অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করো।
কোনো এক ভাষায় উপস্থাপিত বক্তব্য, ভাব, তথ্য বা বিষয়কে অন্য ভাষাভাষী মানুষের কাছে গ্রহণ যোগ্য করার জন্য সেই বক্তব্য, ভাব, তথ্য বা বিষয়কে অন্যান্য ভাষায় পরিবেশন করাকেই বলা হয় অনুবাদ।
এক কথায় অনুবাদ হ’ল বিষয়ের ভাষা পরিবর্তন। এক পাত্রের সামগ্রী অন্য পাত্রে রাখার মতো। পাত্র পরিবর্তন করলেও যেমন সামগ্রীর পরিবর্তন হয় না; তেমনি ভাষা পরিবর্তন করলেও বিষয়ের পরিবর্তন হবে না, ভাব ও বক্তব্য একই থাকবে, তবেই হবে যথার্থ অনুবাদ। কবিতা, কাব্য, গল্প, উপন্যাস, পত্র, বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস – সমস্ত বিষয়েরই অনুবাদ হ’তে পারে। মানুষের প্রয়োজনেই অনুবাদ বা ভাষান্তরের সূচনা হয় এবং তার গুরুত্বও বাড়ে।
অনুবাদের প্রয়োজনীয়তাঃ
(1) কোনো এক ভাষায় উপস্থাপিত বক্তব্য, ভাব, বিষয়, তথ্য, সত্য বা সাহিত্য যদি অন্য ভাষাভাষী মানুষের কাছেও প্রয়োজনীয়, গ্রহণযোগ্য ও আস্বাদনীয় হবে— উপকারে লাগবে বলে মনে হয়, তাহলে তা’ অন্য ভাষাভাষী মানুষের গ্রহণযোগ্য করতেই এই ভাষান্তরের অনুবাদের প্রয়োজন হয়।
(2) এক বিষয়কে বহু ভাষায় অনুবাদ করা যায় প্রয়োজনানুসারে। ইংরেজিতে লেখা বিজ্ঞান, সাহিত্য দর্শন প্রভৃতি বিষয় আজ পৃথিবীর সমস্ত সভ্য মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে এই অনুবাদের মাধ্যমেই।
![]() |
অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা |
(3) সাহিত্য, সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যেমন অনুবাদের প্রয়োজন , তেমনি প্রশাসনিক, শিক্ষা বা অন্যান্য ক্ষেত্রেও অনুবাদের প্রয়োজন হয়। একজন অশিক্ষিত, সাধারণ মানুষের অভিযোগ বা আবেদন একজন ভিন্নভাষী প্রশাসনিক কর্তার পক্ষে বোঝা সম্ভব নাও হতে পারে। তখন অনুবাদ আবশ্যক হয়।
(4) কোনো এক ভাষার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য, উৎকৃষ্ট ভাব, উৎকৃষ্ট শিল্পকর্ম অন্য ভাষাভাষির মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্যই অনুবাদের প্রয়োজন।
(5) অনুবাদের মধ্যে দিয়ে কোনো একভাষার উৎকৃষ্ট কাব্য, নাটক, উপন্যাস বা অন্য কোনো উৎকৃষ্ট রচনার ভাব ও বক্তব্য অন্য ভাষার মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাদের রসাস্বাদন ও জ্ঞান বৃদ্ধির সহায়তা করা যায়।
উপসংহারঃ
বিভিন্ন ভাষার মূল্যবান বহু গ্রন্থ যেমন বাংলা ভাষায় অনুদিত হচ্ছে; তেমনি বাংলা ভাষায় রচিত মূল্যবান গ্রন্থগুলিও, বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হচ্ছে। অনুবাদের মধ্যে দিয়েইতো মানুষ সহজেই অন্যান্য ভাষার সাহিত্য-সংস্কৃতির পরিচয় জানতে পারছে।