StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

কেমন হতে হবে একজন ইতিহাস গবেষককে ?

কেমন হতে হবে একজন ইতিহাস গবেষককে?

অন্য যে কোনো বিষয়ের মতো ইতিহাসেও গবেষণার কাজ বেশ কঠিন এবং এই কাজ গবেষকের বহুমুখী ক্ষমতা বা দক্ষতার পরীক্ষা নিয়ে থাকে। যে কোনো পেশার মানুষ যার মধ্যে ইতিহাসকে ভালোবাসার ও অতীতকে দেখার এবং বোঝার মতো মননশীলতা রয়েছে তিনিই ইতিহাসমূলক গবেষণার কাজে ব্রতী হতে পারেন।

ইতিহাস গবেষক
ইতিহাস গবেষক

কোমতে এবং ভারতের দামোদর ধর্মানন্দ কোসাম্বী গণিতের আধ্যাপক হয়েও তাঁদের গবেষণারধর্মী কাজের মধ্যে দিয়ে স্বনামধন্য ঐতিহাসিক, হেগেল একজন দার্শনিক হয়েও ঐতিহাসিক রূপে বিখ্যাত আর ক্রোসে মন্ত্রীর ভূমিকা পালন করে ভালোবেসে ইতিহাস লিখে খ্যাত হন। সুতরাং বোঝাই যায় যে বিশেষ কিছু গুণ থাকলে তবেই ইতিহাসে গবেষণাধর্মী কাজ করা যায়।

কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা যার মধ্যে দিয়ে নানা স্থানে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ ইতিহাস গবেষকের কাছে প্রথম চাহিদা। ঘরে বসে আর্মচেয়ারে বা ইজি চেয়ারে বসে ইতিহাসের গবেষণা করা কঠিন, আজকের তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের পরেও তা কঠিন। প্রয়োজনে দেশ বিদেশের মহাফেজখানা, সংগ্রহশালা ও প্রত্নস্থল ঘুরে গবেষণার তথ্য সংগ্রহে ঐতিহাসিককে যৎপরনাই পরিশ্রম করতে হয়।

ইতিহাস গবেষককে নৈতিকতা ও বৌদ্ধিক সততা থাকতে হবে। নৈতিকতা না থাকলে গবেষককে ভুল তথ্য তুলে ধরতে পারেন যেমন বিখ্যাত ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ফ্রাউদে অ্যাডিলেড নগরের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন যে সেখানে দেড় লক্ষ লোকের বসবাস যখন প্রকৃত জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৭৫ হাজার। তিনি এও লিখেছিলেন যে নগরের পাশ দিয়ে নদী বয়ে যাচ্ছে কিন্তু আসলে নগরের নিকটে কোন নদীর অস্তিত্ব নেই। পেশাগত নৈতিকতা না থাকলে একজন গবেষক এরূপ ‘ Froude’s disease ‘ বা ‘ Chronic inaccuracy‘ দোষে দুষ্ট হবেন এবং তাঁর গবেষণা ভালো কাজের মর্যাদা পাবে না।

একজন ইতিহাস গবেষককে ধৈর্যশীল হতে হবে। এমন হতেই পারে দীর্ঘ সময় ব্যায় ও পরিশ্রম করেই কাঙ্খিত তথ্য আরোহন করা সম্ভব হল না, তখন তাড়াহুরো করলে কাজের গুণগত মান খারাপ হবে- এইসকল ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে তথ্য সংগ্রহ করা এবং তাকে যাচাই করা গবেষকের আশু কর্তব্য। প্রচুর সময় ব্যয় করে গিব্বন তাঁর রোমের ইতিহাস লিখেছিলেন যে কাজ আজও ঐতিহাসিক কহলে সমান সমাদৃত।

ইতিহাসের গবেষণা বি. এ বা এম এ কোর্সের মতো কোনো সময় নির্দিষ্ট কাজ নয় এখানে প্রধান বিচার্য হল কাজের গুণগত মান ও অভ্রান্ততা। দ্রুতগতিতে বিষয়ের – গভীরে না ঢুকে উপর উপর কাজ করে চমকে দেওয়ার প্রবণতা যদি থাকে তাহলে সেই গবেষকের পক্ষে ভালো কাজ করা সম্ভব নয়। একজন প্রকৃত ইতিহাসবিদকে খুব কঠিন পথ অতিক্রম করতে হয় – ঘটনাকে কেবল দেখলে হয় না তাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ বা অনলোকন করতে হয়, কেবল পর্যবেক্ষণ করলেও হয় না, তারপর তাকে বুঝতে বা অনুধাবন করতে হয়, অনুধাবনের পরেও তাকে বিশ্লেষণ করতে হয় এবং বিশ্লেষণের পর প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হয়। বলা বাহুল্য এই কাজ সময়সাপেক্ষ। 

একজন গবেষকের বৌদ্ধিক দিকটিও গবেষণার ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরী। অতীতের অনুসন্ধানে তথ্যের স্বল্পতা এবং তথ্যের আপাত বিরোধিতাকে অতিক্রম করে তার মধ্যে থেকে যথার্থ সত্য অনুধাবন করতে হলে গবেষককে একজন ডিটেকটিভ বা সত্যান্বেষীর মতো অন্বেষণ করতে হয়। এর জন্য দরকার একটি স্বচ্ছ ও পরিষ্কার মন এবং বুদ্ধি যা তাকে প্ৰকল্প নির্মাণ থেকে অনুমান থেকে তথ্য বিশ্লেষণ ও সমন্বয়সাধন সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

গবেষণামূলক কাজ করতে গিয়ে একজন গবেষককে নানান সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়-এর মধ্যে কিছু প্রকৃত সমালোচনা আবার কিছু অপ্রাসঙ্গিক সমালোচনা। অনেকেই আছেন যাদের স্বভাব যে কোনো কাজের খুঁত খুঁকে বের করা বা ছিদ্রান্বেষণ। এর ফলে বহু ক্ষেত্রেই গবেষক, বিশেষত তরুণ এবং অনভিজ্ঞ গবেষক নার্ভাস হয়ে পথভ্রষ্ট হতে পারেন। ফলে গবেঢ়ককে মানসিক দিক দিয়ে শক্তিশালী এবং সাহসী হতে হবে।

উপরোক্ত গুণাবলী নিয়ে একজন গবেষক অতীতের সত্যান্বেষণের কাজে ব্রতী হবেন। সেখানে তাকে নানা পর্যায়ে নানা বৈচিত্রপূর্ণ কাজ করতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *