জগৎ শেঠের বাড়ির ইতিহাস।
মারওয়াড়ের মরুশহর নাগৌর থেকে শাহজাহানের সময়কালে পাটনায় ব্যবসা করতে এসেছিলেন জনৈক হীরানন্দ শাহ – ইনি জাতিতে ওসওয়াল, জৈনধর্মালম্বী ছিলেন । হীরানন্দের পুত্র মহাজন শেঠ মানিকচাঁদ জগৎ শেঠ পরিবারের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা, তিনি মুর্শিদকুলির সময়কালে মুর্শিদাবাদে আসেন এবং পাটনা, ঢাকা, মুর্শিদাবাদ, বানারস, এলাহাবাদ, কোরা, জাহানাবাদ, দিল্লী, আগ্রা সহ নানা স্থানে তাদের ব্যবসা প্রসারিত হয়।
কিশোর কুমারীর সঙ্গে বিবাহের পর থেকে মানিকচাঁদের ভাগ্য আরও খুলতে থাকে, স্বামীর মৃত্যুর পর ২৬ বছর ধরে কিশোর কুমারী মানিক দেবী নামে খ্যাত হয়ে কারবার সামলেছিলেন। শ্রীনিহাল চন্দ্র মুনির গুজরাটী কবিতা এবং শেঠ পরিবারে রক্ষিত একটি হিন্দি পুঁথি থেকে জগৎ শেঠের বাড়ির ইতিহাস জানা যায়।
![]() |
জগৎ শেঠ |
মুঘল সম্রাট ফারুখশিয়র মানিকচাঁদকে শেঠ উপাধি দিয়েছিলেন। পরে ১৭২২-২৩ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীতে টাকার বা মুদ্রার সংকট কাটানোর জন্য মুঘল সম্রাট মুহম্মদ শাহ, মানিকচাঁদের পুত্র ফতেহচন্দ বা ফতেহচাঁদকে জগৎ শেঠ (জগতের পতি) উপাধি দেন – এই ফরমানে বলা হয় যে উপাধিটি শেঠ পরিবার বংশানিক্রমিকভাবে ব্যবহার করবে।
পরবর্তীকালে রচিত উইলিয়াম উইলসন হান্টারের ‘A Statistical Account of Bengal’ থেকে জানা যায় যে বাংলার নবাবের হুকুমে সুবার জমিদারগণ জগৎ শেঠের কাছ থেকে খাজনা মেটানোর জন্য টাকার পাট নিতেন যা কার্যত বর্তমান কালের ড্রাফটের সমতুল। এর বিনিময়ে শেঠ ১০% হারে পাটওয়ান বা কমিশন পেতেন – এইভাবে শেঠদের কুঠি নবাবের খাজাঞ্চীখানায় পরিণত হয়। তদোপরি মুর্শিদকুলির সময়কালেই দারোগা রঘুনন্দনের মৃত্যুর পর জগৎশেঠ ফতেহচাঁদ নবাবি টাঁকশালগুলির উপর নিয়ন্ত্রন কায়েম করে।
অষ্টাদশ শতকের এই সময় বিদেশী বণিক কোম্পানীগুলি তাদের সোনা ও রূপোর বাট বা বুলিয়ন জগৎ শেঠের কাছে বিক্রী করতে বাধ্য ছিল সেই ধাতব বাটগুলিতে ছাপ দিয়ে সেগুলিকে বাজারে প্রচলিত সিক্কা টাকায় পরিণত করে এবং পুরো মে বাজারে ছেড়ে শেঠদের প্রচুর আর্থিক লাভ হয়। এছাড়াও বিদেশী বণিক কোম্পানী এবং ব্যক্তিগত ব্যবসায় লিপ্ত তুরানী, আরমানী, ইংরেজ, ওলন্দাজ, ফরাসী সহ দেশীয় বণিককূল জগৎশেঠদের কাছ থেকেই ব্যবসার জন্য ঋন নিত।
মহাজনী কারবারে সুদের হার ১৭৪০ সাল পর্যন্ত ছিল ১২% তার পর তা কমে হয় ৯%। সিরাজউদ্দৌলার সমসাময়িক ফতেহচাঁদের দুই নাতি (তার পুত্র আনন্দচাঁদ আগে মারা যান) জগৎশেঠ মহতব রায় ও মহারাজ স্বরূপচন্দ দিল্লীর মুঘল দরবারে সমান তাদের উত্তরসূরীদের মতোই সমান প্রভাবশালী ছিলেন। মুর্শিদাবাদে অবস্থানকারী ব্রিটিশ আধিকারিক তথা দূত লিউক স্ক্র্যাফটন প্রদত্ত হিসাব অনুসারে ১৭৫৭ সালের অব্যবহিত পরে জগৎ শেঠদের ব্যবসায়িক আয় ছিল আনুমানিক ৪৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। গবেষক তথা ঐতিহাসিক রজত কান্ত রায়ের অনুমান এই সময় তাদের মূলধন আনুমানিক ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা।
FAQ (Frequently Asked Questions)
জগৎ শেঠ নামে কে পরিচিত?
মানিকচাঁদের পুত্র ফতেহচন্দ বা ফতেহচাঁদ প্রথম ‘জগৎ শেঠ’ নামে পরিচিত হন।
জগৎ শেঠের প্রকৃত নাম কি
জগৎ শেঠের প্রকৃত নাম ফতেহচন্দ বা ফতেহচাঁদ।
জগৎ শেঠ পরিবার কে প্রতিষ্ঠা করেন?
জগৎ শেঠ পরিবার প্রতিষ্ঠা করেন হীরানন্দের পুত্র মহাজন শেঠ মানিকচাঁদ।
জগৎ শেঠ শব্দের অর্থ কি?
‘জগৎ’ শব্দের অর্থ বিশ্ব এবং ‘শেঠ’ শব্দের অর্থ ব্যাংকার। ‘জগৎ শেঠ’-এর অর্থ ‘বিশ্ব ব্যাংকার’ বা ‘জগতের পতি’।
জগৎ শেঠের কত টাকা ছিল?
লিউক স্ক্র্যাফটন প্রদত্ত হিসাব অনুসারে ১৭৫৭ সালের অব্যবহিত পরে জগৎ শেঠদের ব্যবসায়িক আয় ছিল আনুমানিক ৪৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। ঐতিহাসিক রজত কান্ত রায়ের অনুমান এই সময় তাদের মূলধন আনুমানিক ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা।