ইতালির ঐক্য আন্দোলনে গ্যারিবল্ডির / গ্যারিবল্ডীর ভূমিকা
ভূমিকা
ইতালির ঐক্য আন্দোলনে গ্যারিবল্ডির ভূমিকা (জুসেপ্পে গারিবালদি/জিউসেপ গ্যারিবল্ডি) ভোলা যাবে না। এই স্বনামধন্য বিপ্লবী সৈনিকের জীবন ইতিহাস জানা খুবই দরকার। ১৮০৭ সালে উত্তর ইতালির নিস শহরে তার জন্ম। আবেগপ্রবণ, স্বাধীনতাপ্রিয় ও কবিপ্রতিভার অধিকারী এই মানুষটির শিক্ষা ছিল খুবই সাধারণ স্তরের। তিনি ছিলেন খাঁটি দেশপ্রেমিক। দেশের জন্য কোন আপোষে তিনি রাজী ছিলেন না।
![]() |
গ্যারিবল্ডি(গ্যারিবল্ডী) |
নাবিক হিসাবে তিনি জীবন শুরু করেন। দশ বছরের নাবিকের জীবনে তিনি বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তিনি জলদস্যুদের হাতে বন্দী হন। বিদেশে নির্বাসিত ইতালির স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছ থেকে তিনি ইতালির ঐক্য ও স্বাধীনতার জন্য অনুপ্রাণিত হন। দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের মেয়ে এ্যানিটার প্রেমে পড়েন এবং বিবাহ করেন। দুইজনে বহু দুঃসাহসিক অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন।
ইতালির ঐক্য আন্দোলনে গ্যারিবল্ডির ভূমিকা
গ্যারিবল্ডি(গ্যারিবল্ডী) ছিলেন মাৎসিনীর ভক্ত। স্বাভাবিকভাবে মাৎসিনী প্রতিষ্ঠিত তরুণ ইতালির তিনি সভ্য হন। ১৮৩৩ সালে মাৎসিনী ও গ্যারিবল্ডী পিডমণ্ড নৌবাহিনীতে বিদ্রোহ ঘটাবার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলে তিনি দেশত্যাগ করে দক্ষিণ আমেরিকায় আশ্রয় নেন। দীর্ঘ ১২ বছর তিনি সেখানে কাটান।
১৮৪৮ সালের বিপ্লবের সময়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেন। কাস্টজার যুদ্ধে পিডমণ্ডের পরাজয় হয়। মাৎসিনীর আহ্বানে গ্যারিবল্ডী রোমে উপস্থিত হন। মাৎসিনী প্রতিষ্ঠিত রোমের প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করার জন্য ফরাসি সৈন্য রোম আক্রমণ করলে গ্যারিবল্ডি(গ্যারিবল্ডী) বাধা দেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। এই সময়ে তার স্ত্রী বিয়োগ হয়। হতাশ গ্যারিবী আবার আমেরিকায় চলে যান । অবশ্য কিছুদিন পর তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন। সার্ডেনিয়ার কাছে কারো দ্বীপে তিনি বসবাস করেন। এখান থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখেন ইতালির মুক্তির।
মাৎসিনীর প্রধান ভক্ত গ্যারিবল্ডীর সঙ্গে কাভুরের পরিচয় হয়। পিডমণ্ডের রাজবংশের প্রতি তার আনুগত্য বৃদ্ধি পায়। গ্যারিবল্ডীর এই আচরণ ইতালির আন্দোলনের পক্ষে সহায়ক হয়। তিনি পিতমণ্ডের সৈন্যবাহিনীর অন্যতম অধিনায়করূপে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেন। তাঁর প্রভাবে মধ্য ইতালিতে পিডমণ্ডের সঙ্গে সংযুক্তিবাদী আন্দোলন গড়ে উঠে। এই সংযুক্তিকে ফ্রান্স স্বীকৃতি দেয় তবে তার বিনিময়ে কাভুর ফ্রান্সকে স্যাভয় ও নিস উপহারস্বরূপ দিয়েছিলেন। গ্যারিবন্ডী এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। নিস ছিল তাঁর জন্মভূমি। তিনি কাভুরের উদ্দেশ্যে বলেন “কাভুর আমাকে নিজ দেশে পরবাসী করেছেন।”
১৮৬০ সালে দক্ষিণ ইতালির নেপলস্ ও সিসিলিতে প্রতিক্রিয়াশীল বুর্বো রাজাদের বিরুদ্ধে গণবিদ্রোহ শুরু হয়। বিদ্রোহীরা গ্যারিবল্ডীকে নেতৃত্ব দিতে ডাক দেয়। নেপলস ও সিসিলির আবেদনে সাড়া দিয়ে তিনি তার এক সহস্র লাল কোর্তা বাহিনী নিয়ে সিসিলির মার্শালা বন্দরে উপনীত হয়। বুর্বো বাহিনী তাকে বাধা দেওয়ার জন্য তৈরি ছিল। সিসিলির জনগণ বিশেষ করে কৃষক শ্রেণী গ্যারিবল্ডীর নেতৃত্বকে মেনে নেয়। খুব সহজে তিনি সিসিলি অধিকার করেন এবং নিজেকে তিনি সিসিলির সর্বাধিনায়ক বলে ঘোষণা করেন।
সিসিলিতে গ্যারিবল্ডীর সাফল্য কাতুরকে সমস্যায় ফেলেছিল। গ্যারিবল্ডী নেপলস অবতরণের জন্য চেষ্টা করলে কাতুর আরও আশঙ্কিত হন। কারণ কাতুর মনে করেছিলেন গ্যারিবী নেপলস জয়লাভ করে একটি স্বতন্ত্র প্রজাতন্ত্র স্থাপন করবেন। তাই তিনি যাতে নেপলসে পৌঁছাতে না পারেন সেজন্য কাতুর নেপলসের নৌবহরকে বাধা দিতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। কিন্তু গারিবন্ধী ব্রিটিশ নৌবহরের সাহায্যে নেপলসে আসেন এবং বিনা যুদ্ধে নেপলস দখল করেন এবং নিজেকে নেপলসের ডিক্টেটর রূপে ঘোষণা করেন। তিনি দক্ষিণ ইতালিতে এক স্বাধীন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন।
গ্যারিবল্ডির(গ্যারিবল্ডী) এই সাফল্য কান্ডুরকে সংকটে ফেলে ছিল। তিনি উপলব্ধি করেন গ্যারিবল্ডীর অভিযান ইতালির ঐক্য আন্দোলনকে দ্বিধাবিভক্ত করে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গ্যারিবল্ডি ইটালির(ইতালি) দক্ষিণ অংশ ঐক্যবদ্ধ করেন।গ্যারিবল্ডি(গ্যারিবল্ডী) দক্ষিণ ইতালিতে একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে পোপের রাজ্যজয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন। কান্ডুর সঠিকভাবে অনুধাবন করেন ইউরোপের রাজন্যবর্গ এই প্রজাতন্ত্রকে মেনে নেবে না এবং সিসিলি নেপলস সহ পোপের রাজ্যে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে ইতালির ঐক্য সম্পন্ন হবে না। তাই কাড়ুর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে তৃতীয় নেপোলিয়ানের সম্মতিক্রমে পোপ অধিকৃত রোম নগরী বাদ দিয়ে পোপের অবশিষ্ট রাজ্যাংশ ও দক্ষিণ ইতালিকে পিডমণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
পিডমণ্ডের রাজা ভিক্টর ইমানুয়েল পোপের বাহিনীকে কাস্টেল ফিডাৰ্ডোতে (Castelfidando) পরাজিত করে আমব্রিয়া ও মার্চেস দখল করেন। পিডমণ্ড বাহিনী নেপলস অভিমুখে অগ্রসর হয় এবং গ্যারিবল্ডী যাতে নেপলস্ ও সিসিলিকে পিডমণ্ডের হাতে তুলে দেয় তার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিল। দেশপ্রেমিক গ্যারিবল্ডী পিডমণ্ডের বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ না করে নেপলস ও সিসিলির অধিকার ছেড়ে দিয়েছিলেন। এই দুই প্রদেশ পিডমণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়। স্বেচ্ছায় গ্যারিবল্ডী ক্যাপ্রেরা দ্বীপে চলে যান।
মূল্যায়ন
ইতালির ঐক্য আন্দোলনে গ্যারিবল্ডির ভূমিকা চিরস্মরণীয় ফলে, গ্যারিবল্ডি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন । তার উদারতা এবং সৈনিকোচিত নিয়মানুবর্তিতা ইতালির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে। ইতালিয়দের কাছে তিনি বীরের মর্যাদা পেয়েছেন। সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থের থেকে দেশের স্বার্থ তার কাছে ছিল অনেক বড়। তিনি আত্মত্যাগের ও স্বদেশপ্রেমের যে দৃষ্টান্ত রাখেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।