StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ক্রিমিয়ার যুদ্ধ কি অনিবার্য ছিল

ক্রিমিয়ার যুদ্ধ কী অনিবার্য ছিল 

ভূমিকাঃ

লন্ডন কনভেনশন স্বাক্ষরিত হওয়ার পর প্রায় এক দশক কাল নিকটপ্রাচ্য কলহমুক্ত ছিল। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের সূচনায় পুনরায় এই অঞ্চল অশান্ত হয়ে পড়েছিল। ইউরোপের শক্তিগুলি পরস্পরের বিরুদ্ধে এক ভয়ংকর সংগ্রামে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধ ইতিহাসে ক্রিমিয়া যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বলা যায়।

ক্রিমিয়ার যুদ্ধ কী অনিবার্য ছিল 

ক্রিমিয়ার যুদ্ধ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরম্ভ হয়েছিল। তাই ঐতিহাসিকদের মধ্যে এই প্রশ্ন উঠেছে যে, ক্রিমিয়ার যুদ্ধ কি অনিবার্য ছিল? । একদল যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন এই যুদ্ধের প্রয়োজন ছিল না। খুব সহজেই যুদ্ধকে এড়ানো যেত। অন্যদিকে, আর এক দল পণ্ডিতের বক্তব্য এই যুদ্ধকে এড়ানো সম্ভব ছিল না, ক্রিমিয়ার যুদ্ধ ছিল অনিবার্য। ঐতিহাসিক ম্যারিয়ট-এর মতে বড় শক্তিগুলির বোঝাপড়ার অভাবের ফলে এই যুদ্ধ হয়েছিল এবং তাকে পরিহার করা যেত। ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। 

রাশিয়ার জার নিকোলাস তুরস্ককে ভাগ করার প্রস্তাব ইংল্যান্ডকে দিয়েছিল। কিন্তু ইংল্যান্ড তার এই প্রস্তাবকে নাকচ না করে নীরব ছিল। তাই রুশ জারের মনে হয় তার নিকট প্রাচ্য নীতিকে ইংল্যান্ড মেনে নিয়েছে। ইংল্যান্ডের রাজনীতিবিদদের মধ্যে এই নিয়ে সংশয় ছিল। প্রধানমন্ত্রী এবারডন ও বিদেশমন্ত্রী ক্লারেনডন, গোপন কূটনীতির দ্বারা তুরস্কের অখণ্ডতাকে বজায় রাখার চেষ্টা করে। অন্যদিকে, পামারস্টোন উগ্র পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে রাশিয়াকে পরাজিত করে তুরস্কের অখণ্ডতাকে বজায় রাখতে চেয়েছিলেন।

ক্রিমিয়ার যুদ্ধ

ব্রিটিশনীতির এই দোলায়মান অবস্থা নিকটপ্রাচ্যকে অশান্ত করে দেয়। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্টাফোর্ড অহেতুক তুরস্কের সুলতানকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেন। পবিত্রভূমি নিয়ে বিবাদে ইংল্যান্ডের কোন স্বার্থ ছিল না। পত্রপত্রিকাগুলি অহেতুকভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য ইংল্যান্ডকে প্ররোচিত করেছিল। কূটনীতি ও সহনশীলতার দ্বারা এই যুদ্ধকে এড়ানো যেত।

কার্লাইল তার ডায়েরীতে ক্ষোভের সঙ্গে লিখেছেন— “আলস্যপরায়ণ সম্পাদকের দল ইংল্যান্ডে এই যুদ্ধ নিয়ে এসেছে।” লর্ড সলসবেরী মন্তব্য করেছিলেন— এই যুদ্ধে ইংল্যান্ড হেরে যাওয়া ঘোড়ার উপর বাজি ধরেছিল।

অন্যদিকে, ঐতিহাসিক টেলার মন্তব্য করেছেন, ক্রিমিয়ার যুদ্ধ ছিল অনিবার্য। তার মতে রুশ জার নিকোলাস, ফরাসী সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ান অথবা ইংল্যান্ড কেউ নিজ নিজ স্বার্থে যুদ্ধের পথ থেকে সরে আসতে পারতেন না। জার নিকোলাস চেয়েছিলেন তুরস্কের দৃশ্যতা, তৃতীয় নেপোলিয়ান রাশিয়াকে পরাজিত করে নিজের দেশে জনপ্রিয় হতে চেয়েছিলেন, ইংল্যান্ড তুরস্কের অখন্ডতাকে রাখতে চেয়েছিল নিজ সাম্রাজ্যের স্বার্থে। এই পরস্পরবিরোধী স্বার্থের সংঘাত ক্রিমিয়ার যুদ্ধকে অপরিহার্য করেছিল।

মূল্যায়নঃ

ক্রিমিয়ার যুদ্ধকে সমালোচকরা যতই অনিবার্য ও অপ্রয়োজনীয় বলুক না কেন এই যুদ্ধের গুরুত্ব ইউরোপের ইতিহাসে অনেকখানি। গ্রান্ট ও টেম্পারলির মতে, উনিশ শতকের ইউরোপের ইতিহাসে ক্রিমিয়া যুদ্ধ এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। টেলারের মতে, পরস্পরের সন্দেহ থেকে এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *