StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ঋক বৈদিক সমাজে নারীর অবস্থা কেমন ছিল।

 

ঋক বৈদিক সমাজে নারীর অবস্থা কেমন ছিল।


  গ্বেদে নারীর স্থান ও মর্যাদা সম্পর্কে সরাসরি কোনো উক্তি নেই। তবে নানা উপমা থেকে এ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা সম্ভব হয়েছে। ঋগ্বেদের বিভিন্ন স্তোত্র থেকে জানা যায় যে, গৃহের অভ্যন্তরে নারী সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিতা ছিলেন। এছাড়া স্বামীর সঙ্গে বিভিন্ন যজ্ঞানুষ্ঠানেও তিনি অংশগ্রহণ করতে পারতেন। অর্থাৎ কেবল গৃহলক্ষ্মীর ভূমিকাতেই নারী অবতীর্ণ থাকেনি। স্ত্রীশিক্ষার প্রচলনও সে-যুগে ছিল। ঘোষা, অপালা, বিশ্ববারা, লোপামুদ্রা, গোধা প্রমুখ শিক্ষিতা মহীয়ষী নারীর পরিচয় এ যুগে পাওয়া যায়।


  ওপরে উল্লেখিত নারী নিজে তাঁর জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার বিষয়টিও নারী স্বাধীনতার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু কার্যত নারী কতখানি স্বাধীনতা ভোগ করত সে-বিষয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, তৎকালীনরীতি অনুসারে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীকে পুরুষের অভিভাবকত্বে থাকতে হত। বিবাহের আগে পর্যন্ত পিতার অধীনে এবং বিবাহের পর স্বামীর অধীনে কিংবা বিবাহ না হলে তাঁর ভাইদের অধীনে থাকার রীতি প্রচলিত ছিল। এছাড়া, নারী হরণের কথাও মাঝে মাঝে ঋগ্বেদে উল্লেখিত হয়েছে।


 ঋগ্বৈদিক যুগের সমাজে পরিবার ছিল পিতৃতান্ত্রিক। স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের ওপর পিতার কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় ছিল। একান্নবর্তী পরিবারের অস্তিত্ব তখন পরিলক্ষিত হয়। পিতৃতান্ত্রিক পরিবার হওয়ায় সে-যুগে পুত্র-সন্তানের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছিল। পিতার মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠপুত্র পরিবারের দায়িত্বভার লাভ করতেন। তৎকালীন রীতি অনুসারে পিতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদনের অধিকারী পুত্র-সন্তান হওয়ায় এবং পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসাবে পুত্র পরিগণিত হওয়ায় পুত্র সন্তানের কামনা আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। আলোচ্য সমাজে অতিথিসেবার বিষয়টিবিশেষ গুরুত্ব পেত। ঋগ্বেদে ‘অতিথি’ শব্দটির বহুল ব্যবহার থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়েছে। উল্লেখ্য যে, গৃহে অতিথির আগমন ঘটলে তাঁর প্রতি সেবাপরায়ণতা তৎকালীন সমাজে ধর্মীয় কর্তব্য বলে গণ্য হত।


  পুত্র-সন্তানের প্রতি কদর থাকলেও কন্যা সন্তান একেবারে অবহেলিত ছিল না বলে সাধারণভাবে মনে করা হয়ে থাকে। বৈদিক যুগে বিবাহকে পবিত্র বন্ধন হিসাবে গণ্য করা হত। পুরুষের একটি বিবাহই ছিল সাধারণ রীতি। তবে একাধিক বিবাহ একেবারে অজানা ছিল না। রাজন্যবর্গের মধ্যে ঐ ধরনের বিবাহের প্রচলন ছিল। ঐ সমস্ত ক্ষেত্রে পুরুষের একাধিক বিবাহের ফলে নারীর সপত্নী যন্ত্রণা স্বাভাবিকভাবেই বিরাজমান ছিল। এজন্যই ঋগ্বেদের কয়েকটি সূক্তে সপত্নী কণ্টক উদ্ধারকল্পে নারীকে দেবতাদের দ্বারস্থ হতে দেখা যায়। । অথবা স্বামী নির্বাচনে যথেষ্ট স্বাধীনতা ছিল। বাল্যবিবাহ প্রচলিত ছিল না। উপযুক্ত বয়স হলে মেয়েদের বিবাহের রেওয়াজ ছিল। পরবর্তীকালে বিবাহ যেমন নারীর পক্ষে বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছিল ঋগ্বৈদিক যুগে তা ছিল না। বিধবাবিবাহ একেবারে নিষিদ্ধ ছিল না।


   স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানহীনা বিধবা রমণীর সঙ্গে তার দেবরের বিবাহের রীতি বলবৎ ছিল। ঋগ্বেদে সহমরণ বা সতীদাহের কোনো উল্লেখ নেই। এতদ্‌সত্ত্বেও কোনো কোনো ঐতিহাসিক সমাজের উচ্চতর পর্যায়ে সহমরণের অস্তিত্ব ছিল বলে মনে করে থাকেন। অবশ্য এই সিদ্ধান্তের কোনো যুক্তিসংগত প্রমাণ নেই। কারণ বিধবাবিবাহ অনুমোদিত থাকায় সতীদাহের অনুপস্থিতিই স্বাভাবিক। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে ধর্ম বা সমাজের দোহাই দিয়ে বিধবা রমণীর বেঁচে থাকার অধিকারটুকু কেড়ে নেওয়া হয়নি। ঋগ্বৈদিক সমাজে পণপ্রথার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে অধুনা প্রচলিত বরপণের পরিবর্তে কন্যাপণের প্রচলন ছিল, যার প্রমাণ মেলে ঋগ্বেদের কয়েকটি সূক্তে। অবশ্য কন্যার ত্রুটি থাকলে বরপণের কথা একাধিক বার উল্লেখিত হয়েছে ঋগ্বেদে।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *