StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ইতিহাসের সাথে প্রত্নতত্ত্বের সম্পর্ক


ইতিহাসের সাথে প্রত্নতত্ত্বের সম্পর্ক । 



  ইতিহাস একটি স্বতন্ত্র বিষয় যার মূল কাজ হল অতীতের চর্চা। ইতিহাসের চর্চা যিনি করেন অর্থাৎ ইতিহাসবিদ ইতিহাস পুনরুদ্ধারের জন্য নির্ভর করেন কিছু উপাদানের উপর লিখিত উপাদান, মৌখিক উপাদান এবং বস্তুগত উপাদানের উপর। শেষোক্ত উপাদানটি ইতিহাসবিদের হাতে তুলে দেন প্রত্নতত্ত্ববিদ। প্রত্নতত্ত্ব প্রদত্ত বস্তুগত উপাদানগুলিকে ব্যবহার করে ঐতিহাসিক ইতিহাস পুনর্নির্মাণের কাজটিকে সম্পূর্ণ করেন। এই পুনর্নির্মাণের কাজে প্রত্নতাত্ত্বিক স্বাক্ষ্য ও লিখিত উপাদানে প্রাপ্ত স্বাক্ষাকে একসাথে মেলাতে পারলে ইতিহাস অনেক বেশি বস্তুনিষ্ঠ ও সত্যনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। 




 কোন স্থানের ইতিহাস রচনায় কোন একটি নির্দিষ্ট সময়কাল থেকে লিখিত উপাদানের ব্যবহার ঐতিহাসিকগণ করতে সক্ষম হন। যেমন ভারতীয় উপমহাদেশের একাংশে বৈদিক আর্যদের সময়কাল থেকে বৈদিক সাহিত্যকে ইতিহাসের উপাদান রূপে ব্যবহার করা শুরু হয়। কিন্তু ভারতে আদি পর্বের সভ্যতার বিবর্তনের সম্পূর্ণ ছবিটি অনেক ক্ষেত্রেই লিখিত উপাদান থেকে পাওয়া যায় না বহু ক্ষেত্রেই প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন লিখিত উপাদানের নিরবতাজনিত ইতিহাসের ফাঁকগুলি ভরাট করে। যেমন কুষাণ যুগে গঙ্গা তীরবর্তী শৃঙ্গবেরপুরে নির্মিত অসাধারণ একটি জলপ্রকল্পের বিবরণ কোন লিখিত উপাদানে পাওয়া যায়না – উৎখনন থেকেই তার চিহ্ন মেলে।


  আবার অন্যদিক দিয়ে দেখলে লিখিত ইতিহাসের স্বাক্ষ্য প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন ও আবিষ্কারকে সূচিত করে যেমন, হোমারের সাহিত্যে ট্রয় নগরী ও ট্রোজান যুদ্ধের ইতিহাস পড়ার ফলেই শ্লিম্যান প্রাচীন ট্রয় নগরীর বস্তুগত প্রমাণ উদ্ধারে ব্রতী হন এবং এর ফলেই তুরষ্কের হিসারলিক নামক প্রাচীন ও গুঊত্বপূর্ণ প্রত্নস্থলটির আবিষ্কার সম্ভব হয়।




  বস্তুত, ইতিহাসের সঙ্গে প্রত্নতত্ত্বের সম্পর্ক কার্যত অবিচ্ছেদ্য একদিকে লেখমালা, লেখসম্বলিত মৃৎফলক, মিশরে প্রাপ্ত লেখসম্বলিত প্যাপিরাস, গোটা বিশ্বজুড়ে আবিষ্কৃত প্রাচীন মুদ্রা যেমন একদিকে প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার তেমনই অন্যদিকে সেগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল স্বরূপ। বস্তুত বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতাগুলি যেমন গ্রীক এবং রোম, মেসোপোটেমিয়া, মিশর, চীন এবং ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাস রচনায় প্রত্নতাত্ত্বিক স্বাক্ষ্যের উপর ঐতিহাসিকদের নির্ভরশীলতা অত্যন্ত বেশী, অন্যদিকে প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের সূত্র লিখিত ঐতিহাসিক উপাদানের উপর ভিত্তি করেই তৈরী হয়। পারস্পরিক এই নির্ভরশীলতা থেকেই জন্ম নেয় ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব নামক প্রত্নতত্ত্ব তথা ইতিহাসের একটি উপবিভাগ।




  তবে ক্ষেত্রবিশেষে ইতিহাসের সঙ্গে প্রত্নতত্ত্বের চর্চা পদ্ধতিগত বিষয়ে তারতম্য রয়েছে। প্রথমত, প্রত্নতত্ত্বে প্রাপ্ত বস্তুগত এবং জৈব অবশেষ সর্বদাই নিরব স্বাক্ষ্য প্রদান করে পুরাবিদ বা প্রত্নতত্ত্ববিদকে সেইসকল পুরাবস্তুর অর্থ অনুধাবন করতে হয় প্রত্নতাত্ত্বিক ও আনুষাঙ্গিক গবেষণার মধ্যে দিয়ে। 




  অন্যদিকে ঐতিহাসিক দলিলগুলি স্পষ্টভাবে কোন না কোন ঐতিহাসিক বার্তা বহন করে যদিও নানান বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে তার সত্যতা যাচাই করে ঐতিহাসিক তাঁর তথ্য ও তত্ত্ব খাড়া করেন। প্রত্নতাত্ত্বিক স্বাক্ষ্যে কোন পক্ষপাত বা মানসিক ঝোঁক থাকে না, কিন্তু লিখিত ঐতিহাসিক স্বাক্ষ্যে তা থাকতে পারে। এই দিক দিয়ে বিচার করলে একজন ঐতিহাসিক ইতিহাস রচনায় প্রত্নতাত্ত্বিক স্বাক্ষ্যকে অনেক বেশী নিশ্চয়তার সাথে ব্যবহার করেন। 




  দ্বিতীয়ত, প্রাচীন ও লিখিত ঐতিহাসিক দলিলগুলি মূলত শিক্ষিত উচ্চবিত্ত এবং প্রশাসক সমাজের ভাষ্যকে তুলে ধরে সেখানে অন্তজ বা নিম্নবর্গের কথা থাকলেও তা সাধারণভাবে তাদের মনোভাবকে প্রকাশ করে না কারণ তা রচিত হয় উচ্চবিত্ত শিক্ষিতদের দ্বারা এবং উচ্চবিত্ত প্রশাসকদের বদান্যতা বা পৃষ্ঠপোষকতায়। অন্যদিকে প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননে প্রাপ্ত বস্তুগত অবশেষের ক্ষেত্রে যে চিত বা স্বাক্ষ্য উঠে আসে সেখানে কোন একটি বিশেষ সামাজিক শ্রেণীর সংস্কৃতির একচেটিয়া চিহ্ন থাকেনা তা প্রাচীন সমাজের যে কোন শ্রেণীর বাস্তব জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতিকে প্রতিভাত করে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায় যে হরপ্পার নগরগুলির ধ্বংসস্তূপে একদিকে যেমন উচ্চবর্গীয়দের সিটাডেল বা দুর্গের চিহ্ন পাওয়া যায় তেমনই আবার সাধারণ মানুষের জন্য তৈরী নিম্ন নগরে ছোট ছোট কক্ষের উপস্থিতির প্রমাণও পাওয়া যায়।




কলিন রেনফ্লু এবং পল বান (“Colin Renfrew and Paul Bahn ) সঠিকভাবে অভিমত প্রকাশ করেছেন যে আনুমানিক ৩০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ নাগাদ পশ্চিম এশিয়ায় প্রথম লিপি বা লিখিত স্বাক্ষ্যের প্রচলন ঘটে এরপর থেকে ক্রমে ক্রমে বিশ্বের অন্যত্র লিখতে পড়তে জানা একটি শিক্ষিত সমাজের আবির্ভাব ঘটতে থাকে। ফলে ৩০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের পরবর্তীকালের অঞ্চলবিশেষ ও সময়বিশেষের ইতিহাস রচনায় ঐতিহাসিকগণ লিখিত বা সহিত্যগত স্বাক্ষ্য ব্যবহার করতে শুরু করেন।




   মানব সভ্যতার বিবর্তনের ইতিহাসকে তুলে ধরতে হয় কেবল প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননে প্রাপ্ত অবশেষের ভিত্তিতে। প্রচলিত অর্থে এই সভ্যতার আদিমতম এবং বিশালভাবে দীর্ঘমেয়াদী এই সময়কালকে প্রাক ইতিহাস বা প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয় নিম্নপ্রস্তর-মধ্যপ্রস্তর-নব্যপ্রস্তর তামপ্রস্তর সংস্কৃতির যুগ হয়ে যে পর্বের স্বাভাবিক বিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই সময়ের ইতিহাস উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং একমাত্র উপাদান হল প্রত্নতত্ত্ব। এই পর্বের প্রত্নতত্ত্বকে প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব নামে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। স্পেনের আলতামেরা, বা ফ্রান্সের নাসসাও বা ভারতের ভীমবেটকার আদিম খাদ্যসংগ্রাহক পশুশিকারী মানুষ যে গুহার দেওয়ালে সুন্দর ছবি আঁকতে শিখেছিল তা জানা সম্ভব হত না যদি না প্রত্নতত্ত্ব নামক স্বতন্ত্র সমাজবিজ্ঞানটির অস্তিত্ব থাকত। 




  ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের বিশেষ ভূমিকা নেই প্রত্নতাত্ত্বিক বা পুরাবিদ তার গবেষণাধর্মী বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়েই প্রাপ্ত বস্তুগত সংস্কৃতির ব্যাখ্যা দেন এবং উক্ত আদিম সমাজ বা সভ্যতার ইতিহাসকে প্রতিভাত করেন। ভারতের মেহেরাড় বা হরপ্পা সভ্যতার ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য। স্বাভাবিক ভাবেই প্রাগৈতিহাসিক পর্বের প্রত্নতত্ত্ব বা প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নতত্ত্বে একদিকে চ্যালেঞ্জ এবং অন্যদিকে কাজের পরিধি অনেক বেশি ব্যাপ্ত কারণ আনুষঙ্গিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়েই একজন প্রত্নতত্ত্ববিদকে তাঁর তত্ত্ব বা ব্যাখ্যা খাড়া করতে হয়। অর্থাৎ ইতিহাসের সাথে প্রত্নতত্ত্বের সম্পর্ক গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।



2 thoughts on “ইতিহাসের সাথে প্রত্নতত্ত্বের সম্পর্ক”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top