গিয়াসউদ্দিন বলবনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর অথবা, দিল্লি সালতানাত সুদৃঢ়করণে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
২২ বছর স্থায়ী গিয়াসউদ্দিন বলবনের রাজত্ব কাল সুলতানি সাম্রাজ্যের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। দীনাবস্তা থেকে ক্ষমতা ও খ্যাতির শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছেই বলবন কর্ম তৎপরতা নিশেষ হয়ে যায়নি। তার সমস্ত ব্যক্তিত্ব, দক্ষতা, অধ্যবসায় নিয়োজিত হয়েছিল প্রশাসনের মনোন্নয়নে সুলতানি শক্তিকে অপ্রতিহত করার কাজে।
সাম্রাজ্যের সংহতির পক্ষে বিপজ্জনক অভিজাতদের বিরুদ্ধে কঠোর ও বলিষ্ঠ নীতি বলবন সুলতানি সাম্রাজ্যের বুনিয়াদি সুদৃঢ় করে তোলেন। মঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম বিদ্রোহ দমনে দৃঢ়চিত্ত, উপজাতিগুলির উপদ্রবনাশে স্থির প্রতিজ্ঞ এই সুলতান নিঃসন্দেহে সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিধান ও অবিক্রিত সুশাসন প্রবর্তনে সফল হয়েছিলেন সাম্রাজ্যের অতি সম্প্রসারণ নয়। তার অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি করে বলবন পরবর্তীকালের খিলজী সাম্রাজ্যবাদের সংহতি লাভের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছিলেন।
![]() |
গিয়াসউদ্দিন বলবন |
গিয়াসউদ্দিন বলবনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন ক্ষেত্রে সামরিক সমস্যাগুলির সৃষ্ট সমাধানের উপর গুরুত্ব দেওয়া বাঞ্ছনীয়। রাজশক্তিকে অপ্রতিদ্বন্ধে করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে তার মহিমা বৃদ্ধি ও যে অত্যাবশ্যক, সে বিষয়ে বলবনের সচেতনতা ছিল প্রখর। পারস্যের প্রখ্যাত শাসকদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দরবারে জাঁকজমক বৃদ্ধি ও পারসিক আচার অনুষ্ঠান প্রবর্তন করেন। এভাবে রাজশক্তি সম্পর্কে প্রজাদের সক্ষম ও শ্রদ্ধা বৃদ্ধির তিনি চেষ্টা করেছিলেন।
বলবনের বদান্যতার সশ ছিল দূর বিস্তৃত। মধ্য এশিয়ার কমপক্ষে ৫০ জন ভাগ্য বিড়ম্বিত রাজপুত্রের আশ্রয় মিলে ছিল তার রাজসভায় বিখ্যাত কবি আমির খসরু ছিলেন তার পৃষ্ঠপোষকতা ধন্য। রাজকীয় মর্যাদা সম্পর্কে বলবেনর ধারণা ছিল। খুব উঁচু দরবারী পোষাকে ভূষিত ছাড়া তাকে প্রায় কখনোই দেখা যেত না। অভিজাত্যের প্রতি দুর্বলতা থাকায় তিনি অম অভিজাতনে দায়িত্বপূর্ণ পদ থেকে অপসারিত করতেও দ্বিধা করতেন না। তবে আইনের সমতার প্রতি তার বিশেষ নজর ছিল এবং এ ব্যাপারে তিনি কোন ভেদাভেদ করবেন না।
জনসাধারণ মঙ্গলের জন্য তিনি এমনই সজাগ ছিলেন যে প্রভাবশালী ব্যাক্তিদোষী সাব্যস্ত হলে কঠোর শাস্তি পেতেন। অসহায়ের প্রতি তিনি ছিলেন সদা তৎপর। দেশের সমস্ত গৌরব যে জনসাধারণের সুখ সমৃদ্ধির উপর নির্ভর করে এ বিশ্বাস থেকে তাকে কখনো সরে আসতে দেখা যায়নি। অর্জিত সাফল্য গুলিকে দীর্ঘস্থায়ী করে সাম্রাজ্যের সংহতি রক্ষা করে অসামান্য প্রতিভা সম্পন্ন না হয়েও বলবন মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটা সম্মানের আসন পেয়েছেন।