StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ইতিহাসের সঙ্গে ভূগোলের সম্পর্ক

 ইতিহাসের সঙ্গে ভূগোলের সম্পর্ক।




 ভূগোল একটি স্বতন্ত্র জ্ঞানচর্চার বিষয় যা মূলত পুজিঁ উপরিভাগ, পরিবেশ এবং তার সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিয়ে চর্চা করে থাকে। ভূগোল এই পৃথিবীর উপরিভাগ বা ভূপৃষ্ঠ এবং সেখানে বসবাসকারী মানুষের সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে থাকে। প্রাকৃতিক গোল মনুষী ভূগোদ বা আঞ্চলিক ভূগোদ এই সকল বিষয়কে কেন্দ্র করে ভৌগোলিক গবেষণা করা হয়ে থাকে।




  সুতরাং বোঝা যায় যে মনুষ্যের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক যখন ইতিহাসের আলোচনার বিষয় হয় এবং স্তূপৃষ্ঠ সহ প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ভৌগোলিক আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে তখন স্বাভাবিক ভাবেই ইতিহাসের সঙ্গে ভূগোলের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এই অন্তসম্পর্কের বিষয়টি কিছু পণ্ডিতের মতামত এবং উদাহরণ সহযোগে তুলে করা যেতে পারে।




  কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা শূন্যস্থানে ঘটতে পারে না। বস্তুত ইতিহাসে ভূগোলের ভূমিকা অনিবার্য এ কথা আনালস্ গোষ্ঠীর ঐতিহাসিগণ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে দিয়েছেন।




  ভারতে কুষান রাজত্বকালের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল হৌহান সুর ও তিয়েন হন যুক্ত বিবরণ অনুসারে তা-ইট টি বা কুমাফগণ যেন তু বা নিম্ন কিছু অঞ্চল জয় করে আর্থিক দিক নিয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। পরবর্তীকালের মুদ্রাতাত্ত্বিক গবেষণা দেখাচ্ছে যে নিম্ন কিছু অঞ্চলে প্রচলিত কুষান দ্রৌপ্য মুদ্রার অন্যান্য অঞ্চলে প্রচলিত রৌপ্য মুদ্রার তুলনায় অনেক বেশী খানহান ছিল। 




  প্রয়াত ঐতিহ্যানক ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এর গবেষণা স্পষ্ট করে প্রমাণ করে যে চীনের সঙ্গে পশ্চিম রোম সাম্রাজ্যের যোগাযোগ স্থাপনকারী বাণিজ্যিক রেশম পথে পারসিক সমটিরা চড়া হারে শুল্ক আরোপ করায় বুঝান সম্রাট কুবুল কনফিলে সমুদ্রপথে রেশম বাণিজ্য বজায় রাখার জন্য দ্রুত নিম্নি অঞ্চল জয় করেছিলেন যাতে করে পারস্য সাম্রাজ্যের নাগাল এড়িয়ে আরব সাগর ও লোহিত সাগর হয়ে চীনের রেশম নিম্ন সিন্ধু অঞ্চলের বারবারিকাম ইত্যাদি বন্দর নিয়ে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী আলেকজান্দ্রিয়ার মতো রোমান বন্দরগুলিতে পৌঁছে দেওয়া যায়।




  আবার ক্ষেত্রবিশেষে কোন স্থানের সংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য বর্তমানের সঙ্গে অতীতের মিল দেখা যায় সেই মিল বা সাদৃশ্য ইতিহাস নির্মাণে নতুন দিশা দেয়। পুঁতি বা মালাদানা নির্মাণের ক্ষেত্রে হরার কারিগরর স্টিফেটাইট, আগেট, জ্যাসপার, কার্নেলিয়ান, লাগিয় মুহুগুলি, ইত্যাদি পাথরের সাথে সাথে টেরাকোটা কিনুক, হাড়, সোনা, রূপো এবং তামাকে ব্যবহার করেছিল। 




 ৩৬টি পুঁতির মালাটি তৈরী করতে ৪৮০ দিন সময় লেগেছিল। অত্যন্ত দামি এই পুঁতিগুলি বড়লোকদের ব্যবহারের জন্যই তৈরী হত। কেনোয়ার, ভিদালে এবং ভান আরও জানিয়েছেন যে চানহুদারোর এই লম্বা নলাকৃতি কার্নেলিয়ান পাথরের পুঁতি নির্মাণের সমগ্র প্রক্রিয়াটি কোন এক সম্পদশালী ও ক্ষমতাশালী বণিক গোষ্ঠী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হত এবং এই কারণেই এই পুঁতিগুলি তার গুণমান বজায় রাখতে পেরেছিল।




বলা বাহুল্য যে ২৫০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের হরপ্পার সমকালীন যুগে ও বর্তমানে গুজরাটে পুঁতিনির্মাণের পদ্ধতিতে যে ঐতিহ্যগত মিল পাওয়া যায় তা কিয়দাংশে কোন একটি স্থানের দীর্ঘমেয়াদী সাংস্কৃতিক অপরিবর্তনশীলতাকে পরিস্ফুট করে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায় যে বাংলার খাদ্যাভ্যাস বা তামিল দেশের খাদ্যাভ্যাস, ভাষার গঠন, ইত্যাদি সংস্কৃতির নানা দিক দীর্ঘকাল ধরেই অপরিবর্তনীয় থেকেছে যা স্থানের ইতিহাসে ধারাবাহিকতারও সূচক। তবে এই ধারাবাহিতার মধ্যেও বিবর্তন বা পরিবর্তন ঘটে।




  ঐতিহাসিক ঘটনা কোন একটি নির্দিষ্ট সন্ধানে ঘটে থাকে কিন্তু সেই ঘটনার কারণ ও ফলাফল সেই স্থানে সুনির্দিষ্ট নাও থাকতে পারে। ১৪৫৩ সালে ঔটোমান তুর্কিরা পূর্ব রোম সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টানটিনোপল অবরোধ ও দখল করেছিল – কিন্তু এর ফলাফল কেবল আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ফলাফল কেবল তৎসন্নিহিত অঞ্চলে আবদ্ধ থাকেনি। প্রথমত, কনস্টানটিনোপল থেকে পালিয়ে গিয়ে ক্রাইসোলোরাসের মত মানবতবাদী পন্ডিতগণ ইতালিতে রেনেসার পরিপ্রেক্ষিত রচনা করেছিলেন, ভূমধ্যসাগরে খ্রিশ্চান বণিকদের আধিপত্য খর্ব হওয়ার ফলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বজায় রাখা ও মশলা আমদানির বিকল্প পথের অনুসন্ধান চলেছিল। 




  কলম্বাস, আমেরিগো ভেসপুচিদের কল্যানে ইওরোপ আবিষ্কার করেছিল আমেরিকা মহাদেশকে, – বার্থেলমিউ দিয়াজ ও ভাস্কো দ্য গামা মিলে ভারতে আসার নতুন পথকে, ম্যাগলান আবিষ্কার করেছিলেন গলাকার পৃথিবীকে জলপথের আবর্তনের পথটিকে শুরু হয়েছিলে উপনিবেশ স্থাপন এবং যার ফলে সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসটাই বদলে যেতে শুরু করেছিল।




  একইভাবে ১৭৫৭ এর ২৩ জুন নদিয়ায় পলাসীর প্রান্তরে সিরাজের সঙ্গে ক্লাইভ নেতৃত্বাধীন কোম্পানীর যে যুদ্ধ হয়েছিল তার প্রেক্ষিত রচিত হয়েছিল মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা জুড়ে এবং তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল প্রায় সমগ্র দেশ জুড়ে কারণ পলাশির বিজয় কোম্পানীকে প্রথমে বাংলা দখল করতে এবং পর্যায়কে সমগ্র ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের সোপান তৈরী করে দিয়েছিল।




  বস্তুত আধুনিক ইতিহাসচর্চায় ঐতিহাসিকগণ ইতিহাস নির্মাণে স্থানের প্রভাবকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিচার করছেন, বিশেষ করে অ্যানালস্ ঐতিহাসিকদের কাজের পর থেকে। লুসিয়েন ফেবর স্পষ্টই বলেছিলেন যে অতীতের কোন গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক বুঝতে গেলে ঐ অঞ্চলের ভুস্তর, জলবায়ু প্রাকৃতিক পরিবেশ, পাহার, নদী নালা সমুদ্র ইত্যাদি প্রাকৃতিক ভুগোলের বিষয়গুলিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। ইতিহাসের সঙ্গে ভূগোলের সমন্বয় বর্তমানে অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি উদাহরণ দিয়ে আলোচনা শেষ করা যেতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top