নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব।
Or
নব্য প্রস্তর যুগের টিকা।
মানব বিবর্তনের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তর হল নব্য প্রস্তর যুগ। এই যুগে মানুষ জীবিকার জন্য প্রস্তর নির্মিত অস্ত্রের ওপর নির্ভর ছিল। পুরাতাত্ত্বিক ভি গডন চাইল্ড মন্তব্য করেছেন যে নিওলিথিক বা নব্য প্রস্তর যুগের হাতিয়ার এর ব্যবহার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বস্তু নির্ভর জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়। নতুন প্রযুক্তির আয়ত্ত করে নতুন অস্ত্র ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে মানুষ শিখেছিল। এগুলি ছিল আগের তুলনায় উন্নততর ও পরিশীলিত । চাইল্ড এর যুক্তি হল নব্য প্রস্তর যুগের হাতিয়ার তৈরি হওয়ায় জমি কর্ষণ করার সহজ হয়ে যায়।
ইতিপূর্বে মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রহকরী এরপর থেকে তারা খাদ্য উৎপাদনকারী শ্রেণীতে রূপান্তরিত হল। আগেকার অমসৃণ পাথরের হাতিয়ার এর তুলনায় মসৃণ পাথরের কুঠার ব্যবহার করে বনভূমি পরিষ্কার করে খননকারী লাঠির সাহায্যে বীজ রোপণের জন্য মাটি আলগা করতে পারল। মসৃণ এবং সূচালো বর্ষার ফলে আর তীরের ডগার জন্য শিকার করারও সহজতর হলো।
কৃষিকাজ যত বেশি ছড়িয়ে পড়ল ততই গবাদিপশুর গৃহ পালন একটা দৃহ ভিত্তি পেল । শস্য কাটার পর পড়ে থাকা জমিতে গবাদিপশুর খাদ্য পাওয়া গেল তাই গবাদিপশুর থেকে দুধ ও মাংস দুই পাওয়া গেলে বোনের শিকার নির্ভর কমে গেল। তখন গ্রামে বসবাসকারী গোষ্ঠী দেখা দিল। প্রত্যক্ষভাবে নব্য প্রস্তর যুগের অবদান না হলেও চাকা তৈরি মাটির পাত্র বলতে মানুষ শিখেছিল।
মানুষের জীবনযাত্রা উন্নততর স্তরে পৌঁছে গিয়েছিল অবশ্য যারা উৎপাদন করত না তারাও উৎপাদনের উদ্বৃত্ত উৎপাদনের ভাগ পেতে থাকলো। উদ্বৃত্তের এরকম বেদখলের নিম্নশ্রেণির ব্যক্তিগত শ্রেণি এবং রাষ্ট্রের। গর্ডন চাইল্ড এইসব পরিবর্তনগুলি নব্য প্রস্তর যুগ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
তবে মনে রাখা দরকার খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে পশু শিকার বা খাদ্য সংগ্রহ পর্ব একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। এ যুগে মানুষ স্রাব তামা ও ব্রঞ্চ দিয়ে অস্ত্র বানাতে শিখেছিল। এ কারণেই ঐতিহাসিক অলচিন দম্পতি একে তাম্র প্রস্তর যুগ বলে উল্লেখ করেছেন। পাথরের তৈরি যন্ত্রপাতি ছিল সে সময় ধাতুর ব্যবহার ও ক্রমশ বার ছিল।
নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ জীবন ধারার সঙ্গে পরিচিত হয়। কৃষি ব্যবস্থার প্রবর্তন অনেক আরামদায়ক স্থিতিশীল এনে দিয়েছিল। নব্য প্রস্তর যুগের অর্থনৈতিক খোরাকি নির্ভর বলা হয়েছে। তবে এই অর্থনীতিতে লেনদেন ও পন্য ব্যবস্থা ছিল। উৎপাদন পদ্ধতিতে পরিবর্তন সম্ভবত চেতনা ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন দেখা দেয়। খাদ্যশস্য উৎপাদন ও পশুপালন এর সঙ্গে উর্বরতা ও বেশি ফসলের খোঁজ চলেছিল। যাদু ও ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন উপেন্দ্র সিংহ।