ভারতে সন্ত্রাস দমনে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ?
ভারত সরকারকে সন্ত্রাস দমনে, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইন গ্রহণ করতে হয়েছে এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মহারাষ্ট্রের মত সন্ত্রাসপ্রবণ রাজ্যগুলিতে গড়ে তোলা হয়েছে অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড, কেন্দ্র তৈরী করেছে ন্যাশানাল সিকিউরিটি গার্ড বা এন এস জি কম্যান্ডো বাহিনী (যাদের কাজ সন্ত্রাসবাদী হামলায় জরুরী ভিত্তিতে কাজ করা, যেমন মুম্বাই’র ঘটনায় আমরা তাদের ক্রিয়াশীল হতে দেখি) ইন্টালিজেন্স ব্যুরো (যারা ভারতের মধ্যে গুপ্তচরের কাজ করে), রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালেটিক্যাল উইঙ্গ (যারা ভারতের বাইরে খবর সংগ্রহ করে), ডিফেন্স ইন্টালিজেন্স এজেন্সি (যারা কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড প্রভৃতি স্থানে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকে এবং খবর সংগ্রহ করে) স্পেশাল টাস্ক ফোর্স, ইত্যাদি।
মুম্বাই ঘটনার পর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এন এস জি হাব গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, সাময়িকভাবে রেলস্টেশন, বিমানবন্দরে নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, শিল্প প্রভঋতিকে রক্ষা করার জন্য তৈরী হয়েছে, সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স বা সি আই এস এফ। প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জীবন রক্ষার্থে তৈরী করা হয়েছে স্পেশাল প্রোটেকশান গ্রুপ। এছাড়াও রয়েছে সেন্ট্রাল রিসার্ভ পুলিশ ফোর্স, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স এবং সর্বোপরি ভারতীয় সেনাবহিনীর তিনটি বিভাগ। বস্তুতপক্ষে সন্ত্রাস দমনে ভারতীয় সেনাবাহিনী মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করছে।
ভারতে সন্ত্রাস দমনে অন্যতম পদক্ষেপ খুব সাম্প্রতিক কালে সেন্ট্রাল ইনভেষ্টিগেশন এজেন্সির ধাচে ইন্টালিজেন্স ব্যুরোর অধীনে একটি বিশেষ বিভাগ খোলা হয়েছে যেখানে আই বি ছাড়াও বিভিন্ন এজেন্সির অফিসাররা নিয়োজিত হয়েছেন। বিভিন্ন গোষ্ঠীর, বিশেষতঃ পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর মানুষদের অসন্তোষের অনুসন্ধান করা এবং তা সরকারকে জানানো, সৎ মানবিক এবং প্রতিরোধমূলক গুপ্তচরবৃত্তি বা গোয়েন্দাগিরি, প্রযুক্তিগত উন্নতিকে কাজে লাগিয়ে খবর সংগ্রহ, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি সম্পর্কে যথাযথ এবং সঠিক ধারণা গড়ে তোলা এবং সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের উৎসকে নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়েই সরকার এবং তার উপরোক্ত সংস্থাগুলি মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পাঞ্জাব, নাগাল্যান্ড, মণিপুর প্রভৃতি রাজ্যে এর ফলে এখন অনেকাংশে শান্তি ফিরে এসেছিল।
![]() |
ভারতে সন্ত্রাস দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপ |
সন্ত্রাস দমনে ভারতকে আরও একটি বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে- দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মাটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি অবাধে ব্যবহার করছে, বহু ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং গুপ্তচর বিভাগ ইন্টার সারভিসেস ইন্টালিজেন্স প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করছে বা মদত দিচ্ছে। গত চল্লিশ বছরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের ফলে আনুমানিক ৪০০০০ সাধরাণ মানুষ এবং ৩৫০০ নিরাপত্তাকর্মী মারা গেছেন।
সাম্প্রতিক কালে মুম্বাই ঘটনার পর ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে নিয়ে পাকিস্তানের উপর আর্ন্তজাতিক চাপ বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হয়েছে, বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামাও পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসবাদীদের দৌরাত্মে গভীর দুঃশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন। সন্ত্রাসবাদকে মোকাবিলা করার জন্য ভারতের বিদেশ দপ্তরকে আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের উপর এই কূটনৈতিক চাপকে ধারাবাহিকভাবে বজায় রাখতে হবে, প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ।
মূল্যায়ন
তবে সন্ত্রাস দমনে ভারতের পদক্ষেপ কতটা মোকাবিলা করতে পারবে তা নিয়ে সাধারণ মানুষ এমনকি রাজনৈতিক নেতা এবং নিরাপত্তাকর্মীদের মনে সন্দেহ রয়েছে। সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য প্রাথমিক প্রয়োজন সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটিগুলিকে নির্মূল করা এবং সন্ত্রাসের উৎপত্তির কারণগুলিকে খুঁজে বের করে তার মোকাবিলা করা। এন ডি এ সরকার থাকাকালীন এল কে আডবানি প্রো অ্যাক্টিভ কার্যকলাপের কথা বলেছিলেন, এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদাম্বরম জিরো টলারেন্সের কথা বলছেন কিন্তু বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জনহিতকর কাজের ফল সঠিকভাবে যদি পিছিয়ে পড়া এলাকার পিছিয়ে পড়া মানুষের কাছে পৌঁছায় তবেই সন্ত্রাসের উৎসকে ধ্বংস করা সম্ভব বলেই মনে হয়।