StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

রুদ্রদামনের কৃতিত্ব

রুদ্রদামনের কৃতিত্ব :



  চস্টনের মৃত্যুর পর তাঁর পৌত্র রুদ্রদামন মহাক্ষত্রপ পদে অভিষিক্ত হন বীর, প্রজানুরঞ্জক ও ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক এই বিদেশী শাসকের শাসনকালে বিশদ বর্ননা পাওয়া যায় ১৫০ খ্রিঃ উৎকীর্ণ তাঁর জুনাগড় লেখ থেকে । কাদমক বংশীয় এই শাসকের জুনাগড় লেখ-এর কয়েকটি উক্তি নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে । কোথাও বলা হয়েছে যে, তিনি মহাক্ষত্রপ পদ নিজেই উপার্জন করেছেন । আবার কোথাও তিনি বলেছেন যে, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে তাঁকে রাজা বলে স্বীকার করেছেন । অর্থাৎ যে পদ তিনি নিজের অর্জিত বলে দাবি করেছেন অন্যত্র এই পদ তিনি অন্যের দান বলে স্বীকার করেছেন । তাছাড়া যে মহাক্ষত্ৰপ পদ তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন, তা তিনি নিজের বাহুবলে অর্জন করেননি । সম্ভবত তিনি এরকম দাবি করেছেন পশ্চিমভারতে ক্ষত্রপ আধিপত্য পুনরুদ্ধারে তাঁর পিতামহকে সাহায্য দানের কথা ভেবে ।


   তবে পশ্চিম ভারতের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে যে রুদ্রদামনের অধিকার ছিল তা, *জুনাগড় লেখ থেকেকে জানা যায়। তার অধিকৃত অঞ্চল গুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল – আকর ( পূর্ব মালব), অনুপ বা নীবৃৎ (নর্মদা অববাহিকার মান্ধাতা), কুক্কুর (নিম্ন সিন্ধু ছিল আবন্তী (পশ্চিম পশ্চিম বিন্ধ্য পর্বতমালার মধ্যবর্তী অঞ্চল), আনত (দ্বারাকা অঞ্চল), সুরাষ্ট্র, শ্বভ্র (সবরমতী অববাহিকা), কচ্ছ, মরু (মারোয়ার), সিন্ধু (নিম্ন সিন্ধু উপত্যকার পশ্চিমাঞ্চল), সৌবির (নিম্ন নম্ন সিন্ধু উপত্যকার পূর্বাঞ্চল), অপরান্ত (উত্তর কঙ্কন), এবং নিষাদ (পশ্চিম বিন্ধ্য ও আরাবল্লী পার্বত্য অঞ্চল) বলাবাহুল্য যে, এই সমস্ত অঞ্চল তিনি সম্ভবত তাঁর পিতামহের শাসনকালেই জয় করেছেন ।



    যেসমস্ত শত্রুদের তিনি পরাজিত করেন তাদের সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় নি । জুনাগড় লেখ থেকে রুদ্রদামনের প্রতিপক্ষ হিসাবে সাতকর্মী এবং যৌধেয় গণের বিষয়ে জানা যায় । সাতকর্মীকে পরাজিত করে তিনি সম্ভবত আকর, আবর্ত্তী, অনুপ, অপরান্ত, সুরাষ্ট্র ও আনত পুনরুদ্ধার করেন । রুদ্রদামন দাবি করেছেন দক্ষিণাপথরাজ সাতকর্মীকে একবার নয় পর পর দু’বার পরাজিত করেছিলেন । সাতকর্মীর সঙ্গে তার নিকট সম্পর্ক থাকার ফলে তিনি তাকে সংহার করেননি । সম্ভবত গৌতমীপুত্রের র কন্যার ি বশিষ্টপুত্র সাতকর্মীর সঙ্গে রুদ্রদামন তাঁর বশিষ্টপুত্র সাতকনীর উল্লেখ আছে। অনেকেই বিবাহ দিয়েছিলেন । কাহ্নেরীতে পাওয়া একখানি লেখতে মনে করেন রুদ্রদামনের প্রতিপক্ষ গৌতমীপুত্র সাতকনী নন, তিনি হলেন বাশিষ্টীপুত্র পুলুমায়ি । কাহেরীর লেখতে যে বাশিষ্টীপুত্র সাতকনীর উল্লেখ আছে তিনিই আসলে পুলুমায়ি । যৌধেয় গণের বিরুদ্ধে বিজয়লাভকেও রুদ্রদামন তাঁর শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব বলে চিহ্নিত করেছেন । যৌধেয়গণ সম্ভবত দক্ষিণ পাঞ্জাবের সন্নিহিত এলাকায় রাজত্ব করতেন । যৌধেয়দের তিনি পরাজিত করলেও তাদের রাজ্য অধিগ্রহন করেছিলেন বলে মনে হয় না ।




   রুদ্রদামন কেবলমাত্র রণনিপুন রাজনীতিক ছিলেননা উচ্চশিক্ষিত, কৃষ্টি বান, মানবহিতেশি প্রশাসকও ছিলেন। প্রথম বছরে জুনাগড়ের কাছে সুদর্শন হ্রদের বাঁধে অতিবৃষ্টির ফলে ফাটল ধরে । ছিলেন ই কেবলমাত্র রণনিপুন রাজনীতিক ছিলেন না, উচ্চশিক্ষিত, কৃষ্টিবান, মানবহিতৈষী প্রশাসকও চন্দ্রগুপ্ত কর্তৃক নির্মিত এবং মহামতি অশোক কর্তৃক সযত্নে লালিত এই হ্রদ এর সঞ্চিত জলরাশি মৌর্য বেরিয়ে আসায় কৃষির ক্ষেতখামারগুলি জলাভাবে মরুপ্রায় হয়ে যায় । ফলে কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হয় । এই অবস্থায় তিনি তার কয়েকজন পদস্থ কর্মচারীকে পাঠিয়ে কোনো কাজ না হওয়ায় সুবিশাখকে আনত সুরাষ্ট্র এর প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব দেন। তৎপরতার সঙ্গে জলাধারটির নবনির্মাণ ঘটে, হ্রদটির বাঁধ তিনগুণ দৃঢ় ও বিস্তৃত করা হয় । এই জলাধার সংস্কার করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হলেও বাড়তি করভার চাপিয়ে প্রজাদের তিনি কষ্ট দেননি ।

   



 প্রজাদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি তাঁর সতর্ক দৃষ্টি ছিল । শিক্ষার প্রতিও তাঁর আগ্রহ ছিল সর্বজনবিদিত । সংস্কৃত ভাষায় গদ্য ও পদ্য রচনা করে খ্যাতিলাভ করেন । কিন্তু তাঁর লেখা পাওয়া যায় নি ৷ জুনাগড় লেখটিও সংস্কৃত ভাষায় রচিত, সংস্কৃত ছাড়াও ব্যাকরণ, রাজনীতি, সঙ্গীত, তর্কবিদ্যা প্রভৃতি জ্ঞানচর্চায় তাঁর দখল ছিল । প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতির এক পীঠস্থান হয়ে ওঠে উজ্জয়িনী । ১৫০ খ্রিঃ পর কোনো এক সময়ে রুদ্রদামনের মৃত্যু হয়েছিল ।




Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *