চরিত গ্রন্থগুলির বৈশিষ্ট্য।
সাধারণভাবে গুপ্তোতর যুগ থেকে দ্বাদশ শতকের শেষ বা ত্রয়োদশ শতকের গোড়া পর্যন্ত সময়কাল ভারতের ইতিহাসে আদি মধ্যযুগ হিসেবে চিহ্নিত। আদি মধ্যযুগের ইতিহাসের প্রধান উপাদান হল সাহিত্য। ইতিহাসের উপাদানের সমৃদ্ধ অনেকগুলি সাহিত্য এ যুগে রচিত হয়। এই সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল চরিত সাহিত্য। চরিত গ্রন্থগুলির বৈশিষ্ট্য হল আদি মধ্য ভারতের অমাত্য, রাজনীতি সংস্কৃতি প্রকৃতি বিষয়ে উৎসাহিত হয়ে ওঠে। তবে চরিত সাহিত্য গুলি থেকে তৎকালীন যুগের রাজনীতি বেশি ফুটে ওঠে।
আদি মধ্য পর্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত সাহিত্য হল হর্ষবর্ধনের সভাপতি বানভট্টের রচিত হর্ষচরিত। এই গ্রন্থে হর্ষবর্ধনের রাজনৈতিক কৃতিত্বের বিশেষত রাজ্য জয়ের বিষয় ফুটে উঠেছে। এখান থেকে জানা যায় হর্ষবর্ধন পরে ভারতের অধিপতি ছিলেন। সেখান থেকে আরো জানা যায় যে, হর্ষ হিমালয় সংলগ্ন একটি রাজ্য জয় করেছিলেন।
হর্ষচরিত গ্রন্থ থেকে হর্ষবর্ধনের “তুষাশৈল্য” অভিযানের কথা জানা যায়। বিক্রমাগ দেবচরিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত সাহিত্য। এখান থেকে চালুক্যরাজ ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের রাজ্য জয়ের বিভিন্ন বিষয় জানা যায়। এই সঙ্গে তার পূর্বসূরী প্রথম ও দ্বিতীয় রাজত্বকালের বেশ কিছু তথ্য জানা যায়।
আদি মধ্য পর্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত সাহিত্য হল সন্ধ্যা কর নন্দীর রামচরিত। এই গ্রন্থ থেকে রামপালের রাজনৈতিক জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় জানা যায়। রামচরিত থেকে সমকালের বা তৎকালীন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা কৈবত্য বিদ্রোহ বিবরণ পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে বার্গ প্রতিরাজ্য প্রাকৃত ও ভাষায় রচনা করেন গৌড়বহ কাব্য। এই গ্রন্থে কনৌজ রাজ্য যশো বর্মনের বঙ্গ বিজয় সম্পর্কে এক কল্পনা মিশ্রিত আখ্যান বর্ণিত হয়েছে। আচার্য জয়সিংহের কুমালপল রচিত গ্রন্থ থেকে কুমার পাল এর সিংহাসন আহরণ, রাজ্য বিজয়ী প্রভৃতি একাধিক রাজনৈতিক ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়।
স্মরণীয় যে এই জীবন চরিত গ্রন্থগুলির ইতিহাসগত মূল্য খুবই সীমত। এখানে বর্ণিত রাজাদেরকে অকারনে গৌরব দান করা হয়েছে। তাদের ত্রুটিবিচ্যুতিকে কখনোই তুলে ধরা হয়নি। যেমন বানভট্ট তার হর্ষচরিত কাব্যে হর্ষবর্ধনকে অকারণে হর্ষচরিত অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। এই গ্রন্থ গুলি রচনা শৈলী ও যথেষ্ট উন্নত ও ভারসাম্যপূর্ণ নয়। ভাষা অলংকরণের ক্ষেত্রেও নির্ভুল তার ছাপ স্পষ্ট।
মূল্যায়ন
সীমাবদ্ধতা সত্বেও চরিত সাহিত্য গুলি আদি মধ্য পর্বের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক তথ্য সরবরাহ করে। যদি শর্তবতারতার সঙ্গে আমরা অগ্রসর হই তাহলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস আমরা চরিত সাহিত্য গুলি থেকে জানতে পারি।