StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর অবদান। অভ্যন্তরীণ সংস্কার।

ফ্রান্সের ইতিহাসে কনসাল হিসেবে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর অবদান ।

 Or
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর অভ্যন্তরীণ সংস্কার।
 

বিদেশি রাষ্ট্র জোটের অবসানে ফ্রান্স স্বস্তি বোধ করলে, নেপোলিয়ান কনসাল হিসেবে ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ সংস্কার কাজে মনোযোগ দিলেন।





শাসন সংস্কার এর উদ্দেশ্য:

 নেপোলিয়ন ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী। প্রথম কনসাল হিসেবে তিনি এক নায়ক হয়ে ওঠেন। তার অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও শাসন এর উদ্দেশ্য ছিল-(1) জনহিতকর কাজ করে জাতির কৃতজ্ঞতা লাভ করা।(2) প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করা। (3)শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করে শক্তিশালী শাসন প্রবর্তন করা।





শাসন বিভাগীয় সংস্কার: 

শাসন বিভাগের প্রতিটি ক্ষেত্রে নেপোলিয়ান নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন। তাই তিনি দেশের প্রচলিত স্থায়িত্ব শাসন প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষমতা খর্ব করতে লাগলেন। তিনি সমগ্র ফ্রান্সকে 83 টি Department বা প্রদেশে বিভক্ত করে প্রতিটি প্রদেশকে আবার ছোট ছোট অংশে ভাগ করেন ।এগুলির শাসন ভার দেওয়া হয় prefect, sub- prefect , এবং mayor প্রমুখ কর্মচারীর ওপর, এতে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে এলেও স্থায়িত্ব শাসন খর্ব হলো। নেপোলিয়ান নির্বাচনের পরিবর্তে মনোনয়ন পক্ষপাতী ছিলেন ফলে
Department,cantam, communal prefect,sub-prefect এবং Mayor নিজেরাই মনোনীত করত।



অর্থনৈতিক সংস্কার:

অর্থনৈতিক সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য ছিল-(1) পুরনো ব্যবস্থার আর্থিক বিধিব্যবস্থা এবং (2) কর প্রথা দূর করা। এছাড়াও তিনি কঠোরভাবে কর সংগ্রহ এবং জয়ী দেশ গুলি থেকে বাধ্যতামূলকভাবে অর্থ আদায়ের মাধ্যমে ফ্রান্সের ঘাটতি বাজেটে ভারসাম্য আনলেন। ডাইরেক্টর আমলে দুর্নীতির ফলে ফ্রান্সে যে অরাজকতা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল তা দূর করার জন্য তিনি1800 খ্রিস্টাব্দে “Bank of France”প্রতিষ্ঠা করেন। বণিক সংঘ কে পুর্নগঠিত করে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ ঘটান এবং কৃষি ও শিল্পের অগ্রগতির জন্য তিনি গিল্ড ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করেন। 




ধর্মীয় সংস্কার: 

ধর্মের ক্ষেত্রে দেশের জটিল সমস্যার সমাধান করার জন্য নেপোলিয়ান রোমান ক্যাথলিকদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে চেয়েছিলেন। এই জন্য তিনি 1801 সালে পভ সপ্তম পায়স এর সঙ্গে এক চুক্তিতে আবদ্ধ হলেন। ফলে ফ্রান্সে ধর্মীয় ঐক্য আছে। নেপোলিয়নের ধর্মীয় সংস্কার-এর মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশে ধর্মীয় বিভেদ দূর করা। 




 জনহিতকর কার্যাবলী: 

নেপোলিয়ন নানা জনহিতকর কাজের উদ্যোগ নেন। প্রাচীন সৌদ গুলির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি প্যারিসে নতুন সৌধ নির্মাণ করা হয়। বড় বড় রাস্তা নির্মাণ, সেতু তৈরি, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বন্দরের উন্নতি ইত্যাদি দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়। ফলে শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং অভ্যন্তরীণ ও বহিঃ বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। 




 কাজের স্বীকৃতি:

নেপোলিয়ান কাজের দক্ষতার স্বীকৃতি ও পুরস্কার স্বরূপ নাগরিকদের মধ্যে বিশিষ্টদের “লিজিয়ন অব অনার” নামে বিশেষ সম্মান এর ব্যবস্থা করেন(1802)। এতে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ আঘাত পেল, ফলে বৈষম্য বাড়ল কিন্তু এর দ্বারা সামরিক বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রেই কর্মের উদ্যোগ বৃদ্ধি পেল।




সরকারি নিয়ন্ত্রণ: 

নেপোলিয়ান কঠোর সরকারি নিয়ন্ত্রণ বলব বলবৎ করলেন। জনসাধারণের কার্যকলাপের উপর দৃষ্টি রাখার জন্য পুলিশ ও গুপ্তচর ব্যবস্থাকে সংগঠিত করা। জ্যাকোবিন ও রাজতন্ত্রীদের দমন করা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি কাজের প্রত্যক্ষ প্রমাণ।




 শিক্ষা সংস্কার:

নেপোলিয়ন শিক্ষা সংস্কারেও বিশেষ মনোযোগী ছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষা,মাধ্যমিক ,পেশাগত শিক্ষা ,কারিগরি বিদ্যালয় ,এবং সামরিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা “University of France”দ্বারা নিয়ন্ত্রণ তার উল্লেখযোগ্য সংস্কার। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি ছিল পৌরসভার হাতে এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল সরকারি-বেসরকারি হাতে। ডেভিড ক্রণিন লিখছেন, 1866 খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ছিল 377 (বেসরকারি) এবং 370(সরকারি)। প্যারিস শহর এই 12 টি আইন বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। নেপোলিয়নের শিক্ষা সংস্কারের উদ্দেশ্য ছিল, রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের আনুগত্য বৃদ্ধি করানো। 




 আইন সংস্কার:

 নেপোলিয়নের আইন সংস্কার ছিল খুবই উল্লেখযোগ্য। তিনি 1804 খ্রিস্টাব্দে সংকলন করেন সিভিল কোড যা পরবর্তীকালে কোড নেপোলিয়ন নামে পরিচিতি লাভ করে। কোড নেপোলিয়ন এই আইনে তিনি দেখেছেন, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, ধর্মীয় সহনশীলতা, ভূমিদাস প্রথার বিলোপ, কৃষকদের মালিকানা স্বত্ব, সামন্ততন্ত্রের বিলাপ । কোড সংকলনের সাহায্য করেছিলেন Tronchet এবং Portales। মোট 2287 টি কোড সংকলিত হয়।




 মূল্যায়ন: 

 নেপোলিয়নের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে অধিকাংশ ঐতিহাসিক তার প্রশংসা করেছেন।H.A.L Fisher এর মতে, তার বিশাল সাম্রাজ্যে ছিল ক্ষণস্থায়ী কিন্তু ও সামরিক সংস্কার গুলি শক্ত পাথরের ভিতের ওপর স্থায়ীভাবে নির্মিত। বেডওয়ে বলেছেন, যেখানে নেপোলিয়ান বা সৈন্যদল গেছেন সেখানেই পুরনো ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অর্থাৎ, নেপোলিয়নের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের প্রধান লক্ষ্য এই যে, তার বিপ্লবের ধ্বংসাত্মকরুপকে প্রশমিত করে সৃষ্টিশীল দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল।

                               






Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *