StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

কাশ্মীর সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করো

 কাশ্মীর সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করো:



 ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে গ্রেট ব্রিটেন ভারতীয় উপমহাদেশ ত্যাগ করে চলে : গেলে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র স্থাপিত হয় । আন্তর্জাতিক রাজনীতির দ্বিমেরুকরণ, ঠান্ডা যুদ্ধের পরিবেশ এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক সমস্যা দুই দেশের সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছিল। দেশভাগ, দাঙ্গা, শরণার্থী সমস্যা, সৈন্যবাহিনী, আমলাতন্ত্র ও কোষাগার ভাগ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়েছিল। তবে সব সমস্যাকে ছাড়িয়ে প্রাধান্য পেয়েছিল কাশ্মীর সমস্যা। 


  স্বাধীনতালাভের পর ভারত এবং পাকিস্তান উভয়েই কাশ্মীরকে নিজ নিজ রাষ্ট্রে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীনতা রক্ষায় আগ্রহী ছিলেন। এরকম পরিস্থিতিতে পাক-মদতপুষ্ট হানাদার বাহিনী ও সেনাদল ২২ অক্টোবর (১৯৪৭ খ্রি.) কাশ্মীরে ঢুকে ব্যাপক হত্যা, লুণ্ঠন শুরু করে। এই অবস্থায় হরি সিং তাঁর প্রধানমন্ত্রী মেহেরচাঁদ মহাজনের মাধ্যমে ২৪ অক্টোবর ভারতের সাহায্য চেয়ে পাঠান। ভারত সরকার এ জানিয়ে দেয় যে, মহারাজা ‘ভারত-ভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করলে তবেই তারা কাশ্মীরে সেনা পাঠাবে।

  ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ভারত স্বাধীনতা আইনে ব্রিটিশ সরকার দেশীয় রাজাদের সার্বভৌম অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিল, সব দেশীয় রাজ্য স্বাধীন হয়ে যায়। দেশীয় রাজাদের দুটি ডোমিনিয়নের যে-কোনো একটিতে যোগ দিতে বলা হয় অথবা তারা ইচ্ছে করলে স্বাধীন থাকতে পারেন এমন ইঙ্গিতও ছিল। কাশ্মীর সমস্যার একটি দিক হলএখানকার রাজপুত রাজা হরি সিং সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম প্রজাদের ওপর রাজত্ব করতেন। ভূস্বামীরা ছিল হিন্দু, কৃষকরা মুসলমান। শেখ আবদুল্লার নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল কনফারেন্স অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছিল। স্বাধীনতার আগেই এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল, এধরনের প্রজা আন্দোলনে কংগ্রেসের সমর্থন ছিল।


    পাকিস্তান মনে করে কাশ্মীর যেহেতু মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চল এটি পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। ভারত প্রথম থেকে এই যুক্তির বিরোধিতা করে এসেছে। ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হলেও ভারত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ভারতে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী বসবাস করেন, পাকিস্তানের চেয়ে ভারতে বেশি মুসলমান বাস করেন। ধর্মের ভিত্তিতেকাশ্মীর পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হলে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে। দুটি কারণে কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ভারতে যোগ দেবার কথা বলেছিলেন। ভারত হল গণতান্ত্রিক দেশ, ভারতে যোগ দিলে কাশ্মীরের মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার লাভ করবে। দ্বিতীয়ত, কাশ্মীর ভারতের বিশাল বাজার পাবে, অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, কাশ্মীরে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনধারা গড়ে উঠবে। শেখ আবদুল্লা দ্বিজাতি তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না।

  

   ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে নেহরু সরকার কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লার সঙ্গে দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষর করে তাঁকে কয়েকটি বিশেষ অধিকার দিয়েছিল। এই ধরনের সুযোগসুবিধা ভারতীয় সংবিধান অন্য কোনো অঙ্গরাজ্যকে দেয়নি। কাশ্মীরের শাসনব্যবস্থার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী, গভর্নরের উপাধি হয় সদর-ই-রিয়াসত। এই সরকারের ওপর ভারত সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ‌‌।


 ভারতের পক্ষ থেকে কাশ্মীরসহ সব দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, ভারত সরকার বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগও নিয়েছে। জলসরবরাহ নিয়ে সমস্যা আছে, সীমান্ত নিয়ে কয়েকটি ছোটোখাটো বিরোধ আছে (যেমন কচ্ছের রান, সিয়াচেন প্রভৃতি)। পাকিস্তান সব সমস্যা সমাধানের আগে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান দাবি করে বসে আছে। অস্বীকার করা যায় না মার্কিন কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং পাকিস্তানের সঙ্গে তার সামরিক সম্পর্ক এই সমাধানের পথে বাধার সৃষ্টি করেছে। ভারত ও পাকিস্তান আজও এই সমস্যার সমাধান খুঁজে পায়নি। চারবার উভয় দেশের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে লড়াই হয়েছে (১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৭১, ১৯৯৯)। দুই দেশ এখন আণবিক অস্ত্রের অধিকারী, কোনো দেশই নিজের অবস্থান থেকে সরতে রাজি নয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাশ্মীরের জনগণের অধিকারের প্রশ্নটি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top