StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

হাঙ্গেরি সংকটে ভারতের ভূমিকা (1956)

১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরি সংকটে ভারতের ভূমিকা

হাঙ্গেরি সংকটে ভারতের ভূমিকা ছিল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই ঘটনায় ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান ও পদক্ষেপ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পূর্ব ইওরোপের বিভিন্ন দেশে সোভিয়েত রাশিয়ার অনুগামী কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৪৪ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও হাঙ্গেরির সরকারে রাকোটিশ বা ইমরে নেগির মত কমিউনিস্টদের প্রাধান্য ছিল এবং রাশিয়া নিযুক্ত প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্র নিরাপত্তা পুলিশ বাহিনীর সাহায্যে সোভিয়েত ইউনিয়ান হাঙ্গেরির সরকার ও প্রশাসনে চরম নিয়ন্ত্রন স্থাপন করে। এই নিয়ন্ত্রনকামী, অমানবিক ও রূশ নিয়ন্ত্রনবাদের বিরুদ্ধে ১৯৫৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধে হাঙ্গেরির মানুষ, বিশেষত ছাত্র-বুদ্ধিজীবি ও জাতীয়তাবাদী সংস্কারপন্থী ইমরে নেগি সরকার বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহকে দমনের উদ্দেশ্যে ২৩-২৪ অক্টোবর রুশ বাহিনী হাঙ্গেরিতে সামরিক বাহিনী প্রেরণ করে।

৪ ঠা নভেম্বর থেকে শুরু হয় রাশিয়ার হাঙ্গেরি আক্রমণ যাকে বলা হয় ‘Operation Whirlwind‘। প্রতিষ্ঠিত নেগির সরকারের পতন ঘটে এবং জানোস কাদেরের নেতৃত্বে রূশপন্থী সরকার হাঙ্গেরির দায়িত্ব গ্রহণ করে। হাঙ্গেরির অভিযানে রাশিয়া ১৭ ডিভিশন সৈন্যকে ব্যবহার করেছিল এবং এই অভিযানের ফলে প্রায় ২৫০০ হাঙ্গেরিয় মারা গিয়েছিল।

আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে রাশিয়ার হাঙ্গেরি আক্রমণের ঘটনা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে ভারতের জোট নিরপেক্ষতার নীতিকে অবস্থানগত প্রশ্নে ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ জানায়। কাশ্মীর প্রশ্নে রাশিয়ার ক্রমাগত ভারতকে সমর্থন জানানো এবং প্রয়োজনে নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া কর্তৃক ভারতের স্বার্থে এই আলোচনার বিপক্ষে ভেটো প্রদান, অন্যদিকে জওহরলালের নেতৃত্বে ভারত সরকারের কমিউনিস্ট রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন এইরূপ এক আঙ্গিকে হাঙ্গেরি সংকটে ভারতের ভূমিকা উভয় রাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনার উদ্ভব ঘটায় ।

হাঙ্গেরি সংকটে ভারতের ভূমিকা
হাঙ্গেরি সংকটে ভারতের ভূমিকা

১৯৫৬ সালের নভেম্বর মাসে ভারত ভারসাম্য রক্ষার রাস্তা খোলা রেখেছিল একদিকে বিদ্রোহী হাঙ্গেরিয়দের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছিল, অন্যদিকে সাধারণ সভায় সভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গৃহীত নিন্দা প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছিল। এক্ষেত্রে অবশ্য ভারতের জনমতের একাংশ ও পশ্চিমী জনমত নেহেরুর তথা ভারত সরকারের অবস্থানের সমালোচনা করে। সমসাময়িক কালে মিশরের বিরুদ্ধে ইজরায়েল, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারতের জোরালো সওয়ালের তুলনায় হাঙ্গেরির প্রশ্নে ভারতের বক্তব্য অনেক বেশী নমনীয় ও অনিরপেক্ষ ছিল বলে মনে করা হয়, বস্তুত খোলা মনে হাঙ্গেরীর ঘটনার উদাত্ত প্রতিবাদ নেহেরু করতে পারেননি। আসলে নেহেরুর লক্ষ্য ছিল হাঙ্গেরির প্রশ্নে কোনভাবেই যেন রুশ মার্কিন প্রত্যক্ষ সংঘাত না শুরু হয়।

পূর্ব ইওরোপের বিষয়ে ভারতের আগ্রহ বিশেষ ছিলনা। তৎসত্ত্বেও ২ রা অক্টোবর নেহেরু মন্তব্য করেছিলেন যে হাঙ্গেরিতে জাতীয় অভ্যুত্থান ঘটেছে এবং আশা প্রকাশ করেন যে এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাঙ্গেরির জাতীয় আশা আকাঙ্খা অনেকটাই পূরণ হবে এবং অধিক মাত্রায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক পর্বে নেহেরুর মনে হয়েছিল যে রাশিয়া হাঙ্গেরির এই বিদ্রোহে বিরূপ অবস্থান গ্রহণ করবেনা, কিন্তু ওয়ারশ চুক্তি থেকে ইমরে নেগি বেরিয়ে আসার ফলে সমস্যা ক্রমশ সংকটে পরিণত হয় এবং রাশিয়া প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করে নেহেরুর ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে।

