StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

মধ্য প্রস্তর যুগের মূল বৈশিষ্ট্য গুলি উল্লেখ করো

মধ্য প্রস্তর যুগের মূল বৈশিষ্ট্য গুলি উল্লেখ করো। মধ্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে টীকা লেখ।

ভূমিকাঃ

প্রত্নতাত্ত্বিক যুগের দ্বিতীয় পর্যায় হল মধ্যপ্রস্তর যুগ, যা ইংরাজি ভাষায় ‘মেসোলিথিক’ বলেই পরিচিত। এই যুগকে ‘মাইক্রোলিথিক’ বা ক্ষুদ্রপ্রস্তর যুগ বলেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। কারণ এই পর্যায়ের পাথরের হাতিয়ারগুলি আকারে ক্ষুদ্র। উল্লেখ্য, বেশিরভাগ হাতিয়ারের দৈর্ঘ্য ১ থেকে ৩ সেন্টিমিটার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবশ্য হাতিয়ারগুলি ৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা।১২ সাধারণভাবে এই যুগকে খাদ্য সংগ্রহের পর্যায়ে ধরা হলেও ভারতের সর্বত্র এই ধারা বজায় থাকেনি। এই ক্ষুদ্রপ্রস্তর যুগেই বেশ কিছু জীবজন্তুকে পোষ মানানো, এমনকি শেষ দিকে প্রাথমিক পর্যায়ে হলেও কৃষির সূচনা ঘটেছিল।

মধ্য প্রস্তর যুগের মূল বৈশিষ্ট্য গুলি

রাজস্থানের ভিলওয়াড়া জেলার বাগোর গ্রামে ক্ষুদ্রপ্রস্তর যুগের তারিখ অনুমিত হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ থেকে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দের মধ্যে অর্থাৎ আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ। এছাড়া, উত্তরপ্রদেশের মধ্যাঞ্চলের সমভূমিতে অবস্থিত সরাই নাহার রাই-এর বয়স রেডিও কার্বন পদ্ধতিতে স্থির হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ অব্দ।

ভারতবর্ষে মধ্যপ্রস্তর যুগের সূচনা ঘটেছিল ভূতাত্ত্বিক ‘হলোসিন’ বা ‘আধুনিক’ যুগের গোড়াতেই। এই ভূতাত্ত্বিক হলোসিন যুগ শুরু হয়েছিল আজ থেকে আনুমানিক ১০,০০০ বছর আগে। ক্ষুদ্রপ্রস্তর যুগের স্থান যেহেতু উচ্চ পুরাপ্রস্তর যুগ ও নব্যপ্রস্তর যুগ বা খাদ্য উৎপাদনকারী সংস্কৃতির মধ্যবর্তী স্থানে সেহেতু স্তরগুলির মাঝে বিভাজন রেখাগুলি খুব স্পষ্ট নয়—প্রায়শই একটার সঙ্গে অপরটা মিশে গেছে।

মধ্য প্রস্তর যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল হাতিয়ারগুলি। মধ্য প্রস্তর যুগের হাতিয়ারগুলি হল—বাটালি, চাঁচনি, ব্লেড, ভোমর বা তুরপুণ, ত্রিকোণী প্রস্তরায়ুধ। মধ্য প্রস্তর যুগের হাতিয়ার গুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বেশিরভাগই ছোট ছোট চিলকা বা ‘ব্ৰেডলেট’ থেকে তৈরি করা হয়েছে। হাড় কিংবা চকমকি পাথর দিয়ে তৈরি করা তীর পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে শিকারিদের হাতিয়ার হিসাবে তীর-ধনুকের আবির্ভাব তখন ঘটে গিয়েছিল। পাথরের জাঁতা, হামানদিস্তা ও ক্ষুদ্র ছেদক পাওয়া গেছে কয়েকটি প্রত্নকেন্দ্রে।

মধ্য প্রস্তর যুগের হাতিয়ার

মধ্যপ্রস্তর যুগের শেষভাগে বেশ কিছু কুটিরের নিদর্শন মিলেছে। এর মধ্যে কয়েকটির আকৃতি গোল এবং কয়েকটি ডিম্বাকৃতি। কিছু কুটিরের চারপাশ আবার বড় বড় প্রস্তরখণ্ড দিয়ে ঘেরা এবং মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রচুর পরিমাণ হাতিয়ার ও পাথরের খণ্ড। আগুনের চিহ্ন পাওয়া গেছে বাঘোর সহ বিভিন্ন প্রত্নকেন্দ্রে।

বসবাসকারী মানুষ জীবনধারণের জন্য যেসব জন্তু-জানোয়ার যথা—গোরু, ছাগল, ভেড়া, হরিণ, শুয়োরের মাংস খেত তার প্রমাণও পাওয়া যায়। এইসব জন্তু- জানোয়ারের মধ্যে হয়তো পোষ মানানো গোরু, ভেড়া, ছাগল ছিল। পাথরের তৈরি ধারালো ব্লেড ও ব্লেড জাতীয় হাতিয়ারের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে এগুলির সাহায্যে পশু কাটা হত। আবার উত্তরপ্রদেশের সরাই নাহার রাই ও মহাদহায় মাংস ঝলসানোর কাজে আগুনের ব্যবহারের প্রমাণ মেলে। অবশ্য মহাদহায় জন্তু-জানোয়ারের মাংস ছাড়ানো এবং কাটাও হত।

উদ্ভিজ জিনিস যে খাওয়া হত তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেষাই ও বাটনার কাজে ব্যবহৃত হত এমন পাথর। শিল জাতীয় এবং বাটনা বাটার উপযুক্ত অর্থাৎ পেষাইয়ের কাজে ব্যবহৃত দু-ধরনের পাথরই পাওয়া গেছে বাগোর- এর প্রথম পর্যায়ে। উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড় জেলার দমদমা নামক একটি প্রত্নকেন্দ্রে পাথরের তৈরি বিভিন্ন হাতিয়ারের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন পাওয়া গেছে এবং তা হল পোড়া শস্যদানা। মধ্যপ্রদেশের বাঘোরে এমন কিছু পাথরের খণ্ড পাওয়া গেছে যেগুলি পেষাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হত বলে অনুমান করা হয়। এছাড়া, উত্তরপ্রদেশের সরাই নাহার রাই-এ প্রাপ্ত পাথরের জাঁতা ও হামানদিস্তা থেকে সহজেই অনুমিত হয় যে বীজ সংগ্রহ ও তা পেষাই করা হত। পাথরের তৈরি আরো নানা ধরনের হাতিয়ার ব্যবহৃত হত।

মধ্যপ্রস্তর যুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন (খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ অব্দ) প্রত্নকেন্দ্র হল মধ্যপ্রদেশের নর্মদা উপত্যকায় অবস্থিত আদমগড়। এখানে প্রায় ২৫০০০ মাইক্রোলিথ পাওয়া গেছে। এছাড়া কুকুর, গোরু-বাছুর, মোষ, ভেড়া, শুয়োর, ছাগল প্রভৃতি গৃহপালিত পশুর পরিচয় মিলেছে আদমগড়ে। গৃহপালিত পশু ছাড়াও কিছু বুনো জন্তু যেমন হরিণ, খরগোস, গিরগিটি প্রভৃতির হাড় পাওয়া গেছে।

মধ্য প্রস্তর যুগের আর এক বৈশিষ্ট্য ছিল কবরের সন্ধান। উত্তরপ্রদেশের মহাদহা, প্রতাপগড় জেলার দমদমা, সরাই নাহার রাই প্রভৃতি প্রত্নকেন্দ্রে কঙ্কাল সহ কবরের সন্ধান মিলেছে। প্রসঙ্গত বলা যায়, কবর বা সমাধিস্থ করার নিয়মকানুনের মধ্যে ধর্ম বা কুসংস্কারের অস্তিত্বের স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে।

মহানহায় ১৫টি কবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। কবরগুলি কিছুটা ডিম্বাকৃতি। পণ্ডিতেরা অনুমান করেছেন যে মৃত্যুর পর শরীর কবরে শোয়ানোর আগে ধূসর বা কালো ঝুরো মাটি ছড়িয়ে দেওয়া হত। মৃতের সঙ্গে হাড়ের গয়না, পোড়া ও আধপোড়া জন্তুর হাড়, পাথরের হাতিয়ার, হাড় দিয়ে তৈরি তীর প্রভৃতি পাওয়া গেছে।

মধ্য প্রস্তর যুগের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল চিত্রকলা। মধ্যপ্রদেশে ভূপালের নিকটস্থ ভীমবেকার গুহায় আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ অব্দের বা তারও আগেকার কিছু চিত্র পাওয়া গেছে। একটি চিত্রে দেখা যায় শিকারিরা তীর ধনুক নিয়ে পশু শিকার করছে। আর একটি ছবিতে দেখা যায় বোঝা মাথায় একজন নারীকে। ভীমবেঠকার গুহাতেই রেখার টানে আঁকা একটি ময়ূরীর চিত্র পাওয়া গেছে, যা শিল্প দক্ষতার এক অভূতপূর্ব নিদর্শন। তবে তৎকালীন সমাজের শ্রেণী বিভাজন অথবা কৃষিকাজ অথবা পশুপালন সংক্রান্ত কোনো চিত্র পাওয়া যায়নি। ভীমবেটকার নিকটস্থ লাগাজোয়ার নামে একটি জায়গায় সবুজ রঙে আঁকা একটি নাচের দৃশ্য আমাদের নজর কাড়ে। মানুষগুলির আকার কাঠির মতো। যে ক্ষুদ্রপ্রস্তর যুগের চিত্রকলার ধারা মুখ্যত জ্যামিতিক ধারায় করা এবং প্রারম্ভিক পর্যায়ে হলুদ, সবুজ, লাল প্রভৃতি রং ব্যবহৃত হয়েছে।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *