StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

বিশ্বের রক্ষক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার মূল্যায়ন কর

বিশ্বের রক্ষক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার মূল্যায়ন কর।

১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর ঠান্ডা যুদ্ধ এবং সেইসাথে দ্বিমেরু বিশ্বের ধারণার তথা বাস্তবের অবসান ঘটে। আর্ন্তজাতিক রাজনীতিতে দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। প্রথমত, একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করেছে ক্ষমতার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে যার পরিণতিতে এককেন্দ্রিক পৃথিবী অভিধাটি সমসাময়িক আর্ন্তজাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে সংযোজিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, অন্যদিকে বিশ্বায়নের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাষ্ট্রের অবসান, সীমানাহীন বিশ্ব, নয়া আঞ্চলিকতাবাদ ইত্যাদি ধারণাগুলিও হয়ে উঠেছে আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক সংক্রান্ত চিন্তাভাবনার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এই দুই আঙ্গিকে বিশ্বের রক্ষক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার মূল্যায়ন বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

অধ্যাপিকা অঞ্জনা ঘোষ মত প্রকাশ করেছেন যে ঠান্ডা যুদ্ধোত্তর আর্ন্তজাতিক সম্পর্কের চরিত্র ব্যাখ্যা করার জন্য অলিগার্কিক শব্দটির প্রয়োগ করা যেতে পারে। আশির দশকের শেষে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর আর্ন্তজাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহাবস্থানের যে প্রতিশ্রুতি বিশ্বের উন্নত দেশগুলির রাষ্ট্রনায়করা দিয়েছিলেন তা অচিরেই মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয় যখন দেখা যায় নব্বইর দশকের গোড়ায় পারস্য উপসাগরীয় সঙ্কটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমী জোট তাদের নিজেদের স্বার্থে আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক এবং সমস্যাগুলিকে নিয়ন্ত্রন করতে চাইছে।

১৯৯০ সালের মাঝামাঝি রূশ ও মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান গর্ভাচেভ বুশ শীর্ষ সম্মেলনে সরকারিভাবে ঠান্ডা লড়াই’র অবসান ঘোষিত হবার পরে যে জামানার সূত্রপাত হয়েছিল তার প্রাথমিক রূপকল্পটই একতরফাভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নির্মাণ করে দিয়েছিল, আমেরিকার কিছু ঘনিষ্ট সহযোগী রাষ্ট্র তাকে সমর্থন জানিয়েছিল। আন্তঃরাষ্ট্র ব্যবস্থার এই নতুন বিন্যাস পরে নয়া জামানা বা ‘New International Order’ নামে পরিচিত হয়। আমেরিকার এক সম্মেলন থেকে ১৯৯১ সালের জানুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে এই নতুন ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই সময় সাদ্দাম হোসেনের রাষ্ট্রপতিত্বে ইরাক পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ও আমেরিকার সহযোগী ক্যুয়েত আক্রমণ করেছিল এবং এই আগ্রাসনের জন্য ইরাকের শাস্তিবিধান যাতে তাড়াতাড়ি করা যায় সে জন্য আমেরিকা বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নামে আমেরিকাই বিপুল সমরসম্ভার নিয়ে ক্যুয়েতকে ইরাকি দখলমুক্ত করার জন্য ইরাক ভূখন্ডেই স্থায়ীভাবে সামরিক নজরদারি কায়েম করে।

United States of America
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ( United States of America )

পরবর্তী কালে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ তাঁর কল্পিত জামানার বর্ণনা দেন ‘a world with open borders and open mind’ বলে। অর্থাৎ বুশ কল্পিত জামানায় কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রন বলে কিছু থাকবে না, সীমান্ত মুক্ত রাখতে হবে যার অর্থ জাতি রাষ্ট্রের সার্বভৌম নিয়ন্ত্রন শিথিল হবে, যার ফলে অর্থনৈতিত উদারীকরণ এবং কালক্রমে বিশ্বায়ন কার্যকরী হয়ে উঠবে, এবং ‘যসনশ লভশধ’ এর প্রয়োগে অ-পশ্চিমী সব ধারণার অপমৃত্যু ঘটাতে হবে।

স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নিজ প্রয়োজনমত এবং স্বার্থমত বিশ্ব রাজনীতিকে ব্যবহার করার প্রকল্প তৈরী করে ফেলেছিল। গণতন্ত্রের পনরুজ্জীবনে কোন দেশকে কতটা সাহায্য করা হবে তা নির্ভর করবে মার্কিন জাতীয় স্বার্থের দিক থেকে দেশটির গুরুত্বের উপর। যেমন পূর্ব ইউরোপের রূশ নিয়ন্ত্রনমুক্ত দেশগুলি পুনরায় যাতে সাম্যবাদী ব্যবস্থায় না ফিরে যায় তার জন্য উক্ত দেশগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আবার ব্রহ্মদেশ, ফিলিপিন্স, নিকারাগুয়া বা পাকিস্তানে গণতন্ত্রের জন্য নাগরিকদের হতাশা মার্কিন প্রশাসনের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় কেন না আমেরিকার জাতীয় স্বার্থ তাতে বিশেষভাবে জড়িত নয়। মার্কিন মুলুকের রক্ষণশীল চিন্তাবিদ ইরভিঙ্গ ক্রিস্টোন মনে করেন “We should not pretend in our foreign policy statements that we can look forward in near future to democracy conquering the world’। অন্যদিকে স্ট্যানফোর্ডের উদারনীতিবিদ রবার্ট পেকেনহাম মন্তব্য করেছেন যে ‘The chances of the US advancing the cause of democracy through positive. action are even smaller’।

বিশ্বের রক্ষক ( Global Policeman ) হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ভূমিকা হলো আধুনিক পৃথিবীর মারণাস্ত্র নির্মাণের নিয়মবিধি। পরমাণু শক্তিধর বৃহৎ রাষ্ট্রগুলি কোন স্বতঃপ্রণোদদিত নিয়ন্ত্রণ নিজেদের উপর আরোপ না করলেও অন্যত্র পরমাণু অস্ত্র প্রসারের সম্ভাবনা কঠোরভাবে দমন করা হবে। লন্ডনে ১৯৯১ সালে ঋ-৭ রাষ্ট্রগুলির শীর্ষ বৈঠকে একথা জানিয়ে দেওয়া হয় (অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকার পোখরানে পরমাণু পরীক্ষা চালানোর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল)। প্রথমে Nuclear Non proliferation Treaty এবং অধুনা Comprehensive Test Ban Treaty কার্যকরী রাখার মার্কিন প্রয়াস লক্ষ্যণীয়।

উত্তর কোরিয়া ইউরেনিয়াম উৎপাদন করলে বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রপতি সেনেটের ভাষণে ইরাক ও ইরানের সঙ্গে উত্তর কোরিয়াকে ‘axis of evils’ অর্ন্তভুক্ত বলে অভিহিত করেন। জাতীয় সুরক্ষার অজুহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি যে নতুন নীতির কথা ঘোষণা করেছেন তার নাম ‘pre-emtive strike’ । ২০০১ সালের ১১ ই সেপ্টেম্বর ওয়ার্লড ট্রেড সেন্টারে ওসামা বিন লাদেনের অল কায়দার সন্ত্রাসবাদী হমলার পর আমেরিকা নির্বিচার ভাবে আফগানিস্থানে বোমাবর্ষণ করেছে। ওসামা এবং তার অল কায়দাকে ধ্বংস করার নামে কার্যত তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে কার্যত গণহত্যা চালানো হয় যাকে ‘counter terrorism’ বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত।

বর্তমান পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার অন্যতম আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসবাদ একমেরু বিশ্বে সন্ত্রাস খুঁজে বার করে তাকে দমন করা বিশ্বের রক্ষক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছা প্রণোদিত ভাবেই নিজ স্কন্ধে নিয়েছে, আসলে এর দ্বারা বিশ্বব্যাপী গোয়েন্দাগিরী করার একটি ভালো সুযোগ রয়েছে এবং প্রয়োজনভিত্তিক কথা না শুনে চলা রাষ্ট্রগুলিকে দমন করার সুযোগও রয়েছে। ঠান্ডা যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসানের ঠিক পরেই ১৯৯১ সালে ইরাকের ক্যুয়েত আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সহযোগী রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে সাদ্দাম হোসেন শাসিত ইরাক আক্রমণ করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা নিজেদের ইচ্ছামত চিহ্নিত অপরাধী রাষ্ট্র ইরাকের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নিতে পেরেছিল কেন না ঠান্ডা লড়াই উত্তরকালে জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমেরিকাকে আর আগের মত রূশ বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। অন্যভাবে বলা চলে যে একমেরু বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্মিলিত জাতিপুঞ্জকে একাই নিয়ন্ত্রন করে নিজ স্বার্থে সিদ্ধান্তকে তৈরী করে নিতে সক্ষম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরাকে অবৈধ হামলার সময় রাশিয়া এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন নিষ্ক্রীয় থেকেছে এবং নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।

বর্তমান পৃথিবীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রাধান্য এবং একাধিপত্য ঐ দেশের বিশ্বব্যাপী খবরদারীর প্রধান কারণ। জাতীয় আয়ের ৩.১% অর্থাৎ প্রায় ৩৭০০ কোটি ডলার প্রতি বছরে আমেরিকা সামরিক খাতে ব্যয় করে যার কাছাকাছি বিশ্বের কোন দেশ পৌঁছতে পারেনা। এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আমেরিকার সামরিক ঘাটির উপস্থিতি, উন্নত শিল্প ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সারা পৃথিবী থেকে মেধাসম্পদ আকর্ষণের ক্ষমতা, বিশ্বের প্রায় সকল প্রান্তেই গোপন সংবাদ সংগ্রহের ব্যবস্থা, আর্ন্তজাতিক মুদ্রাভান্ডার এবং বিশ্বব্যাংকের মত আর্থিক সংস্থাগুলিতে বৃহত্তম অংশীদারী থাকার সুবিধা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে।

উপরিউক্ত কতৃত্ব নির্ধারক জায়গাগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রতিযোগী বা বিকল্প দাবিদার এখনো নেই, ফলে আর্ন্তজাতিক রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে “hegemony” প্রতিষ্ঠা এবং নিজেকে “Super Power” হিসাবে প্রতিস্থাপন করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন অসুবিধা হয় নি। দুর্ভিক্ষ পীড়িত সোমালিয়ার উপজাতি সংঘর্ষে, ইরাকে, আফগানিস্তানে, অধুনা আবার ইরাকে, ইরানে এবং উত্তর করিয়ায় তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উক্ত রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্বকে তোয়াক্কা না করে সন্ত্রাস দমনের নামে আক্রমণ চালাতে কুণ্ঠিত হয় নি।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *