StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের অবদান।

ভূমিকা 

উনিশ শতকের শেষ দশক এবং বিংশ শতকের প্রথম চার দশক এই অধ শতাব্দীকালে বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের যুগ হিসেবে পরিগণিত হয়। এই যুগে আরো অনেক শক্তিশালী লেখকের আবির্ভাব হয়েছিল। সাধারণ ঐতিহাসিক গ্রন্থে বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

কাব্য সাহিত্য

সাহিত্যিক প্রতিভা বহুমুখী হলেও বাংলা কাব্য সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ অবদান গৃহীত হয়েছে। কবিতার মধ্যে দিয়ে তিনি নিজের অন্তরের সূক্ষ্ম ও গভীর অনুভূতিকে যে রূপ দিয়েছেন এবং নিজের অন্তরের সর্বোচ্চ আধান্তিক চেতনাকে যেভাবে প্রকাশ করেছেন তার প্রতিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়, প্রথম যুগের কবিতা সংকলন ‘মানসী’ (1890) ও ‘সোনার তরী’ (1893) তার এই দুইখানি গ্রন্থে এই কবিতাগুলি যেমন অভিনব তেমনি অপূর্ব রস স্বাদ পূর্ণ মানুষের মনে যে সব সুখ দুখ আশা আকাঙ্ক্ষা, চিন্তা ভাবনা প্রভৃতির স্রোত অনবরত প্রভাবিত হয়। তা ভাষায় প্রকাশ করতে না পারায় মানুষ একটি অব্যক্ত বেদনা অনুভব করে। তার প্রকাশ বেদনা নামক কবিতায় তিনি মানুষের চিন্তা ভাবনা গুলি তুলে ধরেছেন। 

গীতি কবিতা

রবীন্দ্রনাথের গীতি কবিতায় অতি উচ্চ স্তরের দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। মানবিক ভাববেগ বিস্তারের মাধ্যমে তিনি বহিপ্রকৃতিকে নতুন রূপে পরিচিতি দেওয়ার জন্য পুরানো পটে, নতুন নতুন ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন। আবার রবীন্দ্রনাথের কবিতা একটি দার্শনিক আধ্যানিক অনুভবেরও পরিচয় দিয়েছেন।

‘মানসী’ এবং ‘সোনার তরী’ এই দুটি গ্রন্থে কবি কল্পনার রাজ্য ছেড়ে সংসারের দুঃখময় বাস্তব জীবনের রূপ তুলে ধরেছেন তার ফলে কবির বাস্তববাদী মন যে নতুন আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছে তা 1896 সালে প্রকাশিত ‘চিত্রা’ নায়ক গ্রন্থের ‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতাটির মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে। এটি রবীন্দ্রনাথের অবশিষ্ট জীবনে কেবল কবিতায় নয়, সমগ্র সাহিত্যিক রচনার উৎস ও প্রধান প্রেরণা বলে মনে করা যেতে পারে। জগতে যা কিছু সুন্দর, কুৎসিত ও বেদনাদায়ক অনুভূতি আছে তা সবই রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য কবিতা ও সংগীতে ধ্বনিত হয়েছে।

‘পুরাতন ভৃত্য’, ‘দুই বিঘা জমি’, ‘উর্বশী’, ‘পতিতা’, ‘শ্রেষ্ঠ ভিক্ষা’, ‘দেবতার গ্ৰাস’, ‘অভিসার’ ‘বন্দীবীর’ ‘শাহজাহান’ ‘ভারত তীর্থ’ ( হে মোর চিত্ত পুণ্য তীর্থে জাগো রে ধীরে) , ‘অপমান’ ( হে মোর দুর্ভাগা দেশ যাদের করেছ অপমান), এবং ঘরোয়া ব্যাপার অবলম্বনে রচিত ‘যুক্তি’ (ডাক্তারে যা বলে বলুক না কো) ‘ফাঁকি’ (বিনুর বয়স ২৩ তখন), ‘নিষ্কৃতি’ – এরূপ শতাধিক কবিতার মাধ্যমে মানুষের মনে ভক্তি প্রেম, পৌরাণিক ভাবধারা, সমাজ চেতনা, দেশ ভক্তি, ও শিশুর প্রতি উদারতা, প্রভৃতি তুলে ধরেছেন যা বিশ্ব সাহিত্যে অতুলনীয়। 

1913 সালে গীতিকাব্যের জন্য রবীন্দ্রনাথ জগতবিখ্যাত ‘নোবেল পুরস্কার’ লাভ করে বিশ্ব সাহিত্যে বঙ্গভাষা ও সাহিত্যকে মর্যাদার অধিকারী করে তুলেছিলেন। কিন্তু কবিতা ছাড়াও সাহিত্যের অন্যান্য বিভাগে রবীন্দ্রনাথের দান অমূল্য ও অপরিসীম। এছাড়াও গীতি কবিতার সহিত ছোট গল্পেরও কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

সংগীত সাহিত্য 

রবীন্দ্রনাথ সংগীত সাধনেও কিছু অবদান রেখে গেছে। তার দেশাত্মবোধক কয়েকটি সংগীত যথা ‘জাতীয় সংগীত’ ‘জনগণমন অধিনায়ক’ অয়ি ‘ভবনমনমোহিনী’ প্রভৃতি এই শ্রেণীর বহু সংখ্যক সংগীত এবং বর্তমান বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত এই তালিকায় অন্ধ ভক্ত হয়ে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংগৃহীত হয়েছে। এই গ্রন্থে মোট 955 টি পৃষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথের সংগীত গুলি সংগৃহীত হয়েছে। অধিক সংখ্যক সংগীত এবং দুটি দেশের জাতীয় সংগীত এর রচয়িতা হিসেবে রবীন্দ্রনাথ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি কীর্তন গান কে এক অপূর্ব ও অভিনব ঐশ্বর্যে মন্ডিত করেছেন।

ছোটগল্প

রবীন্দ্রনাথ সর্বপ্রথম 1291 সালে দুটি গল্প লেখেন পরবর্তীকালে সাত বছর পর অর্থাৎ 1298 সাল থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত তার শতাধিক গল্প বিবিধ মাসিক পত্রে প্রকাশিত হয়। তার ছোট গল্প একাধিক সংকলন আছে। তার মধ্যে প্রসিদ্ধ ‘গল্প গুচ্ছ’ প্রথমে (1307) দুই খন্ডে এবং পরে (1315) নতুন সংস্করণে ৫ খন্ডে প্রকাশিত হয়। 

রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের মধ্য দিয়ে প্রধান গ্রাম ও শহর বাসের মধ্যবিত্ত বাঙালির দৈনন্দিক জীবনযাত্রা, সংস্কারিক ও সামাজিক অবস্থার যে চিত্র ফুটে উঠেছে সুপরিচিত হলে একটি নতুন সৌন্দর্যের সৃষ্টিরূপে আমাদেরকে মুগ্ধ করে তোলে। ‘নষ্টনীড়’ গল্পটি কোভিদ এক অপূর্ব সৃষ্টি এছাড়াও আরো একটি গল্প ‘মেঘ ও রৌদ্র’ অস্ফুট বাল্য প্রণয়নের অপূর্ব বিকাশে সহায়তা করে। অতি প্রাকৃত পরিবেশ মন্ডিত ‘ ক্ষুধিত পাষাণ’ , ধ্বনি সংসারের মর্মান্তিক গল্প হিসেবে ‘ রাসমনির ছেলে’ , ‘মাতৃকল্পা মাসী’ ও ‘পত্নী বৎসল’ আবার পত্নী প্রেমে বঞ্চিত মৃত্যুপথযাত্রীর কাহিনী ‘শেষের রাত্রি’ প্রভৃতি বহু গল্প বাংলা সাহিত্যের চিরন্তর সম্পদ। বাংলা ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান গুরুত্বপূর্ণ।

উপন্যাস সাহিত্য

বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক উপন্যাস 1338-39 সালে বঙ্গ দর্শনে প্রকাশিত ‘চোখের বালি’ উপন্যাসটি অনেকাংশে উল্লেখযোগ্য। এরপরে ‘নৌকা ভুবি’ (1313) ও ‘গোরা’(1316) এই দুই উপন্যাস এর মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। নৌকা ভুবি উপন্যাসে সামাজিক সংস্কারের সঙ্গে হৃদয় বৃত্তির সংঘর্ষের একটা পরিণাম প্রদর্শিত হয়েছে এবং গোড়া উপন্যাসটিতে ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের সমাজের সঙ্গে ধর্মের এবং ধর্মের সঙ্গে মানব সত্যের বিরোধ ও সমন্বয় এর নির্দেশ উৎঘাটিত হয়েছে। হিন্দু সমাজের বিরুদ্ধে স্বামী বিবেকানন্দ উদাও স্বরে ঘোষণা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ই‌ সর্বপ্রথম উপন্যাসের মাধ্যমে বাঙালির অন্তরে প্রবেশ হয়েছিল।

বলা বাহুল্য হিন্দু ও ব্রাহ্ম সম্প্রদায়ের অনেকেই তার প্রতি ক্ষুব্ধ প্রকাশ করেছেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও সাহিত্যিক হিসেবে রবীন্দ্রনাথের স্বাধীন মতের প্রকাশ ‘ঘরে বাইরে’( 1916) উপন্যাসে পরিস্ফুট করেছেন। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের যে গভীর সহানুভূতি ছিল তার প্রকৃষ্ট পরিচয় স্বদেশী গানের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরেছেন। তিনি তার স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করতে কুণ্ঠিত হননি। চার অধ্যায় উপন্যাসের মাধ্যমে (1934) তিনি হিংসাত্মক বিপ্লবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। 

নাটক সাহিত্য 

রবীন্দ্রনাথের কৌতুক নাটক গুলির মধ্যে ‘গোড়ার গলদ ’(1892) , ‘বৈকুন্ঠের খাতা’ (1897) , ‘চিরকুমার সভা’(1901), বিশেষ উল্লেখযোগ্য। 1908 সালে শান্তিনিকেতন বিদ্যালয় এর ছাত্রদের অভিনয়ের জন্য শারদ উৎসব ‘শারদোৎসব’ নাটক রচনা করেন। এই উদ্দেশ্যে বহু সংখ্যক ছোট নাটক রচনা করেছেন। পরবর্তী যুগে এই শ্রেণীর নাটক নাটিকার মধ্যে নিম্নলিখিত গ্রন্থ গুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য – ফাল্গুনী ( 1916), রাজা (1910), অচলায়তন ( 1911), ডাকঘর ( 1912), যুক্তধারা ( 1922), নটীর পূজা (1926), চণ্ডালিকা (1933), তাসের দেশ (1939), ও বাঁশরী (1939) প্রভৃতি।

প্রবন্ধ সাহিত্য

বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গুরুত্বপূর্ণ অবদান  রেখেগেছেন। রবীন্দ্রনাথের বহু প্রবন্ধের বিষয়বস্তু ছিল সাহিত্য তত্ত্ব ও গ্রন্থ সমালোচনা, প্রাচীন ও আঞ্চলিক সাহিত্য, লোক সাহিত্য, বর্তমান যুগের শিক্ষা, সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা, ইতিহাস, ধর্মবোধ, বস্তু বিজ্ঞান, শব্দতত্ত্ব প্রভৃতি। তার ভ্রমণ কাহিনী অবলম্বনে ‘য়ুরোপযাত্রীর যাত্রীর ডায়েরী’ ,‘ জাপান যাত্রী’, ‘পশ্চিম যাত্রীর ডায়েরি’, ‘রাশিয়ার চিঠি’, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি 1912, কেবল তার জীবনের কাহিনী তুলে ধরে না এটি একটি সাহিত্যের ভূমিকা হিসেবে পালন করে থাকে। সুতরাং বলা যায় যে বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান অপরিসীম।


বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের অবদান pdf >>  

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *