StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

কঙ্গো সংকট টীকা লেখ

কঙ্গো সংকট টীকা / কঙ্গো সংকট টিকা লেখ

ভূমিকা 

এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার মতো আফ্রিকাও ঠান্ডা যুদ্ধের আবর্তে অশান্ত হয়ে উঠেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে আফ্রিকাতে সাম্রাজ্যবাদের অবসান ঘটলেও আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলির অর্ন্তনিহিত দ্বন্দ্ব এবং সংঘাত এবং এই সংঘাতের সুযোগ নিয়ে বৃহৎ শক্তিবর্গের হস্তক্ষেপ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তোলে। আফ্রিকার এরূপ একটি সংকটের জ্বলন্ত উদাহরণ কঙ্গো সংকট

কঙ্গো সংকট

কঙ্গো ১৯৬০ সালের জুন মাসে বেলজিয়ামের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করার অব্যবহিত পরেই কঙ্গো সংকট ঘনীভূত হয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড ম্যাকমিলান তাঁর ডায়েরীতে কঙ্গো সংকট সমকালীন পরিস্থিতিকে ১৯১৪ সালের প্রাকযুদ্ধকালীন পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন এবং লিখেছিলেন যে কঙ্গোর অবস্থা সার্বিয়ার মতই বিপজ্জনক। তিনি লিখেছন ‘Now the Congo may play the role of Serbia. Except for the terror of nulcear power of both sides, we might easily slide into the 1914 situation’।

জুন মাসে স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকেই কঙ্গোর বিভিন্ন উপদলীয় নেতাদের মধ্যে স্বার্থদ্বন্দ্ব শুরু হয়, সেনাবাহিনীও বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। সমসাময়িক কালে বেলজিয়ামের সহায়তায় কঙ্গোর অন্যতম প্রদেশ কাতাঙ্গা স্বাধীন হয় এবং খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ কাতাঙ্গা প্রদেশটিকে কঙ্গো থেকে বিযুক্ত করার জন্য পশ্চিমী দেশগুলি আগ্রহী হয়ে ওঠে।

কঙ্গোর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করার জন্য জাতিপুঞ্জের মহাসচিব দাগ হামারশিল্ড বেলজিয়ামকে কঙ্গো থেকে সেনা অপসারণের নির্দেশ দিলেন। অন্যদিকে কঙ্গোর প্রধানমন্ত্রী প্যাট্রিস লুমুম্বা কাতাঙ্গা রাজ্যটি কঙ্গোর অন্তর্ভূক্ত করতে চাইলে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব ডালেস লুমুম্বাকে কমিউনিস্ট ঘেষা বলে চিহ্নিত করে সাহায্যদানের প্রার্থনা অগ্রাহ্য করেন। লুমুম্বা অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়ান থেকে সাহায্য লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এইভাবে বৃহৎ শক্তিবর্গ কঙ্গোর রাজনৈতিক সংকটে জড়িত হয়ে পড়ে।

কঙ্গোর রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠার জন্য নিম্নলিখিত উপাদানগুলি সক্রিয় ছিল।

  1. জাতিপুঞ্জের মহাসচিব জাতিপুঞ্জ ব্যতিত অন্য কোন দেশের জন্য বিমান বন্দরের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয় এবং ক্রুশ্চেভ জাতিপুঞ্জ সংগঠনকে পাশ্চাত্য জগতের স্বার্থবাহী বলে সমালোচনা করেন।
  2. কঙ্গোর প্রধানমন্ত্রী লুমুম্বা জাতিপুঞ্জের মহাসচিব হ্যামারশোণ্ডকে বেলজিয়াম সাম্রাজ্যবাদের লেজুড় বলে কটাক্ষ করেন এবং জাতিপুঞ্জ থেকে কঙ্গোকে বের করে আনেন ও সোভিয়েত রাশিয়ার উপর আস্থাশীল হয়ে পড়েন।
  3. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই লুমুম্বার বিরোধী ছিল এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সি আই. এ. ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রপতি কাসাবুবু লুমুম্বাকে পদচ্যুত করেন ও কর্নেল মোটু কঙ্গোর শাসনব্যবস্থা দখল করেন। অতঃপর ১৯৬১ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারী লুমুম্বা নৃশংশভাবে নিহত হন।

লুমুম্বার মৃত্যুতে কঙ্গোয় শান্তি ফিরে আসেননি, ১৯৬১ সালের শেষদিকে কঙ্গো রাজনৈতিক দিক দিয়ে তিনটি বৃত্তে বিভক্ত হয়ে পড়ে। রাজধানী লিওপোন্ডভিলে মোবুন্টুর শাসন, কাটাঙ্গায় শোষের শাসন এবং স্টানলিভিলে লুমুম্বার অন্যতম সমর্থক গিজেঙ্গার শাসন। কঙ্গোতে জাতিপুঞ্জের সক্রিয় হস্তক্ষেপ শুরু হয়, কাটাঙ্গার উপর সামরিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে মহাসচিব হ্যামারশিল্ড আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলির আকুণ্ঠ সমর্থন পান, কারণ কাটাঙ্গার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী প্ররোচনা প্রসূত বলে মনে করা হয়েছিল। অন্যদিকে জাতিপুঞ্জের কার্যকর ভূমিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভালো চোখে দেখে নি, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করেছিল জাতিপুঞ্জের ভূমিকা রাশিয়ার অনুকূলে যেতে পারে। দুঃখের বিষয় কঙ্গোর শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদগতা মহাসচিব হ্যামারশিল্ড বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন।

হ্যামারশিল্ডের মৃত্যুর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাটাঙ্গার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও গিজেঙ্গার স্বতন্ত্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে দমন করার জন্য জাতিপুঞ্জকে ব্যবহার করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে কাতাঙ্গা সম্পূর্ণভাবে কঙ্গোর অন্তর্ভূক্ত হয়। অন্যদিকে সোভিয়েত সহায়তায় লুমুম্বাপন্থীগণ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করলেও তা পাশ্চাত্য হস্তক্ষেপে ব্যর্থ হয়।

মূল্যায়ন

কঙ্গোকে কেন্দ্র করে আফ্রিকাতে ঠান্ডা লড়াই ঘনীভূত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে আরব জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করলেও পরে জাতীয়তাবাদের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে। এখানে মার্কিন পদক্ষেপ ছিল অনেক বেশি নমনীয়। কঙ্গো সমস্যায় জাতিপুঞ্জের ভূমিকা ছিল সক্রিয় ও ইতিবাচক। যদিও রাশিয়া জাতিপুঞ্জের কার্যক্রম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছিল। সর্বোপরী ছিল কঙ্গোর আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং জাতিগত বিরোধ।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *