StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

অজন্তা গুহাচিত্র

অজন্তা গুহাচিত্র:

  মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ থেকে ৬৭ মাইল দূরে বাগোডা নদীর তীরে বিভিন্ন পর্যায়ে (খ্রিস্ট-পূর্ব ২০০ – ৬০০ অব্দ) ৪০ থেকে ১০৫ ফুট উচ্চতায় পূর্ব থেকে পশ্চিমে অজন্তার গুহাগুলি বিন্যস্ত। জলগাঁও স্টেশন থেকে এর দূরত্ব ৩০ মাইল এবং ঔরঙ্গাবাদ শহর থেকে ৫৫ মাইল। গুহাগুলি ইন্দ্রিয়াদ্রি নামক একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি পাহাড়ের গা কেটে তৈরি। সারি সারি ২৯টি গুহা এখানে আছে। গুহাগুলির সর্বমোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০০ ফুট। কোনো কোনো গুহার পরিধি প্রায় ৩০০০ বর্গফুটেরও বেশি। গুহাগুলির মধ্যে চারটি চৈত্য এবং অন্যগুলি বিহার।

  অজন্তার প্রতিটি গুহার প্রাচীর বুদ্ধের জীবন চিত্র বা চিত্রের সুশোভিত। চতুর্দিকের পরিবেশে একটি শুদ্ধ স্তম্ভ বা ধ্যান-গম্ভীর ভাব বর্তমান থাকায় এই স্থানটি ধ্যান-ধারনার পক্ষে উপযোগী। অজন্তার প্রাচীর চিত্র বা ফ্রেস্কো ব্যতীত স্তম্ভের পরিকল্পনা, অলঙ্করণ ও চিত্র এত অধিক মাত্রায় করা হয়েছে যে তা অফুরন্ত বলা যায়। উপরের কাষ্ঠ নির্মিত ছাদের পরিকল্পনায় নির্মিত প্রস্তর ছাদের কড়িগুলি বেশ উঁচু করে খোদাই করা হয়েছে। অজন্তায় শিল্পের ত্রিধারা-স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলার যে অপূর্ব সমন্বয় সৃষ্টি হয়েছে তা বিশ্বের অন্য কোনো স্থাপত্যে দেখা যায় না। ভাস্কর্য ও চিত্রকে বিচ্ছিন্ন করে নিলে অজন্তা স্থাপত্যের কোনো মূল্য থাকে না।

  অজন্তার একুশটি গুহার সঙ্গে আরো ৮টি ছোটো কুঠুরি আছে। এই গুহাগুলিকে যদি একুশটি গুহার সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তবে অজন্তার গুহাসংখ্যা সর্বমোট ২৯টি। গুহাগুলির ভিত্তি-নক্সা কার্লে গুহার মত। শুধু একটি গুহার প্রান্তদেশ অর্ধ-গোলাকৃতি না করে চতুষ্কোণ করে নির্মিত হয়েছে।

  স্থাপত্য পরিকল্পনার দিক থেকে অজন্তার গুহাগুলিকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে—১। প্রার্থনা বা উপাসনা গৃহ বা চৈত্য এবং ভিক্ষু বা শ্রমণদের বাসস্থান (বিহার)। চৈত্যগুলির মধ্যে একটি করে ক্ষুদ্রাকার বুদ্ধস্তূপ (ডাঘোবা) নির্মিত হয়। ২৯টি গুহার মধ্যে মাত্র ৫টি গুহা, ৯, ১০, ১৯, ২৬ ও ২১ নং চৈত্যগুহা এবং ১, ২, ৪, ৬, ৭, ১২, ১৬ ও ২০ প্রভৃতি গুহাগুলি বিহার।

   অজন্তার গুহ গুলির ছাদ সমতল। মূল বৃহৎ কক্ষের চারিদিকে পরপর অনেকগুলি ছোটো ছোটো প্রকোষ্ঠ রয়েছে। এগুলি শ্রমণ বা ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য নির্মিত হয়েছে। বাস-কক্ষগুলি ছাড়া কোনো কোনো বিহার-গুহায় পরবর্তীকালে বুদ্ধমূর্তি স্থাপনের জন্য বৃহৎ হলঘরের পিছনের দিকে অপর একটি কক্ষ নির্মিত হয়েছে। পাহাড় কেটে খিলান-স্তম্ভ নির্মাণ প্রায় প্রত্যেক গুহাতেই করা হয়েছে। পাহাড়ের অভ্যন্তরভাগে একটি চতুদোণ কক্ষ। এই কক্ষে প্রবেশ করার জন্য একটি বৃহৎ প্রবেশদ্বার এবং উভয় পার্শ্বে দু’টি গবাক্ষ নির্মিত হয়েছে। গবাদ্বয়ের পাশে প্রবেশ করার জন্য একটি করে ক্ষুদ্র দরজা এবং প্রধান প্রবেশপথের সামনের দিকে একটি আচ্ছাদিত বৃহৎ অলিন্দ রয়েছে। প্রবেশপথ ও গবাক্ষগুলির সুন্দর কারুকার্য খচিত এবং এদের স্থাপত্য ও শিল্প-নির্দেশনা গুপ্তযুগীয়।

    অজন্তা গুহার বেশ কিছু দেওয়ালচিত্র (ফ্রেস্কো) গুপ্তযুগের। পার্সি ব্রাউন অজন্তার গুহাচিত্রগুলিকে চারভাগে বিভক্ত করেছেন—১। গুহা নং ৯-১০ (আনুমানিক ১০০ খ্রিস্টাব্দ), ২। গুহা নং ১০-এর স্তম্ভ (আনুমানিক ৩৫০ খ্রিস্টাব্দ), ৩। ১৬ ও ১৭ নং গুহা (আনুমানিক ৫০০ খ্রিস্টাব্দ) এবং ৪। ১ ও ২ নং গুহা (আনুমানিক ৬২৬-৬২৮ খ্রিস্টাব্দ)। অজন্তায় মোট ২৯টি গুহার মধ্যে ১৬টি গুহায় কম-বেশি ছবি ছিল। কিন্তু এখন মাত্র ৬টি গুহাতে ছবি টিকে আছে। এই ৬টি গুহা হল ১, ২, ৯, ১০, ১৬ এবং ১৭ নং গুহা। এই গুহার ছবিগুলি নানাসময়ে আঁকা এমনকি একটি গুহার বিভিন্ন ছবি আঁকার সময়ের মধ্যেও কয়েকশো বছরের ব্যবধান দেখা যায়। অজন্তার ১৬, ১৭ ও ১ নং গুহার কিছু অংশ ও ২ নং গুহার ছবিগুলি গুপ্ত ও গুপ্ত প্রভাবান্বিত যুগে অঙ্কিত হয়। ৯ ও ১০ নং গুহাতে ছবির প্রথম সূত্রপাত, ১৬, ১৭ ও ১ নং গুহার কিছু অংশে তার চরম উৎকর্য আর সর্বশেষের ২ নং গুহার চিত্রগুলিতে অজন্তার চিত্রশিল্প অবনতির সাক্ষ্য বহন করে।

    অজন্তার ছবিগুলি বিশ্লেষণ করলে এগুলির শিল্পকৌশলের পরিচয় পাওয়া যায়। এখানে শিল্পীরা যে ধূসর রঙের প্রয়োগ করেছেন তা কখনোই আদিম চিত্রশিল্পে ব্যবহৃত হত না। রেখা বা ড্রয়িং না থাকলেও রঙ ব্যবহারের রীতি দেখে অথবা বিভিন্ন রঙ পাশাপাশি সাজানোর কৌশল দেখে শিল্পী মানুষকে আবিষ্কার করা যায়। অর্থাৎ শিল্পীর মন রঙ ব্যবহারে কতখানি উন্নত হয়েছে তার একটা মোটামুটি ধারনা লাভ সম্ভব হয়। রঙ ব্যবহারের এই রীতি, যা আমরা অজন্তা গুহাতে প্রত্যক্ষ করি তা বহুযুগের শিল্পীর সাধনার ফল। ভিত্তি চিত্র বা দেওয়াল চিত্র অথবা ফ্রেস্কোতে অনেক রঙ ব্যবহার যে নিয়মবিরুদ্ধ তা অবশ্য সমস্ত যুগের শিল্পীরাই মেনে চলেন। অজন্তার প্রথম যুগের শিল্পীরা (৯ ও ১০ নং গুহার চিত্রকাররা) ইন্ডিয়ান রেড’, ‘ফিকে সবুজ’, গেরিমাটি, ‘সাদা’ ও ‘কালো’ রঙ দিয়ে তাদের চিত্র রচনার কাজ চালান। নীল রঙের ব্যবহার এযুগে দেখা যায় না। আদিম জাতির গায়ের রঙ কালোর পরিবর্তে তারা ফিকে সবুজ দিয়ে অঙ্কন করেছেন। কতগুলি ত্রিভূজ ও চতুষ্কোনের সাহায্যে পাহাড়কে বুঝিয়েছেন এবং কয়েকটি ঘুর্ণিরেখা একত্র করে মেঘ এঁকেছেন। ৯ নং গুহায় বনের মধ্যে হাতির দলের ও স্তূপ পূজারিদের ছবি এবং ১০ নং গুহায় ষড়দত্ত জাতকের ছবিটি সে যুগের শিল্পীদের চিত্রকলার উৎকৃষ্ট নিদর্শন বহন করে। তবে লক্ষ্যণীয়, এই ছবিগুলির রঙ মোটেই উজ্জ্বল নয়। রঙগুলির মধ্যে একটা মেটে মেটে ভাব দেখা যায়। অবশ্য চিত্রগুলি বহু প্রাচীন হওয়ায় এগুলির ঔজ্জ্বল্য হ্রাস পাওয়াও অসম্ভব নয়।

    অজন্তার শিল্পীরা পদ্মফুল, মৃণাল, পদ্মপাতা ও পদ্মের কুঁড়ির সঙ্গে নানা বাস্তব ও অবাস্তব জন্তুজানোয়ার রচনা করে ছন্দায়িত লতার বাঁধনে সেগুলিকে একত্রে বেঁধেছেন। কোথাও বা পাখির পা-ওয়ালা নরনারী (কিন্নর), কোথাও বা ভীষণ শিংওয়ালা মহিয়, কোথাও বা নানাধরনের ফুল, পাতা ও কাল্পনিক পাখি আবার কোথাও ছোটো ছেলের চিত্র লতার মধ্যে স্থান পেয়েছে। এইসব জীবজন্তু, মানুষ, ফুল, লতাপাতা আলাদ।করে দেখলে দেখা যায় যে, কারুর সঙ্গে কারুর কোনো মিল নেই। শিল্পীদের অঙ্কন কৌশলে লতার বাঁধনে পরা এই বহু বিচিত্র জড় ও জন্তুজানোয়ারগুলি এমন অপূর্ব শোভা ধারণ করেছে যে, দেখলে মনে হয়—এমন না হলেই বেমানান হত। অজন্তার শিল্পীদের এইরূপ দক্ষতা ও সুসামঞ্জস্যের প্রয়োগ বিস্ময়কর। প্রসঙ্গত মনে রাখতে হবে যে, জীব ও জড়ের দেহের রূপ ও রেখা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা না থাকলে এমন আলঙ্করিক রূপ সৃষ্টি অসম্ভব। অমরাবতীর ভাস্কর্যে গল্প বলার বা গল্পের ছবি খোদাই করার যে অবিরাম ধারা ও বহু জনসমাবেশ যে রূপায়ন লক্ষ্য করা যায়, গুপ্তযুগে সেই ধারারই পরিপূর্ণ ছাপ ফুটে ওঠে অজন্তার চিত্রে। গুপ্তযুগের অজন্তার ছবিগুলির রঙের ঔজ্জ্বল্যে, রেখার সাবলীলতায় ও যথাযথ আলোছায়ার সম্পাতে উদ্ভাসিত ও প্রাণবন্ত।

   অজন্তায় কিছু কৌতুক-চিত্রেরও দৃষ্টান্ত আছে। নাক, মুখ, চোখ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকৃত করে শিল্পীরা হাসি উদ্রেকের চেষ্টা করেছেন। ১৭ নং গুহায় এক লোভী ব্রাহ্মণের ছবি আছে; তার সামনের দাঁত ক’টি নেই, মুখে ছাগলের মত দাড়ি। কোথাও মাথা বড় করে, কোথাও বেঁটে মানুষের বিরাট ভুড়ি এঁকে, কোথাও বা হাত-পা সরু-মোটা করে কৌতুক চিত্র আঁকা হয়েছে।


   অজন্তার ছবিগুলির মধ্যে ১ নং গুহায় পদ্মপাণি বোধিসত্ত্বের চিত্রটি সর্বশ্রেষ্ঠ। ছবিটির শোভায় গুহামন্দিরটি আলোকিত হয়ে আছে। বোধিসত্ত্বের মনিখচিত সোনার কিরীট রূপায়নে শিল্পী অপরিমেয় দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন। চিত্রটিতে গেরিমাটি রঙের সার্থক প্রয়োগ করা হয়েছে। ঐ রঙই কম-বেশি করে এমন একটি ঝলমলে ভাবের প্রকাশ করা হয়েছে যে মনে হয়, অনেক কারুকার্য করাহয়েছে। বোধিসত্ত্বের অর্ধনিমীলিত চোখের দৃষ্টিতে, তাঁর নাক, মুখ, ঠোঁট ও চিবুকের পুরম্ভ গড়নে একটি স্বর্গীয় ভাব ব্যক্ত হয়েছে। দেহে অলঙ্কারের বাহুল্য নেই, বাঁ’হাতটি ‘গজগুন্ডাকার’, কাঁধের উপর মণিময় উপবীতটির অবস্থান বোধিসত্ত্বের পূণ্য দেহের শোভা বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। ডান হাতে একটি পদ্মফুল এমন আলতোভাবে ধরা আছে যে, হাতটিও পদ্মের মতই পেলবতায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে। শিল্পশাস্ত্রে ‘পদ্মহস্ত’-র যে কথা রয়েছে, এখানে তার সার্থক রূপায়ণ ঘটেছে। চিত্রটির পটভূমিকায় কয়েকটি মানুষ ও জন্তু ফিকে সবুজ রঙের পোঁচে একটি স্নিগ্ধভাব ধারন করেছেন।

    অজন্তার আরেকটি বিশেষত্ব হল চিত্রিত ছাদ। দেওয়ালের ছবিগুলি দেখতে দেখতে যদি উপরের দিকে চোখ পড়ে তখন মনে হয় যেন একটি চিত্রিত চাঁদোয়ার নীচে দাঁড়িয়ে আছি। ছাদেও রঙ ও রেখার বিচিত্র সমারোহ লক্ষ্য করা যায়। ছাদের ঠিক মাঝখানে একটি আলঙ্কারিক পদ্মকে ঘিরে আছে অলঙ্করণে শোভিত ৫-৬টি গোল মন্ডল। এগুলির মধ্যে কোথাও শঙ্খ ও পদ্মলতার কেয়ারী, কোথাও সাদা বকের পাঁতি, কোথাও কিন্নর-কিন্নরীদের শোভাযাত্রা, রাজহাঁস, শুকপাখি, নানান ভঙ্গীতে বসা পুরুষ ও স্ত্রীর মূর্তির ছবিও ছাদের অলঙ্করণগুলির মধ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

  অজন্তার ছবিগুলি পাথরের দেওয়ালে ‘টেম্পারা’ রঙে আঁকা। দেওয়ালে একটি ‘আবরক’ বা ‘বজ্রলেপ’ দিয়ে তার উপর ছবিগুলি আঁকা হয়েছে। শিরিষের আঁটা, কাদা, গোময় ও পাথরের গুড়ো, ছোটো করে ছাঁটা পশুর লোম ও ধানের তুষ তার সঙ্গে মিশিয়ে তিন থেকে ২০মিলিমিটার পর্যন্ত পুরু বজ্রলেপ দেওয়া হত। এরপর এর উপর একটি খুব পাতলা চুনের আস্তরণ দেওয়া হত। চুনের প্রলেপ ভিজে থাকতে তার উপর বিভিন্ন রঙের প্রয়োগ করা হত এবং আলতো ভাবে পালিশ করা হত। পড়ে প্রথমে বহিঃরেখা অঙ্কন করা হত এবং তার উপর উঁচু-নীচু ধারনা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন রঙ তুলি দিয়ে লাগানো হত। ছবির জমি ভিজে থাকতে রঙ ও রেখার ব্যবহার খুবই কঠিন। কারণ রঙগুলি শুকিয়ে গিয়ে কী হবে তা আগে থেকে আন্দাজ করে নেওয়া অভিজ্ঞতাসাপেক্ষ। যদি জমিতে চুনের পরিমাণ বেশি হয়ে যায় তবে রঙগুলি বিবর্ণ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক অজন্তার শিল্পীরা এইদিকে নজর রেখেছিলেন। তুলির টানে রঙের প্রয়োগ এমনভাবে করা হয়েছিল যাতে চিত্রাবলীতে ত্রিমাতৃকতাগুণ যুক্ত হয়েছে। অজন্তার চিত্রগুলি ভাস্কর্যের মানে উন্নীত হয়েছিল। দর্শকের মনে হয় যেন পৃষ্ঠভূমি থেকে চিত্রিত বিষয়বস্তু সামনের দিকে এগিয়ে এসেছে, যাকে ক্র্যামরিশ বলেছেন—‘the direction forthcoming’। শিরিষ, রজন, গঁদ, ডিমের হলদে অংশ—কী দিয়ে রঙগুলি গোলা হত তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। রঙগুলি ছিল অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেটে, গেরিমাটি, ইন্ডিয়ান রেড, শক্ত খড়িমাটি, কালো ও নীল।

    অজন্তার চিত্রগুলিকে তিনভাগে বিভক্ত করা যায়—১। অলঙ্করণ, ২। মূর্তিচিত্রন ও ৩। দৃশ্য বর্ণন। ১। অলঙ্করণের মধ্যে ছিল পৌরাণিক ও কাল্পনিক প্রাণীদের সুষমামন্ডিত আকৃতি-চিত্রন। উদাহরণ ঃ গরুর, যক্ষ্ম, গন্ধর্ব ও অপ্সরা। ২। মূর্তিচিত্রনে প্রাধান্য পেয়েছে বুদ্ধও বোধিসত্ত্বের মুর্তি। উদাহরণ, ১ নং গুহায় বোধিসত্ত্ব, পদ্মপানি অবলোকিতেশ্বরের চিত্রমূর্তি। ৩। দৃশ্য-বর্ণনের মধ্যে পড়ে প্রধানত জাতকের কাহিনীচিত্রন। তবে কতগুলি প্রাসাদ দৃশ্য আছে, যেমন ১ নং গুহার গদিতে শায়িতা নারী, নর্তকীবৃন্দ, অশ্বারোহনে রাজার বহির্গমন ও একটি প্রাসাদ। ঐতিহাসিক দৃশ্য রয়েছে ১৬ নং গুহায় মুমুর্ষু রাজকন্যা, নন্দের পরিত্যক্তা পত্নী, রাজগৃহের পথে মগধের রাজা ও বুদ্ধের চিত্রে। দরবারের দৃশ্য রয়েছে ১ নং গুহায় পারস্যের দূতের রাজদরবারে আগমন দৃশ্যে। জন গ্রিফিথের ভাষায় বলা হয় – “Here we have art with life in it. মানুষের মুখের বিভিন্ন অভিব্যক্তি, শ্রীমন্ডিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সক্রিয়তা, প্রস্ফুটিত ফুল, উড়ন্ত পাখি, ভারবাহী, যুযুধান অথবা লম্ফনরত পশু—এইসবই গ্রহণ করা হয়েছে প্রকৃতি থেকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *