StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

চীনের সাম্যবাদের বিকাশের ইতিহাসে লং মার্চ এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর

চীনের সাম্যবাদের বিকাশের ইতিহাসে লং মার্চ এর গুরুত্ব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

চীনের সাম্যবাদের বিকাশের ইতিহাসে লং মার্চ হল একটি অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা নেই। এর মধ্যে রয়েছে মহাকাব্যিক গাম্ভীর্য ও ব্যাপ্তি, আদর্শের জন্য অনান্য ত্যাগ ও তিতিক্ষার নজির, দুঃখবরণের তুলনাহীন দৃষ্টান্ত। ‘একলক্ষ লোক ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ১৫ অক্টোবর দক্ষিণ-পূর্ব চিনের কিয়াংসি প্রদেশ থেকে লং মার্চ এর যাত্রা শুরু হয়, পরের বছর অক্টোবর মাসে (১৯৩৫) মাত্র আট হাজার লোক শেনসি প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে পৌঁছে যায়। দুর্গম অরণ্য, খরস্রোতা নদী, পাহাড়, গিরিপথ পেরিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছেছিল মাও সে তুং এর অধীনস্থ সাম্যবাদী গোষ্ঠী । পথে প্রাকৃতিক দুর্যোগে, অনাহারে, রোগে, শত্রুপক্ষের আক্রমণে বেশিরভাগ মানুষ মারা যায়। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাস থেকে শেনসি প্রদেশের ইয়েনান হল কমিউনিস্ট পার্টির সদর কার্যালয়।

১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিক থেকে জাতীয়তাবাদী সৈন্যবাহিনী সাম্যবাদীদের ওপর প্রবল আক্রমণ চালাতে থাকে, ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যভাগে কমিউনিস্ট বাহিনী বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছিল। কমিউনিস্ট বাহিনীর বিপর্যয়ের কারণ হল লি তের ভ্রান্ত সামরিক রণনীতি। তিনি জাতীয়তাবাদী বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরের নীতি অনুসরণ করেন, মাওয়ের গেরিলা যুদ্ধ পদ্ধতি তাঁর পছন্দ ছিল না। মাও রেড আর্মিকে ছোটো ছোটো গোষ্ঠীতে ভাগ করে অবরোধ ভাঙার কৌশল অনুসরণের পক্ষপাতী ছিলেন।

অপরদিকে লি তে চেয়েছিলেন রেড আর্মি ঐক্যবদ্ধভাবে অবরোধ ভেঙে বেরিয়ে যাবে। কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা আরও নির্দেশ দেন যে শুধু সমর্থদেহীরা কিয়াংসি ছেড়ে চলে যাবে, আহত ও অসুস্থরা পুরোনো ঘাঁটিতে রয়ে যাবে। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবর লং মার্চ শুরু হয়, এতে যোগ দিয়েছিল ৮৫,০০০ সৈনিক, ১৫,০০০ পার্টি ও সরকারের লোক এবং উচ্চপদস্থদের ৩৫ জন স্ত্রী। মাওয়ের অনুগামীদের মধ্যে বেশ কিছু লোক, কয়েকজন নেতা ও মাওয়ের দুজন শিশু সন্তান ঘাঁটি রক্ষার জন্য রয়ে যায়। সুউ চেন উই ও চু চিউ পাই কিয়াংসির ঘাঁটি রক্ষার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ নভেম্বর জাতীয়তাবাদীরা জুই চিন দখল করে নিয়েছিল।

Long March
লং মার্চ (Long March)

লং মার্চের প্রথম পর্বে এর নেতৃত্ব দেন লি তে, পো কু ও চৌ-এন-লাই। সৈন্যবাহিনীর মনোবল অনেকখানি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, হতাশা ও অবসাদ দেখা দিয়েছিল। জাতীয়তাবাদী সৈন্যবাহিনী কমিউনিস্ট বাহিনীর ওপর এমন তীব্র আক্রমণ ও গোলাবর্ষণ করেছিল যে লি ও পোর নেতৃত্বের প্রতি অভিযাত্রীদের আস্থা কমেছিল। কমিউনিস্টদের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ও সামরিক অফিসার নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন। কমিউনিস্ট বাহিনী জাতীয়তাবাদীদের প্রথম তিনটি আক্রমণ সাফল্যের সঙ্গে প্রতিহত করেছিল, কিন্তু শেষের দিকে, বিশেষ করে পঞ্চম আক্রমণে পর্যুদস্ত হয়েছিল।

পলিটব্যুরোর সদস্য ও রেড আর্মির রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান ওয়াং চিয়া সিয়াং প্রথম লি ও পোর বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করেন। লি ও পোকে সরিয়ে দেবার কথা তিনি মাওকে বলেছিলেন। মাও এদের সরিয়ে দিতে রাজি হন তবে সতর্কভাবে পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যেতে বলেন। ওয়াং পিপল কমিসারদের চেয়ারম্যান চ্যাং ওয়েন তিয়েন, রেড আর্মির কম্যান্ডার চু-তে এবং বিপ্লবী মিলিটারি কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান চৌ-এন-লাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। এরাও লি-র নেতৃত্ব সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েন।

১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে লিপিংয়ে পলিটব্যুরোর সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে পলিটব্যুরোর পূর্ণ অধিবেশন ডেকে সামরিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। লং মার্চ এবং রেড আর্মির বিপর্যয় নিয়ে সভায় আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। দুটি প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে—পার্টির বেশিরভাগ সদস্য নেতৃত্বের পরিবর্তন দাবি করে, আর মাওয়ের প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধি পায় কারণ তাঁর চিন্তাভাবনা সঠিক বলে গৃহীত হয়।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে রেড আর্মি কিয়াওচাও প্রদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সুন্যিতে প্রবেশ করেছিল, পার্টি এখানে তার কার্যালয় স্থানান্তরিত করে। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫-১৮ জানুয়ারি এখানে পলিটব্যুরোর অধিবেশন বসে। এখানে পার্টি ও সৈন্যবাহিনীর সমস্ত উচ্চস্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশনে সভাপতি ছিলেন পো কু, তিনি রাজনৈতিক প্রতিবেদন পেশ করার পর চৌ এন-লাই সামরিক প্রতিবেদন পেশ করেন। এরপর মাও সে-তুঙ লি পোর সামরিক নেতৃত্বকে আক্রমণ করেন । ওয়াং চিয়া সিয়াং, চ্যাং ওয়েন তিয়েন, চৌ-এন-লাই ও চু-তে মাওকে সমর্থন করেন। পো কু নিজের বক্তব্যকে সমর্থন করে প্রত্যুত্তর দিলেও লি ও পো ক্ষমতাচ্যুত হন।

সুন্যির অধিবেশনে থেকে মাওয়ের উত্থান শুরু হয়, নতুন সামরিক কমিটিতে মাও, চৌ ও -ওয়াং সদস্য হন। চ্যাং-এর সহায়তা নিয়ে মাও সৈন্যবাহিনীর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেন। সুন্যি অধিবেশনে মাও দল ও সৈন্যবাহিনীর ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব লাভ করেননি, তবে তার উত্থান চলতে থাকে অপ্রতিহত গতিতে। চ্যাং কুয়ো তাও মাওয়ের সমালোচনা করে বলেছিলেন যে শেনসির চেয়ে সিকাং অথবা তিব্বত আরো ভালো সুরক্ষিত ঘাঁটি হতে পারত। সাম্যবাদী দলে ভাঙন দেখা দেয়, চ্যাং সিকাং-এর দিকে এগিয়ে যান, মাও তাঁর অনুগত বাহিনী নিয়ে শেনসির দিকে এগিয়ে যান। কাও কাং ও লিউ চি তান সেখানে কমিউনিস্ট ঘাঁটি তৈরি করে রেখেছিলেন।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে রেড আর্মি উচিচেনে গিয়ে হাজির হয়। বহু ক্লেশ ও দুঃখবরণ করে, পাহাড়, নদী ডিঙিয়ে অভিযাত্রীরা শেনসিতে পৌঁছেছিল। হোলুং, চ্যাং কুয়ো তাও ও চু-তে তাদের অনুগামীদের নিয়ে মাও-এর বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিলে এদের সংখ্যা দাঁড়াল ৩০,০০০। ইয়েনানে ঘাঁটি গড়ে উঠল ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে, এখানে মাও কমিউনিস্ট পার্টি ও সৈন্যবাহিনী গঠন করেন, তাত্ত্বিক আলোচনা শুরু করেন। তিনি হলেন কমিউনিস্ট পার্টি ও সৈন্যবাহিনীর প্রধান, সোভিয়েত রাশিয়া তাঁর কর্তৃত্ব স্বীকার করে নিয়েছিল, চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তম পার্টি কংগ্রেস ডাকার দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয়।

মূল্যায়ন 

চীনের সাম্যবাদের বিকাশের ইতিহাসে লং মার্চ এর গুরুত্ব অনন্য, তুলনাহীন। আদর্শের প্রতি যে নিষ্ঠা ও আনুগত্য কমিউনিস্টরা দেখিয়েছিলেন তার নজির অন্য কোনো দেশে পাওয়া যায় না। সুন্যি কনফারেন্সে লি ও পো ক্ষমতাচ্যুত হন, মাও ক্ষমতা লাভ করেন। মাওয়ের পথ, রণকৌশল, যুদ্ধ পদ্ধতি ও রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা কমিউনিস্ট পার্টির নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। লং মার্চের মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি কৃষক ও শ্রমিকদের সমস্যার সঙ্গে পরিচিত হয়, দেশের সমস্ত মানুষের কাছে সাম্যবাদের আদর্শ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। দলে দলে কৃষক, শ্রমিক ও বুর্জোয়ারা জাতীয়তাবাদীদের পক্ষ ত্যাগ করে কমিউনিস্টদের সমর্থন করতে থাকে। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, কুয়োমিনটাং সৈন্যবাহিনীর অনেক সদস্য কমিউনিস্ট আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়, রেড আর্মিতে যোগ দেয়। কমিউনিস্ট পার্টি রণক্ষেত্রে জয়ী না হলেও নৈতিক জয় লাভ করেছিল।

সাম্যবাদী আন্দোলনের ইতিহাসে এর প্রভাব কম নয়। লং মার্চের মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি চিনের মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছিল। নতুন জীবনের আশায় দলে দলে লোক ইয়েনানের ঘাঁটিতে গিয়ে আশ্রয় নিতে থাকে। সাম্য ও ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত, দুর্নীতিমুক্ত শোষণহীন নতুন সমাজব্যবস্থা তাদের আকৃষ্ট করেছিল। চীনের সাম্যবাদের বিকাশের ইতিহাসে লং মার্চ এর গুরুত্ব অপরিসীম।

FAQ ( Frequently Asked Questions )

লং মার্চ কোন দেশের ঘটনা

লং মার্চ চীন দেশের ঘটনা।

লং মার্চের নেতৃত্ব কে দেন

লং মার্চের নেতৃত্ব মাও সে তুং দেন। 

লং মার্চ কত খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়

লং মার্চ ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ১৫ অক্টোবর শুরু হয়।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *