সাফটা (SAFTA) গঠনের মূল উদ্দেশ্য কি ছিল।
ভূমিকা
Safta পুরো নাম South Asian Free Trade Area। SAFTA এর সাফল্য ২০০৪ সালে ৬ ই জানুয়ারি ইসলামাবাদের সার্কের দ্বাদশ সম্মেলনে সার্কের রাষ্ট্রগুলিকে South Asian Free Trade Area / SAFTA চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে উদ্বুদ্ধ করে। SAFTA স্থাপন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় মুক্ত অঞ্চল স্থাপনের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
উদ্দেশ্য
সাফটা গঠনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে চুক্তির ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে সার্ক দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা উদ্দেশ্যেই এই সাফটা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। Safta এর উদ্দেশ্য সম্পাদনের উপায় হিসাবে বলা হয়েছিল যে –
- বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার অপসারণ এবং সার্ক দেশগুলির মধ্যে মুক্ত পণ্য চলাচল। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান ও অবাধ বাণিজ্যের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন দ্বারা সাফটা দ্রুত কার্যকরী হবে।
- মুক্ত বাণিজ্যের জন্য সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং প্রতিটি রাষ্ট্রকে সমান সুযোগ সুবিধা দেওয়া। সার্কের অভ্যন্তরে স্বল্পোন্নত অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রদান করবে সাফটা।
- সাফটা চুক্তিকে কার্যকরী ও ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য এবং বিবাদ বিসম্বাদ মীমাংসার জন্য যথাযোগ্য প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা।
- এই চুক্তির সুফল যাতে প্রতিটি রাষ্ট্র সদস্য রাষ্ট্র পেতে পারে সেইজন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো সৃষ্টি করা।
- সার্ক সম্মেলনে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে বা সদস্য রাষ্ট্রগুলির সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ফলে গৃহীত নিয়ম অনুযায়ী সাফটা পরিচালিত হবে।
- সদস্য রাষ্ট্রের সার্বিক সমন্বয় ও সহযোগিতার ভিত্তিতে এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রে অর্থনেতিক উন্নয়নের মান অনুযায়ী সমান সুযোগ প্রদানের ভিত্তিতে সাফটা পরিচালিত করা।
- সাফটা পরিচালনার ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রগুলি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা বা অন্যান্য আর্ন্তজাতিক সংগঠনের নিয়ম-নীতির মধ্যেই কাজ করা।
- সার্ক রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অবাধ পণ্য চলাচল এবং শুল্ক ও অন্যান্য বিধিনিষেধ অপসারণের ভিত্তিতে সাফটা পরিচালিত করা।
![]() |
সাফটা (safta) |
চুক্তির ৩ নম্বর ধারায় সাফটা পরিচালনার মূল নীতিগুলিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে – চুক্তির ঘোষণাপত্রে মোট ২৫ টি ধারায় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হয়েছে ৭ নম্বর ধারায় বাণিজ্য উদারীকরণ কর্মসূচী রূপায়নের জন্য শুরু হ্রাস এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ অপসারণ, ১০ নম্বর ধারায় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরী, ১১ নম্বর ধারায় স্বল্পোন্নত অর্থনীতির জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান, ১২ নম্বর ধারায় মালদ্বীপের জন্য কিছু বিশেষ সুবিধা প্রদান।
১৬ নম্বর ধারায় চুক্তির নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়, ২০ নম্বর ধারায় বিরোধ মীমাংসা বিষয়ে আলোচনা, ২১ নম্বর ধারায় সাফটা চুক্তি থেকে সদস্য রাষ্ট্রের প্রত্যাহার করার অধিকার ও শর্ত, ২৪ নম্বর ধারায় সাফটা চুক্তি সংশোধনের পদ্ধতি, ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। চুক্তির ২২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে ২০০৬ সালের ১ লা জানুয়ারি থেকে সাফটা কার্যকরী হবে এবং সাপটা আর ব্যবহারযোগ্য থাকবে না।
সার্কের ইতিহাসে সাফটা স্বাক্ষর এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ- অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং বিশ্বায়নের যুগে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে আঞ্চলিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সংহতি ও ঐক্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী। এর দ্বারাই আঞ্চলিক বাণিজ্যের প্রসার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। অঞ্চলভিত্তিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে পারলে ব্যয়ভার কমে, বিদেশী মুদ্রার সাশ্রয় ঘটে। এই প্রেক্ষিতে বিচার করলে বলা চলে যে আসিয়ান বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ানের মত সাফটাও ভবিষ্যতে সার্কভুক্ত দেশগুলির কাছে আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে। সাফটার পাশাপাশি সার্ক ইউরোর আদলে আঞ্চলিক মুদ্রা এবং সার্ক কাস্টমস ইউনিয়ান গঠন করতে উদ্যোগী হয়েছে।