশ” প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

[5] পত্রিকা প্রকাশনা:

“শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীর জন্য সুলভে পাঠ্যপুস্তক রচনার কথা চিন্তা করেন। তাদের প্রচেষ্টায় স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্য পুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশনার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। তাছাড়াও জনসাধারণকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে শ্রীরামপুর ত্রয়ীর প্রচেষ্টায় ‘দিগদর্শন নামে একটি সাময়িক পত্রিকা ও ‘সমাচার দর্পণ’ নামে একটি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।

[6] বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: 

শ্রীরামপুর ত্রয়ী’র বিদ্যালয় স্থাপনের চেষ্টা শুধুমাত্র শহরাঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না এর প্রসার ও প্রভাব পড়েছিল অনুন্নত ও পিছিয়ে পড়া গ্রামাঞ্চলগুলিতেও। ১৮০০ সালে শ্রীরামপুর মিশন স্থানীয় ছেলেমেয়েদের জন্য একটি অবৈতনিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। ১৮১৭ সালের মধ্যেই মিশনের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। এই বিদ্যালয়গুলি শ্রীরামপুর, হুগলী, হাওড়া, বর্ধমান, যশোহর, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম প্রভৃতি অঞ্চলে বিস্তৃত ছিল। ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায়

[7] স্ত্রীশিক্ষার প্রসার:

নারী শিক্ষায় শ্রীরামপুর ত্রয়ী অবদান গুরুত্বপূর্ণ  ছিল। স্ত্রীশিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে উইলিয়াম কেরি ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এছাড়াও শ্রীরামপুর এয়ী মেয়েদের শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে কলকাতার বাইরের কিছু অঞ্চলকে বেছে নেন। ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে চুঁচুড়ায় মিশনারীদের প্রচেষ্টায় একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।

[8] পাঠক্রম:

শ্রীরামপুর ত্রয়ী এদেশে আধুনিক শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে পাঠক্রমে আধুনিক বিষয়গুলি রাখার ব্যবস্থা করেন। তাদের উদ্যোগে শ্রীরামপুর মিশন থেকে যেসব পাঠ্যপুস্তক বের করা হয়েছিল সেগুলির অন্তর্ভুক্ত পাঠ্যক্রমগুলি ছিল
  1. দেশীয় ব্যাকরণ,
  2. জ্যোতির্বিদ্যা,
  3. ভূগোল,
  4. ইতিহাস,
  5. প্রাথমিক গণনা ও গণিত,
  6. প্রাথমিক বিজ্ঞান
  7. নীতিশিক্ষা।

মূল্যায়ন: 

স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর উদ্দেশ্যে ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের সভাপতিত্বে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন বা রাধাকৃষ্ণণ কমিশন বলেছিল যে, ভারতে উচ্চশিক্ষার ভিত্তি শক্ত করতে হলে শক্তিশালী ও উচ্চমানের মাধ্যমিক শিক্ষার প্রয়োজন। মাধ্যমিক শিক্ষার ভিত শক্ত করার উদ্দেশ্যে ড. লক্ষ্মণস্বামী মুদালিয়ার-এর নেতৃত্বে মুদালিয়ার কমিশন (১৯৫২ খ্রি.) গঠিত হয়। এই কমিশনের অধিকাংশ সুপারিশ মোটেই সাফল্য লাভ করেনি। এই পরিস্থিতিতে ১৯৬৪ সালে কোঠারি কমিশন গঠিত হয়। বলা বাহুল্য, কোঠারি কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে পূর্বাপেক্ষা অনেক সফল ও ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণে সক্ষম হয়। কমিশন তার সমীক্ষা চালাতে গিয়ে দেশের খাদ্য সমস্যা, বেকারত্ব, জাতীয় সংহতির সমস্যা, মূল্যবোধের সমস্যা প্রভৃতি উপলব্ধি করে। স্বাভাবিকভাবেই কমিশন তার সুপারিশ গ্রহণের সময় উক্ত বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছিল। ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে শ্রীরামপুর ত্রয়ীদের অবদান অনস্বীকার্য।
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *