StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

নারী শিক্ষা বিস্তারে মিশনারীদের ভূমিকা


নারী শিক্ষা বিস্তারে খ্রিশ্চান মিশনারীদের ভূমিকা।



          

  ঊনবিংশ শতকে নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল বক্তিগত উদ্যোগ বিশেষ করে খ্রিস্টান মিশনারীগণ এবং তাদের সংগঠনগুলি। তারা সরকারী সাহায্যের দিকে না তাকিয়ে কলকাতা ও শহরতলিহ বিভিন্ন স্থানে মহিলা বিদ্যালয়স্থাপন করে নারীশিক্ষার বিস্তারে কাজ শুরু করেছিলেন। নারীশিক্ষার প্রসারে সংঘবদ্ধভাবে কাজ শুরু হয় ১৮১৯ সালে কলকাতা ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটির নেতৃত্বে তাদের চেষ্টাতে প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি। ১৮২৪ সালে এই সোসাইটি বেঙ্গল থ্রিশ্চিয়ান স্কুল সোসাইটির সঙ্গে একত্রিত হয় এবং মাতৃভাষার মাধ্যমে মেয়েদের মধ্যে শিক্ষা প্রসার করতে থাকে।



  এছাড়াও মিস মেরি অ্যানি কুক এবং দা ব্রিটিশ অ্যান্ড ফরেন স্কুল সোসাইটিও নারী শিক্ষার প্রসারে প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ২০০ জন মহিলাকে শিক্ষায়তনে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। এইসকল খ্রিশ্চান মিশনারী সংস্থার উদ্যোগে কলকাতা, চুঁচুড়া, বর্ধমান, ঢাকা, চট্টগ্রাম ইত্যাদি স্থানে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। সমাচার দর্পণের হিসাব অনুসারে এই প্রকার নারী শিক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ৭১ এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় 1200জন।




  দক্ষিণ ভারতে চার্চ মিশনারী সোসাইটি ১৮২১ সালে তিরুনেলভেলিতে নারীদের জন্য প্রথম বোর্ডিং স্কুল স্থাপন করে। ১৮৪০ সালের মধ্যে দক্ষিণ ভারতে চার্চ মিশনারী সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত স্কুলের সংখ্যা ৬টি, সেখানে প্রায় ২০০ জন হিন্দু পরিবারের ছাত্রী শিক্ষালাভ করছে। ১৮৫০ সালের মধ্যে মিশনারীগন দক্ষিণ ভারতে প্রায় ৮০০০ ছাত্রীর পড়াশোনার বন্দোবস্ত করতে সক্ষম হয়েছে, যদিও তাদের অধিকাংশই খ্রিশ্চান। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে American Mission বোম্বেতে মেয়েদের জন্য প্রথম স্কুল স্থাপন করেছিল এবং ১৮২১ সালের মধ্যে এই স্কুলের ছাত্রী সংখ্যা হয়েছিল ৪০০ জন।



ঊনবিংশ শতকের চরম রক্ষণশীলতার যুগে, যেখানে মেয়েদের জন্য কোন সনাতন রীতিমাফিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাব্যবস্থা ছিল না সেখানে বিদ্যায়তন, পাঠক্রম, পরীক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে মূল্যায়ন পদ্ধতির প্রবর্তনের মধ্যে দিয়ে খ্রিস্টান মিশনারীগণ স্ত্রী শিক্ষার ধারায় প্রথম আলো নিয়ে আসেন।



  কোন উদ্দেশ্য নিয়ে খ্রিশ্চান মিশনারীগণ নারী শিক্ষার প্রসারে ব্রতী হয়েছিল তার আংশিক ধারণা পাওয়া যায় “হিবারনিয়ান অক্সিলিয়ারি সোসাইটি’র প্রতিবেদনে। এই রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে স্ত্রী শিক্ষা কলকাতায় থেমে থাকতে পারেনা। সমগ্র মহাদেশে এর প্রসার নিশ্চয়ই ঘটবে। সম্যা দেশের জ্ঞানের আলো ও সংবাদ প্রচারের কেন্দ্র হবে এই কলকাতা। তখন হিন্দু মহিলারা সমাজে প্রভাব বিস্তার করে সামাজিক পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে। পুরুষের নির্দেশ মতো তখন ভারতীয় নারীগণ কুসংস্কার বশত নিজেদের সন্তান বিসর্জন দিতে রাজি হবে না বা আত্মবিসর্জন দেবে না, বরং শিক্ষার দ্বারা জ্ঞানের আলো প্রাপ্ত হয়ে কুসংস্কারকে দূর করতে সচেষ্ট হবে। তবে এর বাইরে একটি গূঢ় উদ্দেশ্য যে মিশনারীদের ছিল না তা নয় সেই উদ্দেশ্য হল যিশু খ্রিস্টের ধর্মের প্রসার।




  খ্রিশ্চান মিশনারীদের দ্বারা স্থাপিত কলকাতার একটি আদি নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল লরেটো হাউস। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে “The Institute of Blessed Virgin Mary যার সন্ন্যাসিনীগণ ‘Loreto Sisters’ নামে পরিচিত ছিলেন লরেটো হাউস স্কুলেরপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এটি ভারতের প্রথম লরেটো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৬০ জন ছাত্রীকে নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান তা পথ চলা শুরু করেছিল। প্রথমে কেবল ক্যাথোলিক ধর্মীয়দের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও পরবর্তীকালে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও খুলে দেওয়া হয়। বেথুনের মত লরেটোতেও নারীদের উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনে কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল ।




 ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে লরেটো হাউস কলেজ স্থাপিত হয়। এখানেও বেশির ভাগ ছাত্রী ছিল। ইওরোপীয় খ্রিশ্চান, কিন্তু বাঙালি খ্রিশ্চান ও অখ্রিশ্চান বাঙালী ছাত্রীগণও এই কলেজে পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষিতা হয়েছিলেন। প্রথম বর্ষে যে ১১ জন ছাত্রীকে নিয়ে কলেজের যাত্রা শুরু হয় তাদের মধ্যে ই জন আর্মেনিয়ান এবং ৯ জন ইওরোপীয় খ্রিশ্চান ছিল, পরের বছর মোট ৫ জন ছাত্রীর মধ্যে ২ জন ছিলেন বাঙালি এবং তারা কলেজের খ্রিশ্চান পদ্ধতিতে চালিত প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে অস্বীকার করেছিল। ১৯১৭ সালে ১২ জন ছাত্রীর মধ্যে ৩ জন অখ্রিশ্চান ছাত্রী অবশ্য প্রার্থনায় যোগ দিয়েছিল, ১৯১৮, ১৯২১ থেকে শুরু করে স্বাধিনতার সময়কাল পর্যন্ত অনেক অখ্রিশ্চান বাঙালী ছাত্রীই খ্রিশ্চান পদ্ধতিতে প্রার্থণা করতে রাজি হননি। ১৯২৪ সালে ১৩ জন ছাত্রীর মধ্যে তিনজন অখ্রিশ্চান বাঙালি, একজন মুসলিম ছাত্রী, দুজন ভারতীয় খ্রিশ্চান, ১৯২৫ সালে ১৫ জন ছাত্রীর মধ্যে ৩ জন বাঙালির মধ্যে ২ জন হিন্দু ও ১ জন মুসলিম।




  বাংলায় মিশনারী শিক্ষা বিস্তারের স্বাক্ষ্য বহনকারী অপর প্রতিষ্ঠান হল স্কটিশ চার্চ কলেজ। ১৯২৮ সালে চার্চ অফ স্কটল্যান্ড ভারতের অহিন্দু জনগণের জন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রয়োজনিয়তা অনুভব করে এবং এই কারণে আলেকজান্ডার ডাফকে ভারতে পাঠান। ডাফ কলকাতায় এসে মাত্র দুই বছরের মধ্যেত রামমোহনের সহযোগিতা লাভ করে ১৮৩০ এর ১৩ই জুলাই ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর নাম দেন জেনারেল অ্যাসেম্বলিস ইন্সটইটিউশন। ১০ বছরের মধ্যে ১৮৪০ সালের মে মাসে স্কুলটিতে কলেজ বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এদেশে নারীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের জন্য স্কটিশ চার্চ কলেজে ১৯২১ সালে সহশিক্ষার প্রথম প্রবর্তন হয়। ১৯৩৭ সালে এই কলেজ স্কটিশ চার্চ কলেজেই মহিলাদের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষক শিক্ষণ বিভাগের প্রবর্তন করা হয়।



Share

2 thoughts on “নারী শিক্ষা বিস্তারে মিশনারীদের ভূমিকা”

  1. Akash Pramanik

    মাও সে তুং এর জনযুদ্ধের ধারণা আলোচনা করো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *