StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

সিসিলি অভিযানের ফলাফল।

 সিসিলি অভিযানের ফলাফল আলোচনা করো।


এথেন্সের সিসিলি অভিযানের ব্যর্থতার ফলাফল হয়েছিল মারাত্মক। 


প্রথমত:

 এই নিদারুণ পরাজয়ের ফলে এথেন্সের দুই-তৃতীয়াংশ যুদ্ধজাহাজ এবং এক-তৃতীয়াংশ সৈন্য ধ্বংস হল। তিন সেনানায়কই ধরা পড়ে শত্রুহস্তে যন্ত্রণাভোগের পর নিহত হলেন। বহু এথেনীয় যোদ্ধা বন্দী হয়ে অকথ্য লাঞ্ছনা ভোগ করল, অনেকে অত্যাচারে অনাহারে মারা গেল, আর অনেকে দাসবৃত্তি গ্রহণে বাধ্য হল। মোট বন্দীর সংখ্যা সাত হাজারের কম নয় বলে থুকিডাইডিস লিখেছেন। “সমগ্র হেলেনীয় ইতিহাসে এটাই ছিল সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হেলেনীয় কীর্তি। একইসঙ্গে এটাই ছিল বিজয়ীদের পক্ষে অতি গৌরবময় সাফল্য এবং বিজিতদের পক্ষে সর্বাপেক্ষা বিপর্যয়কর ব্যর্থতা। কেননা, বিজিতরা সর্বক্ষেত্রে এবং সামগ্রিকভাবে পরাস্ত হয়েছিল। তাদের সার্বিক ক্ষতি হল চূড়ান্ত। 


 সেনাবাহিনী, নৌবহর সবই ধ্বংস হয়েছিল। কিছুই রক্ষা পায়নি। যারা যুদ্ধে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যকই ঘরে ফিরে এসেছিল। এইভাবে সিসিলি অভিযান সমাপ্ত হল।” প্লুটার্কের লেখা থেকে একটি রোমাঞ্চকর সংবাদ পাওয়া যায়। সিসিলিবাসী গ্রীকরা নাকি কবি ও নাট্যকার ইউরিপিডিসের কাব্যের দারুণ ভক্ত ছিল। ইউরিপিডিসের কাব্য যারা জানত, সেইসব বন্দীরা নাকি মুক্তি পেয়েছিল।


দ্বিতীয়ত:


সিসিলি অভিযানের প্রথম ধাক্কা পড়ল এথেন্সের অর্থনীতির উপর। অ্যালকিবাইডিসের পরামর্শক্রমে ৪১৩ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে স্পার্টা উত্তর অ্যাটিকার ডিসিলিয়া দখল করে সেখানকার চাষবাস বন্ধ করে দেয়। এর ফলে স্থলপথে ইউবিয়ার সঙ্গে এথেন্সের যোগাযোগ ব্যাহত হল। কৃষিকার্যে নিযুক্ত প্রায় পঁচিশ হাজার ক্রীতদাস শত্রুপক্ষে চলে গেল। এথেন্সের পক্ষে আর গরিয়ামের রৌপ্য খনিতে কাজ চালানো সম্ভব হল না। সেখানকার বহু কর্মহীন ক্রীতদাস এথেন্সে ফিরে এল। রৌপ্যের অভাবহেতু ‘আউল’ রৌপ্যমুদ্রার প্রচলন বন্ধ করে দিতে হল।


  পরিশেষে তাম্র মুদ্রার প্রচলন করতে হল। এতদিন কর রাজ্যগুলি থেকে কর আদায়ের ফলে তাদের মধ্যে যে এথেন্স বিরোধী বিক্ষোভ ছিল, তা দূর করে এথেনীয় সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব বিধানের জন্য ঐ কর আদায় বন্ধ করে দিয়ে আমদানী-রপ্তানীর উপর দ্রব্যমূল্যের শতকরা পাঁচভাগ কর হিসাবে আদায়ের ব্যবস্থা গৃহীত হল। হোম দুঃখ করে বলেছেন যে, এই মহৎ ইচ্ছা আর কার্যে পরিণত হল না। কেম্ব্রিজ-ইতিহাসকার বলেন যে, এথেনীয়দের এই কর থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় মিত্র রাষ্ট্রগুলি বিক্ষুব্ধ হয়েছিল এবং তারা তাদের সামর্থ্যের বাইরে গিয়েও এথেন্সের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল।


তৃতীয়ত:

 

 সিসিলি অভিযানের ব্যর্থতা এথেন্সের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপরও আঘাত করেছিল। এই অপ্রত্যাশিত ভাগ্য-বিপর্যয়ে এথেন্সের গণতান্ত্রিক দলের প্রভাব-প্রতিপত্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছিল। তাদের অক্ষমতার জন্যই এথেনীয় বাহিনী বিপর্যস্ত হয়েছিল প্রতিদ্বন্দ্বী দলের এই প্রচারের ফলে এথেন্সের শাসনতন্ত্রে পরিবর্তন সাধিত হল। এথেন্সবাসী অনুভব করল, এই অভিযানজনিত মারাত্মক সংকটের সমাধান করা পাঁচশো জনের পরিষদের পক্ষে অসম্ভব। তাই তারা ‘Probuli’ নামে দশ সদস্যের একটি বোর্ডের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেছিল।


চতুর্থত :


  দুঃসাহসী এথেন্স দারুণ সংকটেও হাল ছেড়ে দেয়নি। রাষ্ট্রের সযত্ন-সঞ্চিত অর্থভাণ্ডারে হাত দিতে এথেন্স দ্বিধা করেনি, পুনরায় নৌবহর তৈরি করতে নিশ্চেষ্ট থাকেনি, তবুও সে সংকট এড়াতে পারল না। এথেন্সের শক্তিহীনতার সুযোগ নিয়ে তারই অধীনস্থ কিওস, লেবেডাস, মিলেটাস, ইউবিয়া, শীয়স অর্থাৎ স্যামস ছাড়া বাকী সবাই বিদ্রোহী হয়ে উঠল। এথেন্সের পক্ষে এই বিদ্রোহ দমন করা সম্ভব ছিল না। এথেন্স যখন এইভাবে বিভিন্ন জায়গার বিদ্রোহ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, তখন সুযোগ বুঝে পূর্বতন শত্রু পারস্য সম্রাট স্পার্টার সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে এথেন্সের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে পুনঃপ্রবৃত্ত হলেন। 


 পারস্য চেয়েছিল সুযোগের সদ্ব্যবহার করে এশিয়া মাইনরের উপকূল ভাগের শহরগুলি পুনরায় দখল করতে। সারডিসের শাসক টিসাফারনেস ও ফ্রিজিয়ার শাসক ফার্নাবজাস বুঝেছিলেন যে, এথেন্সের কাছ থেকে এশিয়ার উপর আধিপত্য ছিনিয়ে নেবার সময় আগত। আর স্পার্টা চেয়েছিল, যেন-তেন প্রকারে এথেন্সের শক্তি বিনষ্ট করে নিজ আধিপত্য বিস্তার করতে। তাই স্পার্টা ও পারস্যের এই মিত্রতা এথেন্সের পক্ষে মারাত্মকভাবে অশুভসূচক হয়েছিল। স্পার্টা ও পারস্য যে সম্মিলিত আক্রমণ চালাল, তার প্রতিরোধ করা সমারিক ও অর্থবলে শক্তিহীন এথেন্সের পক্ষে আর সম্ভব ছিল না। এথেন্স পরাজয় বরণ করে সন্ধি করতে বাধ্য হল।


পঞ্চমত:


 সিসিলি অভিযানের ব্যর্থতার চরম পরিণতি হল এথেনীয় সাম্রাজ্যের ধ্বংস। হোম বলেন, “The dreams of worldwide sway in which the Athenians had indulged for a time, were gone for ever.” অন্যদিকে, স্পার্টার শক্তি বৃদ্ধি হল, স্পার্টানদের আত্মবিশ্বাস ফিরে এল। আর পারস্য অচিরেই গ্রীক জগতের ভাগ্যনিয়ত্তারূপে পরিগণিত হল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *