শিক্ষা ও সমাজতত্ত্বের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো।
শিক্ষা ও সমাজতত্ত্ব পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্ক যুক্ত। শিক্ষাবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের একই উৎস দর্শনশাস্ত্র। সমাজতত্ত্ব হল সমাজ সম্পর্কিত বিশেষ জ্ঞান, শিক্ষাবিজ্ঞান হল তার চালিকাশক্তি। আধুনিক শিক্ষার কাজ হল একজন শিক্ষার্থীকে পরিপূর্ণ মানুষ তৈরি করা। একজন মানুষ এই সমাজের মধ্যে থেকেই তার পরিপূর্ণতার বিকাশ ঘটায়। শিক্ষা ও সমাজতত্ত্বের মধ্যে সমাজতত্ত্ব ব্যক্তিকে সামাজিকীকরণের পাঠ দেয়, শিক্ষাবিজ্ঞান সেই পাঠকে মানুষের জীবনে গতিশীল ও সক্রিয় করে তোলে। সমাজ ও ব্যক্তি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষাবিজ্ঞানের ধারায় মানুষ সমাজে যেমন দক্ষ ও আদর্শ হয়ে ওঠে, তেমনি এই দক্ষ মানুষই সমাজকে সচল ও আধুনিক করে তোলে। এখানে ব্যক্তি ও সমাজ একই মুদ্রার দুটি পিঠ।
![]() |
শিক্ষা ও সমাজতত্ত্বের মধ্যে সম্পর্ক |
সমাজতত্ত্ব + শিক্ষাবিজ্ঞান = শিক্ষামূলক সমাজতত্ত্ব
সমাজ + ব্যক্তি = আদর্শ সমাজে দক্ষ ব্যক্তি
এই সমাজে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে একক মানুষ কখনোই সাফল্য লাভ করতে পারে না। প্রয়োজনের তাগিদে তাই একদিন সেই মানুষ দলগঠন করেছিল যার পরিণতি আজকের সমাজ। এখানে মানুষ তার সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে পেরেছিল এবং নিজের সৃজনক্ষমতার প্রকাশ করতে পেরেছিল। তাই আমরা বলতে পারি ব্যক্তি এবং সমাজ অবিচ্ছেদ্যভাবে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দিক থেকে সম্পর্কযুক্ত।
প্রত্যেকটি শিশুর মধ্যে জ্ঞান, আগ্রহ, অভ্যাস, আলস্য ইত্যাদি গড়ে ওঠে। শিক্ষা এই কাজে শিক্ষার্থীকে সাহায্য করে এবং সমাজ তাকে যোগ্য মর্যাদা দেয়।
ব্যক্তির ক্ষমতা + সমাজ পরিবেশ = শিক্ষা ক্ষমতার প্রকাশ বা দক্ষতা অর্জন। শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব।
ব্যক্তির নিজস্ব দক্ষতা বিকাশের বা প্রকাশের পথকে উন্মুক্ত করতে সমাজ উপযুক্ত স্থান করে দেয়। তাই ব্যক্তির সর্বাঙ্গীণ বিকাশ ঘটে। অর্থাৎ শিক্ষা সার্থকভাবে অগ্রসর হতে পারে। সমাজ যদি এখানে উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করতে না পারে তবে শিক্ষাপ্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। সেক্ষেত্রে একজন শিশুর বিকাশ প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে।
আবার শিক্ষা হল সেই মাধ্যম যার সাহায্যে সমাজকে অগ্রগতির পথে নিয়ে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের উপযুক্তভাবে গড়ে তোলা যাবে। তাই ডুর্কহেইম বলেছেন— “শিক্ষা হল ভবিষ্যৎ নাগরিকদের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া।” অতএব শিক্ষা ও সমাজতত্ত্বের মধ্যে সম্পর্কের দ্বারা স্থূল জড়ের ন্যায় স্ফুলিঙ্গবিহীন এবং গঠনতন্ত্র।
আরো পড়ুন – শিক্ষা ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক
আবার জর্জ পেইন বলেন- “শিক্ষামূলক সমাজতত্ত্বে শিক্ষা যেমন শিক্ষার্থীর জীবনব্যাপী একটি প্রক্রিয়া, সমাজের ক্ষেত্রও তেমনি শিক্ষার্থীর জীবনব্যাপী বিস্তৃত তাই শিক্ষাবিজ্ঞান সমাজতত্ত্বের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষামূলক সমাজতত্ত্ব তৈরি হয়েছে, যার উদ্দেশ্য হল শিক্ষাকে সামাজিক প্রক্রিয়ারূপে অনুশীলন করা। আবার গোষ্ঠীজীবনে ব্যক্তিবৈষম্য, পারস্পরিক মানবিক সম্পর্ক প্রভৃতিকে যথাযথ করতে শিক্ষাকে সমাজতত্ত্বের সঙ্গে যুক্ত হতে হয়।
তাই শিক্ষা ও সমাজতত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য হলেও শিক্ষা ও সমাজতত্ত্বের মধ্যে সম্পর্ক পরস্পর গভীরভাবে যুক্ত এবং একে অপরকে প্রভাবিত করে। এর ফলে তৈরি হয়েছে শিক্ষামূলক সমাজতত্ত্ব। তাই এককথায় বলতে হয় Education and Sociology are the two sides of a coin।