আর্যসত্য সম্পর্কে টিকা লেখ।
গৌতম বুদ্ধ ছিলেন একজন বাস্তববাদী সংস্কারক। কর্মফলবাদে বিশ্বাসী বুদ্ধদেব বিশ্বাস করতেন যে প্রত্যেক মানুষের জীবনে দুঃখ অপরিহার্য। যেহেতু মানুষ বারে বারে জন্মগ্রহণ করে এবং জন্মগ্রহণের সূত্র ধরে তাকে নানা কর্ম করতে হয়, সেহেতু কর্মের ফলও সে ভোগ করতে বাধ্য।
তিনি এই ধারণায় উপনীত হয়েছিলেন যে কর্ম থেকেই মানুষের আকাঙ্ক্ষা, আসক্তি, দুঃখ প্রভৃতি এসে থাকে। তাঁর ধর্মের তাই মূল উদ্দেশ্য ছিল দুঃখের হাত থেকে মানুষকে মুক্ত করা।
![]() |
four noble truths of buddhism |
দুঃখের উৎস ও তা থেকে মুক্তিলাভের জন্য চারটি মহান সত্য Four Noble Truths-র তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। এগুলি ‘আর্যসত্য‘ নামে সর্বাধিক পরিচিত। এই চারটি আর্যসত্য হল-
- এ পৃথিবী দুঃখময় : প্রথম আর্যসত্যের তাৎপর্য হল জীবনটা অসন্তোষজনক। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, প্রচুর আনন্দদায়ক সময় থাকে। কিন্তু সেগুলি কখনও দীর্ঘস্থায়ী হয় না এবং এরই মধ্যে রয়েছে দুঃখ- রোগ, হতাশা, একাকীত্ব এবং অসন্তুষ্টি।
- সমুদয়: মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও কামনা-বাসনা থেকেই সৃষ্টি হয় দুঃখ । বুদ্ধ আমাদের নিজেদের চিত্তকে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যে সমাজে বাস করি, সেটি সমস্যাগুলি উৎপন্ন হওয়ার জন্য প্রত্যয়রুপে কাজ করে। আমাদের নিজস্ব দ্বেষ, ঈর্ষা, লোভ ইত্যাদি- আমাদের বাধ্য করিয়ে চিন্তা-ভাবনা, কথা বলা এবং কাজ করার জন্য পরিচালনা করে যা সর্বশেষে আমরা স্বয়ং ধ্বংস হওয়ার পথে এগিয়ে যাই।
- নিরোধ: আকাঙ্ক্ষা ও কামনা বাসনাকে নিবৃত্ত করতে পারলেই মুক্তিলাভ সম্ভব। তিনি বলেছেন যে আমরা সম্পূর্ণভাবে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হওয়াকে বন্ধ করতে পারি। আমরা যদি বাস্তব বিষয়ে বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত হয়ে যাই, তাহলে সমস্যাগুলি কখনও আর ফিরে আসতে পারবে না।
- মার্গ: কামনা- বাসনা ও আকাঙ্ক্ষা দূর করে মুক্তি পেতে গেলে একটা নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করতে হবে। জীবনের ক্ষুদ্র দৃষ্টিকোণের উপর কেন্দ্রীভূত হওয়ার পরিবর্তে বৃহত্তর চিত্রের দিকে দেখা। অদূরদর্শীভাবে লাফা-লাফি করার পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করার কথা বলেছেন বুদ্ধদেব।
তিনি আরও বলেছেন যে দুঃখের হাত থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য যে পথ বা মার্গ অনুসরণ করা প্রয়োজন, তার আটটি দিক আছে। আটটি দিক সমন্বিত এই মার্গ ‘অষ্টাঙ্গিক মার্গ‘ নামে সুপরিচিত। অষ্টাঙ্গিক মার্গ গুলি হল- সৎ বাক্য, সৎ কার্য, সৎ জীবিকা, সৎ চেষ্টা, সৎ চিন্তা, সৎ চেতনা, সৎ সংকল্প ও সৎ দৃষ্টি। এই সবগুলির সমন্বিত রূপ ‘মধ্যপন্থা বা Middle path‘ বলে চিহ্নিত হয়ে থাকে।
মূল্যায়ন:
সুতরাং, ‘আর্যসত্য’ হল এই যে দুঃখময় পৃথিবীতে দুঃখের হাত থেকে মুক্তি পেতে গেলে মানুষকে একটা নির্দিষ্ট পথ বা ছক অনুযায়ী চলতে হবে। নতুবা দুঃখভোগ অবশ্যম্ভাবী।
FAQ (Frequently Asked Questions)
চতুরার্য সত্য চারটি, যথা – 1) জগতে দুঃখ আছে, 2) কামনা, বাসনা, আসক্তি দুঃখের কারণ, 3) কামনা, বাসনার অবসান ঘটলে দুঃখের অবসান ঘটে, 4) দুঃখের অবসানের জন্য ‘অষ্টাঙ্গিক মার্গ’ অনুসরণ করা উচিত। অষ্টাঙ্গিক মার্গ আটটি যথা – সৎ বাক্য, সৎ কার্য, সৎ জীবিকা, সৎ চেষ্টা, সৎ চিন্তা, সৎ চেতনা, সৎ সংকল্প ও সৎ দৃষ্টি। গৌতম বুদ্ধ মধ্যপন্থার কথা বলেছিলেন।চতুরার্য সত্য কয়টি ও কী কী
অষ্টাঙ্গিক মার্গ কয়টি ও কি কি?
মধ্যপন্থার কথা কে বলেছিলেন