StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্রের অবদান

বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্রের অবদান।

ভূমিকা 

আধুনিক বাংলা সাহিত্যে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এর অব্যাহতির পরেই কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (1876-1938) আবির্ভাব ঘটে। একজন বাঙালি কবি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সাহিত্য প্রতিভার সম্বন্ধে একটি উক্তি প্রকাশ করেছিলেন উক্তিটি হল ‘পর্বতের চূড়া যেন সহসা প্রকাশ’।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্রের অবদান

বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান উল্লেখযোগ্য। বাংলা সাহিত্যে তার লেখা ছোটগল্প, বড় গল্প উপন্যাস ইত্যাদির প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। তার বড়গল্প ‘বড়দিদি’ বা কোন ছোট উপন্যাস ‘ভারতী’ নামক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। 6 বছর পরে যমুনা নামক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘বিন্দুর ছেলে’ , ‘পরিণীতা’, ‘বিরাজ বৌ’, ও ‘চরিত্রহীন’, উপন্যাসের এক অংশ সাধারণ মানুষ শরৎচন্দ্রকে ‘অপরাজেয় কথা শিল্পী’ বলে লোকমুখে প্রসিদ্ধ করেছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপন্যাস হল – পরিণীতা, ও বিরাজ বৌ(1914), পল্লী সমাজ, চন্দ্রনাথ, ও অরক্ষনীয়া,(1916), দত্তা (1918), গৃহদাহ (1920), দেনাপাওনা (1923), পথের দাবী (1926), শেষ প্রশ্ন (1932), এবং বিপ্রদাস (1935) প্রভৃতি। আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসে শরৎচন্দ্রের আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসের এক এবং অদ্বিতীয় হল ‘শ্রীকান্ত’। এই উপন্যাসের চারটি পর্ব লেখা হয়েছিল– 1917,  1918,  1927,  1933। 

এছাড়া তার একটি বিখ্যাত রাজনৈতিক উপন্যাস ‘পথের দাবী’। এই উপন্যাসটিতে সহিংস বিপ্লবকে শ্রদ্ধার সঙ্গে চিত্রিত করা হয়েছে। সামাজিক উপন্যাস রচনায় শরৎচন্দ্রের অবদান উল্লেখযোগ্য। তার অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ সামাজিক উপন্যাস ‘পল্লীসমাজ’ এ গ্রাম্য সমাজপতিদের হিংসা, বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা, সম্পত্তির জন্য লুলুপতা ইত্যাদি তুলে ধরেছেন।

শরৎচন্দ্রের উপন্যাস শুধু বাঙালি পাঠক সমাজে নয় অনুবাদের মাধ্যমেও তা সমগ্র ভারতবর্ষে এবং ভারতবর্ষের বাইরেও পরিচিত পেয়েছে। বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্রের অবদান বা কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তার কারণ বা তার উপন্যাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল প্রথমত, দেশ প্রেম ও অবহেলিত জনগণের প্রতি অকৃত্রিম অনুরাগই তাকে সাহিত্য সাধনায় অনুপ্রাণিত করেছিল। দ্বিতীয়তঃ বাঙালির দুঃখ দারিদ্র ও কর্ম বেদনাকে তিনি মূর্ত করে তুলেছিলেন চোখের জলে। প্রেমের মাধুর্য এবং জীবন দর্শনের গভীরতার পল্লী বাংলায় দারিদ্র ও কুসংস্কারের ফাঁসি কাঠে বলি প্রদত্ত বাঙালি জীবনের ছবি আঁকায় শরৎ উপন্যাসের সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল।

শরৎচন্দ্রের উপন্যাস হাস্যরসের জন্য বিখ্যাত। আমাদের দেশের কোন সাহিত্যিকই এই বিষয়ে তাহার সমকক্ষতা দাবি করতে পারেনি। তার সৃষ্টির একটি প্রধান গুন এই যে। তিনি উপহাসের বস্তুকে সমবেদনার রসে অভিষিক্ত করেছেন। এই সো গভীর সহানুভূতির জন্যই তার চরিত্র সৃষ্টি এত গভীর সরস ও বৈচিত্র্যময় হয়েছে।

শরৎচন্দ্রের গল্প ও উপন্যাস বহু ভারতীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এই অনুমাদের ফলে শরৎ সাহিত্য কেবল বাংলা সাহিত্যে সীমাবদ্ধ নয়, তা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের সাহিত্যে একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেছে।

উপসংহারে শরৎ সাহিত্যে একটি উপেক্ষিত দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল সেখানে বলা হয়েছে যে, – proletariat নামে সমাজের যে নিঃস্ব শ্রেণীর দাবির সমর্থনে সারা জগতে আজ কমিউনিস্ট অভিযান চলেছে। বাংলা তথা সাহিত্যে তাদের চিত্র শরৎচন্দ্রের গল্পে উপন্যাসেই প্রথম পায়।

কমিউনিস্ট মতের প্রবর্তক কাল মার্কসের communist manifesto যাদের নিঃস্ব শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করেছে শরৎচন্দ্রের নিঃস্ব সম্প্রদায়িক সম্বন্ধে ধারণা তার চেয়ে আরো ব্যাপক। ‘মহেশ’, ‘অভাগীর স্বর্গ’, প্রকৃতি গল্পে তিনি কাল মার্কস বর্ণিত নিঃস্ব সম্প্রদায়ের চিত্র এঁকেছেন। কিন্তু যে সকল নারী দেবাৎ কোন কারনে নৈতিক চরিত্রের আদর্শ হতে বিন্দুমাত্র ও ভ্রষ্ট হয়েছে বলে হিন্দু সমাজের স্থান পায়নি এবং বাংলা কথা সাহিত্যের সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের ও রোহিনীর ন্যায় যে শ্রেণীর নারীর মৃত্যু ছাড়া আর কোন পরিণতি কল্পনা করতে পারেননি। সেই শ্রেণীর সাবিত্রীকে তিনি এমনভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন যাতে আমাদের মনে এই কর্তব্যবোধ জেগে ওঠে যে প্রথম শ্রেণীর নিঃস্বের ন্যায় এই দ্বিতীয় শ্রেণীর নিঃস্ব ও মানুষের অধিকার দাবি করতে পারে। 

আনুষ্ঠানিকভাবে সতীত্বের মর্যাদা রক্ষা করলেই শুধু সেই কারণেই শরৎচন্দ্রের সতী গল্পের নায়িকা নির্মলা নারীর মহিমা ও মজাদার পূর্ণ অধিকার লাভ করে। কিন্তু দৈবাৎ মুহুর্তের ভ্রমে এই সতীত্বের আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র ভ্রষ্ট বলেই, বহুগুণ থাকা সত্ত্বেও সাবিত্রীর ন্যায় নারী সমাজে স্থান পায় না। এই অন্যায় বৈষম্যের ও অবিচারের নগ্নচিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরে অপূর্ব শিল্প কৌশল তিনি আমাদের বিবে ক ও মনুষ্যত্বকে শস্ত্র ও সংস্কারের কঠিন মোহ ও নিগড় বন্ধন থেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করেছেন।

মূল্যায়ন

শরৎচন্দ্র যুগের অনেক লব্ধ প্রতিষ্ঠা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের উপন্যাস কে ‘গণিকা সাহিত্য’ বলে নিন্দা করেছেন। প্রবাসী, সাহিত্য ও ভারত বর্ষ, প্রভৃতি প্রসিদ্ধ পত্রিকায় সম্পাদকরা শরৎচন্দ্রের ‘চরিত্রহীন’ উপন্যাস ছাপতে অস্বীকার করেন।

শরৎচন্দ্র প্রথম হিন্দু সমাজের নিঃস্ব শ্রেণীর প্রতি সকলকে কর্তব্যবোধকে জাগ্রত করার জন্য তিনি চেষ্টা করেছিলেন এইভাবে কথা সাহিত্যিক  শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *