মৌর্য যুগের রাজস্ব ব্যবস্থা
Q – মৌর্য যুগের রাজস্ব ব্যবস্থা অথবা, মৌর্য যুগের রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।
মৌর্য যুগের রাজস্ব ব্যবস্থা প্রধান দায়িত্ব অর্পিত ছিল সংগ্রাহক এর ওপর। আর রাজকোষ তথা প্রধান হিসাবরক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন সন্নিধাতা। অর্থশাস্ত্র থেকে চার ধরনের রাজস্ব বা করের কথা জানা যায়। এগুলি হল –
- সীতা
- ভাগ
- বলি ও
- কর
সীতা জমিতে নিয়োজিত কৃষক বা কৃষি শ্রমিকদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থকে বলা হত সীতা কর। মৌর্য যুগের রাজস্ব প্রধানত আসত কৃষকের মালিকানাধীন জমি বা রাষ্ট্রীয় জমি থেকে। এই রাজস্ব বা করকে বলা হয় ‘ভাগ’। অর্থশাস্ত্র ছাড়াও মৌর্য ও মৌর্যোত্তর যুগের বিভিন্ন লেখ-তাম্রশাসনে ‘ভাগ’ শব্দটির উল্লেখ আছে। ‘ভাগ’-এর পরিমাণ ছিল খুব সম্ভবত ফসলের এক-ষষ্ঠাংশ। কোনো বিশেষ কারণে এই করের পরিমাণ হ্রাস করা হত। এছাড়া, বলি ও কর নামে দু’ধরনের রাজস্ব মৌর্য যুগে বহাল ছিল।
![]() |
রাজস্ব ব্যবস্থা |
অর্থশাস্ত্রে সীতা জমিতে নিযুক্ত কৃষি শ্রমিকদের কাছ থেকে ‘উদকভাগ’ (২.২৪.১৮) নামে এক ধরনের রাজস্ব আদায়ের কথা বলা হয়েছে। ‘উদকভাগ’ শব্দটি জলকরের সঙ্গে সমতুল্য। এখানে জলসেচের ধরন অনুপাতে জলকরের তারতম্যের বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে। বলা হয়েছে যে যদি কোনো কৃষক নিজ শ্রমের দ্বারা জমিতে জল বহন করে আনত তাহলে উৎপন্ন ফসলের এক-পঞ্চমাংশ ; নদী, হ্রদ, জলাশয় অথবা কুয়ো থেকে জল সংগ্রহ করলে এক-চতুর্থাংশ এবং যন্ত্রের সাহায্যে জল আনীত হলে এক-তৃতীয়াংশ কর প্রদান করতে হত।
জলকর ছাড়াও অন্যভাবে সীতা জমির কৃষকদের কর প্রদানের বিষয়টিকে অস্বীকার করা যায় না। সীতাধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে সীতাজমিতে কৃষক বা স্বাধীন মজুর বা ক্রীতদাসদের দ্বারা চাষ করানো হত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের তরফে বীজ, বলদ ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করা হত। আবার এমনও ঘটত যেখানে কৃষকরা নিজেরাই বলদ অথবা অন্যান্য বিভিন্ন উপকরণ যোগান দিত। স্বাভাবিকভাবেই সরকারি সহায়তা লাভের পরিপ্রেক্ষিতে সীতাজমির কৃষকদের পাওনা ও পক্ষান্তরে সরকারকে রাজস্ব প্রদানের পরিমাণ কম-বেশি হত। কখনও সরকার উৎপন্ন ফসলের পাঁচভাগের চার ভাগ আবার কোনো ক্ষেত্রে চারভাগের এক ভাগ পেত।
মৌর্য যুগে রাজস্ব কেবল ভূমি বা জমি থেকেই আসত তাই নয়, রাষ্ট্রের অন্যান্য বিভিন্ন দিক থেকেও মৌর্য রাজকোষে অর্থাগম হত। হাতি ও অন্যান্য বনজাত সম্পদ ছিল রাজকীয় সামরিক শক্তি তথ্য অর্থনীতির অন্যতম উৎস। বিভিন্ন দামী ও মূল্যবান গাছ যথা অর্জুন, শাল, শিরীষ, আম প্রভৃতির উল্লেখ আছে অর্থশাস্ত্রে । এগুলিও অর্থনীতির উৎস হিসাবে পরিগণিত। অর্থশাস্ত্রে খনি থেকে রাষ্ট্রের যে বিশাল পরিমাণ আয় হত তার বর্ণনা আছে। বস্তুত রাজকোষে একটা বড় ধরনের অর্থ আসত খনি থেকে।
‘সেনাভক্তম’ ও ‘উৎসঙ্গ’ নামে দু’ধরনের করের উল্লেখ পাওয়া যায় অর্থশাস্ত্রে। ‘সেনাভক্তম’ বলতে বোঝায় উন্নত সেনাদের ভরণপোষণ ইত্যাদির জন্য কর এবং ‘উৎসর্গ’ হল রাজপুত্রের জন্মজনিত উপঢৌকন। এই দু’টিই ছিল সাময়িক কর। বিভিন্ন ধরনের কারিগর, শিল্পী, গিল্ডের সদস্যগণ, এমনকি গণিকাদেরও কর দিতে হত। গোচারণ ভূমি থেকেও কর আদায় করা হত। চুলিকর, ফেরিঘাট থেকে কর, গৃহকর, গুপ্তধন, বিচারালয়ের জরিমানা জনিত অর্থ—সব কিছুই রাজকোষে জমা হত। রাষ্ট্রীয় ঋণ জনিত যে সুদ পাওয়া যেত তাও কোষাগারেই আসত। এসব কিছু ছাড়াও আপৎকালীন সময়ে বা জরুরি অবস্থায় অর্থনৈতিক সংকটের আশু সমাধানের জন্য রাজস্ব আদায়ের কথা অর্থশাস্ত্রে আছে।