StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ঋক বৈদিক যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা

ঋক বৈদিক যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো / পর্যালোচনা কর অথবা, ঋক বৈদিক যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল।

বৈদিক সাহিত্য ভান্ডার মূলত ধর্মীয় গ্রন্থ হলেও ঋক বৈদিক যুগের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায় উক্ত উপাদান থেকে। বিভিন্ন প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বিষয়ের উল্লেখ বৈদিক সাহিত্য গুলিতে স্থান পেয়েছে। ঋগ্বেদে পশুপালন ও কৃষিকর্ম দুই-ই উল্লেখিত কিন্তু পশু পালন বিষয়ে উল্লেখ ও পরিচিতি কৃষির তুলনায় বেশি। আর্যদের প্রধান জীবিকা, গোসম্পদ প্রধান ধনী সম্বল। গোসম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে আর্যরা প্রার্থনা করত। মূল্যের একক ও বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ‘গোময়’ ব্যবহার ছিল। ব্যক্তি বিশেষে সম্পদের মাপকাঠিও ছিল ‘গোধন’। পুরাতাত্ত্বিক সাক্ষ্য প্রমাণ ও প্রধান পশুচারণ গবাদি সম্পদের ব্যাপক প্রচলনের ইঙ্গিত দেয়। একই সঙ্গে সামরিক প্রয়োজনে অশ্ব পশমের যোগান দিত বলে ভেড়া বৈদিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

Economy-Vedic-Age
বৈদিক অর্থনীতিতে ভেড়ার প্রয়োগ

ঋকবেদে কৃষির তাৎপর্য পশুচারণের তুলনায় গৌণ হলেও, কৃষিকার্য একেবারে অপরিচিত ছিল না। বলাবাহুল্য পশুচারণ ও যাযাবরত্বের অধ্যায় শেষ করে কৃষিকেই তারা প্রধান বলে গ্রহণ করে এবং কৃষি ক্ষেত্র গুলিকে কেন্দ্র করেই গ্রামের পর্ব গ্রাম গড়ে উঠতে থাকে। ঋকবেদে আবাদি জমিকে ‘ক্ষেত্র’, লাঙলকে ‘সীর’, জমিতে লাঙলের রেখাকে ‘সীতা’, কৃত্তিম জলপ্রণালীকে ‘কুল্যা’, কাস্তকে ‘সৃবী’, বলা হয়েছে। এই সময় কৃষিকাজে লোহা ব্যবহার হতো কিনা সে বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। অনেকের মতে, লোহার কলাযুক্ত লাঙলের ব্যবহার কৃষির সম্প্রসারণ ঘটাতে সাহায্য করে। উত্তরপ্রদেশের অত্রঞ্জিখেড়ার (আনুমানিক ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) প্রাচীন লোহার নিদর্শন আবিষ্কৃত হওয়ায় ঋক বৈদিক যুগের শেষের দিকে আর্যদের লোহা ব্যবহারের সম্ভাবনা একেবারে বাতিল করা যায় না। 

ঋক বৈদিক যুগের অর্থনৈতিক অবস্থায় জমির মালিকানা বিষয়ে বিতর্ক আছে। ঐতিহাসিক ডি.ডি কোশাম্বী মতে, জমি-গোষ্ঠীর সম্পত্তি ছিল ব্যক্তি বা পরিবারের অধীনে ছিল না। অন্যদিকে হেমচন্দ্র রায় চৌধুরী ও উপেন্দ্রনাথ ঘোষাল মনে করেন, সে যুগে বাস্তু ও আবাদী জমি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ছিল, কিন্তু চারণ ভূমির ওপর ছিল গোষ্ঠী বা সর্বসাধারণের কর্তৃত্ব। কোন কোন ঐতিহাসিক এর মতে জমির মালিক ছিল গ্রাম সমাজ কিন্তু ক্রমশ উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলির বন্ধন শিথিল হয়ে যাওয়ার ফলে গ্রামের বিভিন্ন পরিবার গুলির মধ্যে বন্টিত হতে থাকে এবং পরিবার থেকে জমি ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়। উৎপন্ন ফসলের মধ্যে যবের ফলন নিয়মিত ছিল। সরাসরি গম উৎপাদনের উল্লেখ নেই, কিন্তু গম নামক শস্যবাচক শব্দটি পরিচিত ছিল। ঋকবেদে ‘ব্রীহি’ অর্থে কেবল ধান নয়, যে কোন ফসল বোঝানো হয়েছে। 

পশুচারণ প্রধান অর্থনীতিতে কারিগরি উৎপাদনের সম্ভাবনা অল্পই থাকে। ঋকবেদে ও তার ব্যাতিক্রম নয়। যে মুষ্টিমেয় কারিগরি উদ্যোগের কথা জানা যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘কারুশিল্প’। তক্ষক রথকার, কাঠুরিয়া, প্রভৃতির উল্লেখ আছে ঋকবেদে। যুদ্ধ ও যানবাহনের জন্য রথ নির্মাণ, লাঙল, আসবাবপত্র, এবং গৃহ নির্মাণও ছিল এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এছাড়া চম্বন, তন্তবায়, কুম্ভকার, এবং লোহা শিল্পী, ধাতু শিল্পী আর্যদের অর্থনৈতিক জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছিল। 

কৃষি ও কারিগরি ক্ষেত্রে ব্যাপক উৎপাদন না হওয়ায় উদ্বৃত্ত ভোগ্য পণ্যের পরিমাণও ছিল কম। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য বিকশিত হয়েছিল বলে মনে করেন না ঐতিহাসিকরা। তবে সামান্য হলেও ঋকবেদে বাণিজ্য সংক্রান্ত কিছু তথ্য আছে। দামোদর ধর্মানন্দ, কোশাম্বীর অনুমান ঋগ্বেদে উল্লিখিত ‘পনি-রা’ ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত ছিল এবং পশুচারণ ভিত্তিক সমাজে বিশেষ মান্যতা পেতেন না। তাঁর ধারণা এই শ্রেণী ছিল পরবর্তী আমলে বণিকদের পূর্বসূরী। এ যুগে সমুদ্র বাণিজ্যেও পরিচিত ছিল কিনা এ বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ স্পষ্ট। সরাসরি সমুদ্রবাণিজ্য পরিচয় না পাওয়া গেলেও বিবি লাল সহ কিছু পন্ডিত ‘শত দাঁড়’ যুক্ত জলযাত্রের উল্লেখ থেকে বিশাল সমুদ্রগামী জাহাজের প্রমাণ দাখিল করতে আগ্রহী। কীথ, অবশ্য মনে করেন সমুদ্র বলতে সাগর বোঝাই না, বোঝাই সিন্ধু নদের সুবিস্তিত মোহনা। তবে নিয়মিত না হলেও দূর অঞ্চলের সঙ্গে বিশেষত পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গে আর্যদের বাণিজ্যিক সম্পদের সম্ভাবনা বাতিল করা যায় না। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top