আসিয়ানের (ASEAN) মৌলিক নীতি গুলি উল্লেখ করো।
আধুনিক পৃথিবীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য আঞ্চলিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এমন কি সংস্কৃতিগত এবং নিরাপত্তাজনিত সহযোগিতা এবং সহাবস্থানমূলক সংগঠন গড়ে তোলা। ভোগোলিক প্রেক্ষাপটে প্রায় সমগ্র বিশ্ব জুড়েই এই প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। এরূপ সংগঠন ASEAN বা আসিয়ানের মৌলিক নীতি গুলি নীচে উল্লেখ করা হল।
এশিয়া মহাদেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক সংগঠন আসিয়ান। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন্স এবং সিঙ্গাপুর ১৯৬৭ সালের ৮ ই আগস্ট থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক নগরে ( পররাষ্ট্র মন্ত্রকের দফতরে) নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে আসিয়ান বা Asean গড়ে তোলে। asean এর পূর্ণরূপ বা পুরো নাম হলো Association of South East Asian Nations ।
![]() |
আসিয়ান (ASEAN) |
ব্যাংককের এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপরোক্ত পাঁচটি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা ইন্দোনেশিয়ার আদম মালিক, ফিলিপাইন্সের নার্কিসো রামোস, মালয়েশিয়ার আবদুল রাজাক, সিঙ্গাপুরের এস রাজারতনম, এবং থাইল্যান্ডের থানাত খোমান তাদের উপস্থিতিতে ঘোষিত হয় ব্যাংকক বা আসিয়ান ঘোষণা। পরে ১৯৮৪ সালে ব্রুনেই দারু সালাম (সংক্ষেপে ব্রুনেই), ১৯৯৫ সালে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ভিয়েতনাম, ১৯৯৭ সালে লাওস ও মায়ানমার এবং ১৯৯৯ সালে কম্বোডিয়া আসিয়ানের সদস্যপদ গ্রহণ করে। ফলে বর্তমানে asean এর সদস্য সংখ্যা দশ। আসিয়ানের কাজকর্ম পরিচালিত হয় স্থায়ী সচিবালয় ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা শহর থেকে।
১৯৬৭ সালের ব্যাংকক ঘোষণায় আসিয়ানের মুখ্য উদ্দেশ্য বর্ণনা করে বলা হয় যে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রগতি এবং আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখা তথা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রাখা ও প্রসারের উদ্দেশ্যে আসিয়ান কাজ করবে।
১৯৭৬ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত আসিয়ানের প্রথম সম্মেলনে আসিয়ানের মৌলিক নীতি গুলি ঘোষণা করার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলি মৈত্রী ও সহযোগিতার চুক্তি (Treaty of Amity and Cooperation / TAC) স্বাক্ষর করে। আসিয়ানের মৌলিক নীতি গুলি হল –
- সকল সদস্য রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখন্ডতা এবং জাতীয় স্বকীয়তার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা।
- কোন প্রকার বাহ্যিক হস্তক্ষেপের ও চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে সদ্য রাষ্ট্রগুলির স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার ।
- কোন সদস্য রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।
- বিবাদ ও মতপার্থক্যের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা।
- যুদ্ধের হুমকি ও শক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং
- সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে কার্যকরী সহযোগিতা গড়ে তোলা। সম্মেলনে ঠিক হয়েছিল যে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র উপরোক্ত নীতিগুলি মান্য করে চলবে।