StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

রোমে প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য

রোমে প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য।প্রজাতান্ত্রিক রোমের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য।

ভূমিকা

তত্ত্বগতভাবে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর রোমের সংবিধান ছিল প্রজাতান্ত্রিক। সামরিক ও অসামরিক কোন ক্ষেত্রেই বংশানুক্রমিকতা ছিল না। ম্যাজিস্ট্রেটগণ জনসাধারণ দ্বারা নির্বাচিত হতেন এবং প্রাক্তন ম্যাজিস্ট্রেটগণ সিনেটের সদস্য পদ লাভ করতেন। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট পদের কোন বেতন না থাকায় ধনী ব্যক্তি রায় ম্যাজিস্ট্রেট পদপ্রাপ্তি হতেন। এবং এর ফলে অভিজাত পরিবার প্রাধান্য পায় ফলে রোমের প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানকে ধনতান্ত্রিক ও অভিজাততান্ত্রিক উভয় বলা চলে।

রোমে প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য

রোমের সংবিধান মূলত তিনটি অংশ ছিল – 

  • সিনেট
  • গণপরিষদ/ আইন সভা সমূহ
  • ম্যাজিস্ট্রেটগণ

সিনেট

রোমে প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল সিনেট উপদেষ্টা পর্ষদ। প্রথমদিকে উপদেষ্টা পর্ষদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও ক্রমে সিনেট রাষ্ট্রের প্রধান শক্তিশালী সংস্থায় পরিণত হয়। প্রাক্তন ম্যাজিস্ট্রেটদের মধ্য থেকে বাছাই করা 300 জনকে নিয়ে সিনেট গঠিত হতো। সিনেট নতুন আইন প্রণয়ন এর ক্ষমতা ভোগ করত। যেকোনো আইনের প্রস্তাব আইন সভা গুলোর পেশ করার আগে সিনেটের অনুমতি নিতে হতো। অর্থনৈতিক, প্রাদেশিক প্রশাসন, এবং বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনা ব্যাপারে সিনেট চূড়ান্ত ক্ষমতা ভোগ করত। রাষ্ট্রীয় কোষাগার নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়াও প্রাদেশিক গভর্নরের নিয়োগ, অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাষ্ট্রদূতদের নিয়োগ প্রভৃতি দায়িত্ব সিনেট পালন করত।

গণপরিষদ

প্রজাতান্ত্রিক রোমের সংবিধানের আর এক বৈশিষ্ট্য ছিল ‘কমিটিয়া কিউরিয়াটা’। কমিটিয়া কিউরিয়াটা ছিল রোমের প্রাচীনতম গণপরিষদ এবং একমাত্র প্যাট্রিসিয়ানরায় এর সদস্যপদ লাভ করতে পারতো। পরবর্তীকালে কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিক এবং ধর্মীয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা সামান্য ক্ষমতা ভোগ করত।

প্যাট্রিসিয়ান ও প্লেবিয়ানদের নিয়ে গঠিত হতো কমিটিয়া সেনচুরিয়াটা। এরাই পূর্বোক্ত সমিতির ক্ষমতা আত্মসাৎ করে জাতির সার্বভৌম গণপরিষদের মর্যাদা লাভ করেছিল। এদের মধ্যে বহু জাতি উপজাতি ছিল। এই সংস্থা রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মচারীর নিয়োগ, যুদ্ধ ঘোষণা বা শান্তি স্থাপন, বিচার বিভাগ প্রভৃতির দায়িত্ব পালন করত।

প্যাট্রিসিয়ান ও প্লেবিয়ানরা প্লেবিয়ান সকলদের ব্যক্তিগতভাবে ভোটদানের অধিকারী ছিলেন না। উপজাতি গতভাবে তারা ভোটদানের অধিকার লাভ করত। পরে প্যাট্রিসিয়ান ও প্লেবিয়ানদের মধ্যেকার পার্থক্য দূর হওয়ায় কমিটিয়া ট্রিবুটা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব আইনের পরিণত হয়।

ম্যাজিস্ট্রেটগণ

রোমে প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ম্যাজিস্ট্রেটগণ। রোমের ম্যাজিস্ট্রেটগণ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত ছিলেন কুরুন এবং নন কুরুল। কুরুন ম্যাজিস্ট্রেটগণ ছিলেন সরকারি উচ্চ পদ অধিকারী যেমন – কনসাল, প্রেটর, সেন্সর প্রভৃতি আর নন কুরুল ম্যাজিস্ট্রেটরা কোয়েস্টর,এজিদের এবং ট্রিবিউন প্রভৃতি পদে নিযুক্ত হত। প্রকৃতপক্ষে সিলেটের যে অলংকৃত চেয়ার থাকতো তাকে বলা হতো সেলাকুরুলিস এখান থেকেই এদের নামকরণ হত।

রাজতন্ত্রের বিলুপ্তির পর রাজকীয় ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়, কনসাল নামক দুই রাজ কর্মচারীর ওপর। এরা ছিলেন সাময়িক ও অসামরিক বিভাগের সর্বোচ্চ পদাধিকারী তারা সিনেট এবং আইন সভা গুলোর অধিবেশন ডাকতে ও পরিচালনা করতে পারতেন। এদের ওপরেই রোমান রাষ্ট্রের চরম ক্ষমতা ন্যস্ত ছিল। এরা নির্বাচিত হতেন এক বছরের জন্য।

প্রেটররা ছিলেন বিচার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত। রোমের নাগরিকরা যাতে ন্যায়বিচার পায় সে বিষয়ে তাদের সজাগ দৃষ্টি থাকতো এটি ছিল রোমান আইনের বৈশিষ্ট্য। বৈদেশিকদের বিচারের অধিকার ও তাদের ছিল। রোম কতৃক রাজ্য জয়ের পরিধি বাদে থাকাই আর চারজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তারাই প্রাদেশিক শাসনকাল তার দায়িত্ব পালন করতেন।

রোমের সংবিধান অনুযায়ী দুজন সেন্সর নিযুক্ত হতেন। এবং প্রাক্তন কনসালগণ এই পদে নিযুক্ত হতেন বলে, প্রকৃত অর্থেই তাদের দপ্তরকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দপ্তর বলে মনে করা হত। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর তারা নির্বাচিত হতেন এবং তাদের কার্যকলাপের মেয়াদ ছিল 1½ বছর এরা রোমানদের সম্পত্তির কর ধার্য করতেন। নাগরিকদের নৈতিক জীবন যাপন যাতে সুস্থভাবে হয়, তার ব্যবস্থা করতেন। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সতর্কীকরণ এবং সরকারি রাস্তা ও অট্টালিকা সমূহের তত্ত্বাবধান করেতেন।

রাজস্ব আদাই এবং সামরিক ও অসামরিক ব্যয় এর হিসাব রাখার দায়িত্ব ছিল কোয়েস্টারদের এজিলিসরা সরকারি অট্টালিকা, প্রসাদ, তত্ত্বাবধান, জলনিকাস ব্যবস্থা এবং পুলিশ বিভাগের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিতেন। ট্রিবিউনদের প্রাণ দায়িত্ব যেকোনো অন্যায় অত্যাচারের হাত থেকে প্লেবিয়ানদের রক্ষা করা। ডিরেক্টররা ছিলেন ব্যতিক্রমী ম্যাজিস্ট্রেট যারা অভ্যন্তরীণ বা বহিরাগত সংকটময় মুহূর্তে 6 মাসের জন্য নিযুক্ত হতেন।

রোমের প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান তারতম্যের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছিল এবং এই সংবিধানের রাজতন্ত্র অভিজাতন্ত্র ও গণতন্ত্রের নীতির মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করা হয়েছিল। রাজকীয় ক্ষমতার প্রতীক ছিল দুজন কনসাল, কিন্তু তাদের ক্ষমতা ট্রিবিউনদের মতো সিমিত হত। এমনকি তারা কনসালদের কারাদণ্ড দিতে পারতেন। ধীরে ধীরে ট্রিবিউনদের সংখ্যা 2 থেকে 10 এর পরিণত করা হয়েছিল। প্রাক্তন ম্যাজিস্ট্রেট এর দ্বারা গঠিত সিমেন্ট ছিল প্রকৃতপক্ষে অভিজাততান্ত্রিক পরিষদ। কিন্তু এর ক্ষমতার উৎসের কোন আইনানুগ নীতি না থাকার কারণে শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারতো না।

মূল্যায়ন

প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন ধরনের গণপরিষদ বা আইনসভা থাকায় কোন একটি নির্দিষ্ট সংস্থার পক্ষে শক্তিশালী হয়ে ওঠা সম্ভব ছিল না। তবে রোমের এই সংবিধানের উল্লেখযোগ্য ত্রুটি ছিল শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সংস্থার অভাবের ফলে শাসন ব্যবস্থাকে দৃঢ় করা যায়নি। বিভিন্ন আইনসভা বিভিন্ন সরকারি উচ্চপদ ও তাদের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সিনেটের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছিল। আর সিনেট এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের ক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখতে চেষ্টা করেছিল।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *