StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

“অভিজাতরা ফরাসি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন এবং প্রারম্ভিক পর্বে তাকে জয়ের পথে নিয়ে গিয়েছিলেন”- লেফেভরের এই অভিমতের সঙ্গে তুমি কি একমত ?

“অভিজাতরা ফরাসি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন এবং প্রারম্ভিক পর্বে তাকে জয়ের পথে নিয়ে গিয়েছিলেন”— লেফেভরের এই অভিমতের সঙ্গে তুমি কি একমত ?

১৭৭৪ সালে ষোড়শ লুই তীব্র আর্থিক সংকটের সময়ে সিংহাসনে বসেন। রাজকোষ তখন ছিল প্রায় শূন্য। তিনি তুর্গোকে অর্থমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন। তুর্গো এই সময়ে একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তুর্গো রাজপরিবারের অমিতব্যয়িতা, সরকারি ব্যয় সংকোচ, বেগার প্রথার অবসান, অন্তঃশুল্ক ব্যবস্থা রদ, অবাধ বাণিজ্যের প্রসার, আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ না দেওয়া এবং যাজক ও অভিজাতদের উপর কর ধার্য করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবে তুর্গোর সংস্কারনীতি অভিজাতদের স্বার্থে আঘাত হানে। দার্শনিক ভলটেয়ার তুর্গোর সংস্কার নীতিকে সমর্থন করে চিঠিও লিখেছিলেন।

১৭৭৫-এর শেষে সরকারি ব্যয়কে ৬৬,০০০,০০০ ফ্রাঁতে নামিয়ে এনেছিলেন এবং জাতীয় ঋণের সুদের পরিমাণ ৩,০০০,০০০ ফ্রাঁতে এনেছিলেন। কিন্তু অভিজাতরা তার ষড়যন্ত্র আরম্ভ করেন। তারা রানী আঁতোয়ানেতের সাহায্যে ষোড়শ লুই-এর উপর চাপ সৃষ্টি করেন যাতে তিনি তুর্গোকে অপসারণ করেন। তাদের চাপে বাধ্য হয়ে ব্যক্তিত্বহীন শাসক ষোড়শ লুই তুর্গোকে অপসারণ করেন। ফলে সংস্কার সাধনের সমস্ত প্রচেষ্টার অপমৃত্যু হল। পদচ্যূত তুর্গো রাজাকে সাবধান করে বলেছিলেন, দুর্বলতাই ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লসের শিরচ্ছেদের কারণ হয়েছিল। তুর্গোর অপসারণকে ভলটেয়ার মৃত্যুর পদধ্বনি বলেছিলেন। যদি ষোড়শ লুই চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে তুর্গোকে স্বপদে বহাল রাখতেন তাহলে তার করুণ পরিণতি হত কি না তাতে সন্দেহ ছিল।

নেকার যিনি ছিলেন জেনেভাবাসী এক ব্যাঙ্ক মালিক, তাকে ষোড়শ লুই অর্থমন্ত্রীর পদে নিযুক্ত করেন। তুর্গোর তুলনায় নেকার অর্থনৈতিক সংস্কারক হিসাবে তেমন খ্যাতিমান ছিলেন না। তিনি কোন রকম কর আরোপ না করে ঋণ নিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলার চেষ্টা করেন। তিনি ১৪৮ মিলিয়ন ফ্রাঁ ঋণ নিয়েছিলেন। সরকারের আর্থিক অবস্থা এর ফলে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়। তিনি বাধ্য হয়ে রাজপরিবারের ব্যয় সংকোচ ও ধনী নাগরিকদের উপর কর ধার্যের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবে তিনি অভিজাতদের বিরাগভাজন হন এবং তার পরিস্থিতি তুর্গোর মতই হয়।

পরবর্তী অর্থমন্ত্রী হন ক্যালোন। তিনি প্রস্তাব দেন (১) সকল সম্প্রদায়কে ভূমিকর দিতে হবে। (২) লবণ কর অর্থাৎ গ্যাবেলা সকল সম্প্রদায়কে দিতে হবে। (৩) করভি বা বেগার শ্রম বন্ধ করতে হবে। (৪) অন্তঃশুল্ক লোপ ও খাদ্যদ্রব্যের অবাধ বাণিজ্যনীতি গ্রহণ করতে হবে। অভিজাতরা এই প্রস্তাবে ক্ষেপে ওঠে।

ক্যালোন অনুভব করেন অভিজাতদের বিরোধিতার জন্য এই প্রস্তাবগুলি কার্যকর হবে না। সেজন্য তিনি পরামর্শ দেন এই প্রস্তাবগুলিকে পার্লামেন্টে পেশ না করে অভিজাতদের মুখপাত্রদের নিয়ে গঠিত Council of Notables-এ পেশ করুন। কিন্তু এখানেও অভিজাতরা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। ফলস্বরূপ ক্যালোন তার পূর্বসূরীদের মতন পদচ্যূত হন। অভিজাতদের কাছে রাজা নতিস্বীকারে বার বার বাধ্য হলে সংকট তীব্র হয়ে উঠে। পরবর্তী মন্ত্রী হন ব্রিঁয়া। তিনি Council of Notables বা গণ্যমান্যদের সভা ভেঙ্গে দিয়ে প্যারিসের পার্লামেন্টে তার কর প্রস্তাব পেশ করেন। স্ট্যাম্পকর ও ভূমিকরকে পার্লামেন্ট মেনে নিতে পারেনি। তাদের বক্তব্য ছিল এ ধরনের কর বসানোর অধিকার একমাত্র ষ্ট্রেটস জেনারেলের আছে। বাধ্য হয়ে ব্রিঁয়া রাজার বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে প্রস্তাবগুলিকে কার্যকর করতে অগ্রসর হলে পার্লামেন্ট এই প্রচেষ্টাকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করে। সরকার পার্লামেন্টের সদস্যদের প্যারিস থেকে বহিষ্কৃত করেন। ফলে আরম্ভ হয় অভিজাতদের সঙ্গে সরকারের বিরোধ। অভিজাতরা বিদ্রোহী হয়ে উঠে।

১৭৮৮ সালের ২১শে জুলাই অভিজাত, যাজক ও বুর্জোয়ারা ভিজিলে নামক স্থানে মিলিত হয়ে জাতীয় সভা বা স্ট্রেটস জেনারেল আহ্বানের দাবী জানায়। বাধ্য হয়ে ষোড়শ লুই প্যারিসের পার্লামেন্টকে পুনঃবহাল করেন। রিয়া ঘোষণা করেন ১৭৮৯ সালের ১লা মে জাতীয় সভায় অধিবেশন ডাকা হবে। ব্রিঁয়া ১৭৮৮ সালের ২৪শে আগষ্ট পদত্যাগ কালে ব্রিঁয়ার স্থলাভিসিক্ত হন নেকার।

রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিজাত বিদ্রোহ ফরাসী ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লেফেভর, মাতিয়ে, কোবান প্রমুখ ঐতিহাসিক মনে করেন অভিজাতরা ফরাসি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন এবং প্রারম্ভিক পর্বে তাকে জয়ের পথে নিয়ে গিয়েছিলেন, রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিজাতদের এই বিদ্রোহের মাধ্যমে। ঐতিহাসিক মাতিয়ে এই বিদ্রোহকে ‘অভিজাত বিদ্রোহ’ রুডেও ‘অভিজাত বিদ্রোহ’ বলেছেন। অন্যদিকে লেফেভর ‘বিপ্লব’ বলেছেন। 

অভিজাতদের বিদ্রোহ গণআন্দোলনে রূপ নেয়। রাজার বিরুদ্ধে অভিজাতদের বিদ্রোহ রাজতন্ত্রের মর্যাদাকে আঘাত দেয়। রাজার ঐশ্বরিক ক্ষমতা ও স্বৈরতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ফরাসী বিপ্লবের সূচনা অভিজাতদের দ্বারাই হয়েছিল। তারা বুর্জোয়াদের সাহায্য পেয়েছিলেন। বিপ্লবের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অভিজাতদের হাত থেকে নেতৃত্ব বুর্জোয়াদের হাতে চলে যায় এবং শেষ পর্যন্ত বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয় সাধারণ মানুষ। সেতো ব্রিয়ার মতে অভিজাতরা যে বিপ্লবের সূচনা করেন তার সমাপ্তি হয় সাধারণ মানুষ দ্বারা। ঐতিহাসিক লেফেভর স্বীকার করেছেন ফরাসী বিপ্লব শুরু হয় ‘অভিজাত বিপ্লব’ দ্বারা।

মূল্যায়নঃ

‘বিপ্লব’ বলতে বোঝায় আমুল পরিবর্তন। অভিজাতরা আদৌ আমূল পরিবর্তন চাননি। তারা পুরানো ব্যবস্থার পরিবর্তন এমনকি সংস্কারও চাননি। তারা কেবল নিজেদের সুবিধাকে ধরে রাখতে চেয়েছিল। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল রক্ষণাত্মক, বৈপ্লবিক নয়। তাই এই বিদ্রোহ ছিল ‘অভিজাত বিদ্রোহ’। “অভিজাতরা ফরাসি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন এবং প্রারম্ভিক পর্বে তাকে জয়ের পথে নিয়ে গিয়েছিলেন” লেফেভরের এই অভিমতের সঙ্গে আমি একমত  এবং এটি আমার মতে, যুক্তিযুক্ত।  

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *