ভূমিকাঃ
পেলোপনেসীয় যুদ্ধের চতুর্থ বছরে, খ্রিস্ট-পূর্ব ৪২৮ অব্দে লেসবস দ্বীপের প্রধান নগর মিটিলিনি ও অন্যান্য অঞ্চল (মেথিম্না বাদে) এথেন্সের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। স্পার্টা, বিওসিয়া এবং পেলোপনেসীয় লিগের অন্যান্য সদস্যরা মিটিলিনিকে সমর্থণ করে।
মিটিলিনি কেন এথেন্সের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল।
মিটিলিনির বিদ্রোহের পিছনে ছিল একাধিক কারণ লেসবস এথেন্সের অন্যান্য মিত্ররাষ্ট্রগুলির তুলনায় অনেকাংশে স্বাধীন ছিল, এথেন্সকে কোন রকম কর তাকে দিতে হয়নি। মিটিলিনির আভিজাততন্ত্রীরা স্বীকার করেছিলেন যে, তাদের প্রতি এথেন্স ভাল ব্যবহারই করত। কিন্তু লেসের পররাষ্ট্রনীতি এবং অন্যান্য মিত্ররাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত করতে এথেন্স এবং এথেন্সের প্রয়োজনে লেসের নৌবাহিনী ব্যবহার করতে দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। সুতরাং এথেন্সের এই কর্তৃত্ব লেস সুনজরে দেখেনি।
স্যামসে বিদ্রোহের পর এথেন্স তার স্বাধীনতা হরণ করলে লেস্ দ্বীপের অন্যতম নগর-রাষ্ট্র মিটিলিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সম্প্রতি স্যামস বিদ্রোহ ঘোষণা করে শেষ পর্যন্ত কীভাবে স্বাধীনতা হারাল—এটা দেখে তারা শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। তারা নিঃসংশয় ছিল না যে, এথেনীয় সাম্রাজ্যে মিটিলিনি চিরদিন স্বাধীন হয়ে থাকবে।
মিটিলিনি আশঙ্কা করেছিল যে, এথেন্স তার উপর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেবে। মিটিলিনীয়দের মধ্যে গ্রিক স্বাধীন সত্ত্বার বহিঃপ্রকাশ, এথেনীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্রোহে অনুপ্রাণিত করে। স্পার্টা, বিওসিয়া ইত্যাদি রাষ্ট্রের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি বিদ্রোহীদের উৎসাহিত করে।
উপরোক্ত কারণেই যে মিটিলিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল তা নয়—এই বিদ্রোহের কারণ ছিল আরো গভীর। এই বিদ্রোহ ছিল এথেনীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীন গ্রীক সত্তার বাহা অভিব্যক্তি।
বিউরি বলেন, “It was a protest of the Hellenic instinct for absolute autonomy against an empire such as the Athenian.” মিটিলিনীয়দের এই স্বাধীন সত্তার বহিঃপ্রকাশ এবং স্বাধীনতা হারানোর ভয় আমরা খ্রিঃ পূঃ ৪২৮ অব্দের অলিম্পিক ক্রীড়ানুষ্ঠানে সমবেত গ্রীক রাষ্ট্রগুলির প্রতিনিধিদের কাছে মিটিলিনীয় দূতদের ভাষণে দেখতে পাই।
মিটিলিনি বিদ্রোহের উপরোক্ত কারণগুলির সঙ্গে আরো একটি প্রাসঙ্গিক কারণ যুক্ত ছিল স্পার্টা ও বিয়োসিয়া ইত্যাদি রাষ্ট্রের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এই বিদ্রোহকে অন্তত বেশ খানিকটা উৎসাহিত করেছিল সন্দেহ নেই।
মিটিলিনি বিদ্রোহে এথেন্সের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল।
মিটিলিনি বিদ্রোহে এথেন্সের প্রতিক্রিয়া ছিল- এথেন্সের নাগরিক সভা ক্লিয়নের নির্দেশে হুকুম দিল যে, মিটিলিনির সমস্ত পুরুষকে হত্যা করা হবে, আর নারী ও শিশুদের ক্রীতদাসে পরিণত করা হবে। নাগরিক সভার দ্বিতীয় অধিবেশনে এই নির্মম আদেশ পরিবর্তিত করার প্রধান কৃতিত্ব ডায়োডোটাসের। তিনি অপরাধীদেরই শুধু শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছিলেন। প্রথম আদেশ নিয়ে জাহাজ পূর্বেই চলে গিয়েছিল, দ্বিতীয় জাহাজ যখন সংশোধিত নির্দেশ নিয়ে মিটিলিনি পৌঁছল তখন প্রথম দণ্ডাদেশ কার্যকরী করার বন্দোবস্ত সম্পূর্ণ।
কেবল বিদ্রোহের ৩০ জন নায়করা প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হল বাকিরা প্রাণে বেঁচে গেল। মিটিলিনির নগর-প্রাচীর ভেঙে ফেলা হল। মিটিলিনির নৌবাহিনী এথেন্সকে দিতে হল। একমাত্র মেথিম্না ছাড়া লেসের সমগ্র জমি তিন হাজার অংশে ভাগ করে এথেনীয়দের দিয়ে দেওয়া হল, এর মধ্যে তিনশোটি ভূখণ্ড দেবোত্তর হিসাবে রাখা হল।
লেসবস দ্বীপ এথেন্সের অধীনতা স্বীকারে বাধ্য হল। অনেক এথেনীয় সেখানে “cleruchy” খাড়া করে বসবাস শুরু করল। প্রত্যেকটি ভূ-খণ্ডের জন্য বার্ষিক দুই মাইনা ভাড়া দিয়ে চাষবাস লেম্বীয়রাই করবে, ঠিক হল।
মিটিলিনির আত্মসমর্পণের পর মিটিলিনির ভবিষ্যত নিয়ে এথেনীয় নাগরিক সভায় একটি বিতর্ক দেখা দেয়। ক্লিয়নের নেতৃত্বে একটি দল ঘোষণা করে মিটিলিনির সব পুরুষদের হত্যা করা হোক এবং সব মহিলা ও শিশুদের ক্রীতদাসে পরিণত করা হোক।
মিটিলিনির বিদ্রোহ ৪২৭ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে এথেন্স দমন করতে সক্ষম হয়। বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে এথেন্সকে অর্থ সংগ্রহ করতে হয়েছিল। এর ফলে ধনী এথেনীয় ও এথেন্সের মিত্ররা অসন্তুষ্ট হয়। এর ফল এথেনীয় সাম্রাজ্যের পক্ষে শুভ হয়নি।
মিটিলিনির নৌবাহিনী এথেন্সকে প্রদান করতে হয়। লেসবস দ্বীপ এথেন্সের অধীনতা স্বীকার করে এবং এথেন্স সেখানে উপনিবেশ বা ক্লেরুচি স্থাপন করে। মেথিমনা ছাড়া লেসবসের সমস্ত জমি বিভক্ত করে এথেনীয়দের প্রদান করা হয়। স্থির হয়, প্রতিটি ভূখন্ডের জন্য লেসবিয়রা এথেন্স বার্ষিক ২ মাইনা ভাড়া দিয়ে চাষ করবে।