বস্তুতপক্ষে নেহেরু হাঙ্গেরির ঘটনায় জাতীয়তাবাদী উপাদানের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে প্রদান কথা হল হাঙ্গেরির মানুষ কিছু আভ্যন্তরীণ পরিবর্তন এবং সোভিয়েত নিয়ন্ত্রন থেকে মুক্তি চাইছে। যে কোন স্থানেই বিদেশী সেনার উপস্থিতিতে তার ব্যক্তিগত আপত্তি ছিল। হাঙ্গেরির ক্ষেত্রে আপত্তি আরও বেশী ছিল কারণ এখানে রুশ বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছিল জাতীয় অভ্যুত্থানকে দমন করার জন্য। ১৪ই নভেম্বর নেহেরু শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়ার প্রধানমন্ত্রীদের কাছে হাঙ্গেরির ঘটনার বিয়োগান্তক পরিণামের জন্য মর্মবেদনা প্রকাশ করেন, পরে নেগিদের মৃত্যুদন্ড প্রদানে রাশিয়াকে তাঁর মানসিক আঘাতের কথাও জানান।

হাঙ্গেরি  ১৯৫৬
হাঙ্গেরি সংকট 1956

মস্কোয় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ৫ই নভেম্বর হাঙ্গেরীয় ঘটনায় ভারতের উদ্বেগের কথা জানান, নেহরু রুশ সরকারের কাছে সমগ্র ঘটনার বিবরণ চান। রাশিয়ার বিবরণে নেহেরু সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট না হলেও পশ্চিমের সংবাদপত্র প্রচার করে যে রাশিয়ার হাঙ্গেরি প্রসঙ্গীয় ‘প্রতিবিপ্লব‘, ‘বিভ্রান্তি‘ বা ‘আভ্যন্তরীণ সংঘাত‘ ইত্যাদি ব্যাখ্যা নেহেরু গ্রহণ করেছেন।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভার সদস্যরা হাঙ্গেরির প্রশ্নে তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে যায় – ১) কিছু আফ্রো-এশিয় রাষ্ট্র সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ, ২) সোভিয়েত নেতৃত্বে কমিউনিস্ট রাষ্ট্রসমূহের সংখ্যালঘু অংশ এবং ৩) ভারত সহ ১৫টি জোট নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। হাঙ্গেরি বিষয়ক মোট ১১টি প্রস্তবের সাতটিতে ভারত ভোট দেয়নি, ৩টি তে পক্ষে এবং ১টি প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। আপোষ রক্ষার পক্ষে আপত্তিকর ভাষার ব্যবহার হয়েছে, ভাবাদর্শের তাগিদ রয়েছে এরূপ প্রস্তাব, হাঙ্গেরি স্বাধীন নয় এমন ধারণা যাতে মেনে নেওয়া হয়েছে, এবং হাঙ্গেরির সম্মতি না নিয়ে যেখানে জাতিপুঞ্জের সদস্যদের হাঙ্গেরি প্রবেশের কথা বলা হয়েছে এরূপ প্রস্তাবগুলিতে ভারত ভোট দেয়নি।

তবে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কর্তৃত্বাধীনে হাঙ্গেরিতে ভোটগ্রহণের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভারত ভোট দেয় কেননা এই প্রস্তাবের প্রবণতা ভারতের কাছে বিপজ্জনক বলে মনে হয়েছিল (কাশ্মীরে তা মানা হতে পারত) ভারত প্রস্তাব দেয় যে জাতিপুঞ্জের মহাসচিব যাতে হাঙ্গেরিতে গিয়ে অবস্থার বিশ্লেষণ করতে পারেন। কিন্তু সোভিয়েত প্রতিনিধি ভারতের এই প্রস্তাব সমর্থন করেনি। বিরক্ত ও হতাশ কৃষ্ণমেনন এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন যে “আমাদের মনে হয় যে এতে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতি সৌজন্যের অভাব সূচিত হচ্ছে এবং সনদের নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে”।

বলা বাহুল্য জোট নিরপেক্ষতার কান্ডারী হিসাবে হাঙ্গেরি সংকটে ভারত তার ভূমিকা স্বকীয় অবস্থানকে সাফল্যের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি।

আরো পড়ুন :

কোরিয়া সংকটে ভারতের ভূমিকা

সুয়েজ সংকটে ভারতের ভূমিকা

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *